বন্যা
দাফনের মতো লোকও নেই পাকিস্তানের একটি গ্রামে
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৫, ০৮:২৬ PM , আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২৫, ১১:৩১ AM
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বেশন্ত্রি গ্রামে আকস্মিক বন্যার খবর পেয়ে মসজিদের স্থানীয় ইমাম মওলানা আব্দুল সামাদ অন্য গ্রামবাসীর মতো তার পরিবারকেও দ্রুত বাড়ি খালি করার নির্দেশ দেন। তিনি তখন নফল নামাজ পড়ছিলেন। কিছুক্ষণ পর যখন তিনি বাড়ি ফিরে আসেন, তখন তিনি দেখতে পান আকস্মিক এই বন্যার পানির তোড়ে তার বাড়িসহ অনেকের বাড়িঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
বেশন্ত্রি গ্রামটি বুনের জেলার পীর বাবা সাহেব উপজেলায় পড়েছে। পাকিস্তানের সরকারি হিসাবে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে গত ৪৮ ঘণ্টায় বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে।
সেখানকার প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৩০৭ জন নিহত এবং ২৩ জন আহত হয়েছেন।
পিডিএমএর সর্বশেষ প্রতিবেদনের অনুযায়ী নিহতদের মধ্যে ২৭৯ জন পুরুষ, ১৫ জন নারী এবং ১৩ জন শিশু রয়েছে। আহতদের মধ্যে ১৭ জন পুরুষ, চার জন নারী এবং দুই জন শিশু রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারী বৃষ্টিপাত এবং আকস্মিক বন্যার কারণে এখন পর্যন্ত মোট ৭৪টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৬৩টি আংশিক এবং ১১টি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। এমন দুর্ঘটনা প্রদেশের বিভিন্ন জেলা যেমন সোয়াত, বুনের, বাজাউর, তোরঘর, মানসেহরা, শাঙলা এবং বটগ্রাম।
উদ্ধারকারী বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বুনেরের বেশন্ত্রি গ্রামের মোট জনসংখ্যা প্রায় এক হাজার।
মুহাম্মদ ইসলাম জানান, তিনি দুপুর আড়াইটায় সেখানে পৌঁছান। পুরো গ্রাম জনশূন্য হয়ে পড়েছিলো তখন, যেন এক মৃত্যুপুরি। সেই দৃশ্য ছিল ভয়াবহ ও মর্মস্পর্শী। সেখানকার সব ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করা মৃতদেহ রাখার জন্য উপযুক্ত কোনো জায়গা ছিল না।
দুর্গত মানুষদের সাহায্যে শত শত মানুষ এগিয়ে এসেছিল এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত সবাই মৃতদেহ উদ্ধার ও কবর খোঁড়ার কাজে ব্যস্ত ছিলেন।
মুহাম্মদ ইসলাম আরও জানান, তার এক আত্মীয়ের পরিবারের মধ্যে কেবল দুই শিশু বেঁচে গিয়েছিলে, কারণ তারা বন্যার সময় গাছে চড়েছিল। ‘তারা আমাদের বলেছে যে ধ্বংসস্তূপের নিচে ছয়টি মৃতদেহ রয়েছে। আমরা সেই মৃতদেহগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু খুঁজে পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘আমার আরেক বন্ধু, সাহেবজাদা আশফাক আহমেদ, যিনি নিজে ইসলামাবাদে থাকেন। তার পরিবারের ১৩ জন সদস্য রয়েছেন, যাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র চারজনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে পরিবারের শিশু এবং নারী সদস্যরা এখনো নিখোঁজ।’
নূর ইসলাম জানান, তিনি ও তার সহযোগীরা ওই পরিবারের সদস্যদের মৃতদেহ উদ্ধার ও তাদের দাফনের ব্যবস্থা করতে সাহায্য করেছেন।
জরুরি উদ্ধার বিভাগ বা রেসকিউ ১১২২ বুনেরের কর্মকর্তা আব্দুল রহমান জানান, বেশন্ত্রি ছাড়াও অন্যান্য কয়েকটি গ্রামও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের উদ্ধারকারী দল ইতোমধ্যেই দুর্গত অঞ্চলে পৌঁছেছে। পাশাপাশি প্রদেশের অন্যান্য এলাকা থেকেও উদ্ধারকারী দল আসছে।
সূত্র: বিবিসি