করোনায় ৩৭ কোটি স্কুল শিশুর একবেলার খাবার বন্ধ

করোনার কারণে স্কুলে শিশুদের একবেলা খাবার দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে
করোনার কারণে স্কুলে শিশুদের একবেলা খাবার দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে  © ফাইল ফটো

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় বিশ্বের ১৯৯টি দেশের প্রায় ৩৭ কোটি শিশুর প্রতিদিন একবেলা করে বিনামূল্যে খাবার দেওয়ার কর্মসূচী বন্ধ রয়েছে। ফলে গত এক দশকে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের একবেলা করে বিনামূল্যে খাবার দেওয়ার বৈশ্বিক প্রচেষ্টা বিফলে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

এমনকি অনেকেই দিনের একমাত্র পুষ্টিকর এই খাবার থেকে বঞ্চিত রয়েছে। ‘সারা বিশ্বে স্কুল ফিডিং কার্যক্রমের অবস্থা’ শিরোনামে জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারি আঘাত হানার সময় প্রতি দুজন স্কুল শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন অথবা সারা বিশ্বে ৩৮ কোটি ৮০ লাখ শিশু প্রতিদিন স্কুলে একবেলা পুষ্টিকর খাবার খেত, যা ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। গত বছরের এপ্রিল থেকে ১৯৯টি দেশ তাদের স্কুল বন্ধ ঘোষণা করে দেয়। এর ফলে ৩৭ কোটি শিশুর জন্য এ কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যায়, যা তাদের অনেকেরই জন্য দিনের একমাত্র পুষ্টিকর খাবার ছিল।

স্কুল ফিডিং কার্যক্রম আর্থিকভাবে দুর্বল শিশুদের সহযোগিতা প্রদান ও ভবিষ্যৎ নির্মাণে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে লকডাউনের কারণে বিভিন্ন দেশের সরকার তা উপলব্ধি করতে পেরেছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে স্কুল থেকে খাদ্য পাওয়া শিশুদের সংখ্যা বৈশ্বিক পর্যায়ে ৯ শতাংশ এবং স্বল্প আয়ের দেশসমূহে ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি। বিভিন্ন দেশের সরকার এ প্রোগ্রামের পরিসর আরও বৃদ্ধি করে। স্কুল ফিডিং কার্যক্রম সারা বিশ্বের সবথেকে বড় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা যায়, স্কুল থেকে দেয়া খাদ্য দরিদ্র পরিবার থেকে আসা শিশুদের জীবনে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। এ কার্যক্রম ক্ষুধামুক্ত থাকতে যেমন সহায়তা করে, তেমনি শিশুর স্বাস্থ্য ও মেধার বিকাশেও ভূমিকা রাখে। মেয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে একথা আরও সত্য— যেখানে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম আছে, সেখানে মেয়েদের স্কুল ছেড়ে চলে যাওয়া, বাল্য বিবাহ এবং কৈশোরকালীন গর্ভধারণের হার অন্যান্য এলাকার তুলনায় কম।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারি-উত্তর পৃথিবীতে স্কুল খাদ্য প্রোগ্রামে বিনিয়োগ করা আরও বেশী গুরুত্বের দাবী রাখে, যেহেতু এই কর্মসূচি একটি দেশের জনগণের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার পাশাপাশি একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নেও সহায়তা করে। কার্যকর স্কুল খাদ্য কর্মসূচির ক্ষেত্রে প্রতি এক ডলার বিনিয়োগ করলে নয় ডলার সমপরিমাণ সুফল ফিরে আসে। এতে চাকরির সুযোগ তৈরি হয়।

ডব্লিউএফপি’র হিসাব অনুযায়ী, স্কুল খাদ্যের সুবিধা পাওয়া প্রতি এক লাখ শিশুর জন্য অন্তত এক হাজার ৬৬৮ নতুন চাকরি তৈরি হয়।

এ বিষয়ে ডব্লিউএফপি’র নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলে বলেন, স্কুল ফিডিং কার্যক্রম শিশুদের এবং দেশে দেশে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর উন্নতির চিত্র পাল্টে দিয়েছে। প্রতিদিন একবেলা খাবারের কারণেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুরা স্কুলে যায়। এ কারণেই লকডাউন শেষে শিশুরা আবার স্কুলে ফিরে আসবে। আমাদের এ কার্যক্রম আগের থেকে আরও শক্তিশালী করে আবার চালু করা প্রয়োজন, যাতে কোভিড কোটি কোটি শিশুর ভবিষ্যৎ ধ্বংস করতে না পারে।

বিসলে বলেন, সহযোগী অংশীদারদের সাথে একযোগে কাজ করার ব্যাপারে ডব্লিউএফপি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, যাতে বিশ্বের কোন শিশুই যেন ক্ষুধা নিয়ে স্কুলে না যায়, অথবা যেন তারা স্কুলে যাওয়া বন্ধ না করে। সাম্প্রতিক মাসগুলোর ভোগান্তির পর আমরা আরও সুন্দর এক পৃথিবী গড়ার এই সুযোগ অবশ্যই লুফে নেব।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence