তপ্ত মরুভূমির মাঝে স্কুল, তবুও শীতল থাকে এসি ছাড়াই

রাজকুমারী রত্মাবতী গার্লস স্কুল
রাজকুমারী রত্মাবতী গার্লস স্কুল  © সিএনএন

চারদিকে শুধুই বালি। তপ্ত গরম গরম হাওয়া ক্রমাগত বয়ে চলেছে। মরুভূমিতে নেই তেমন প্রাণের অস্তিত্ব। এরমধ্যেই চলছে পড়াশোনা। মরুভূমির মাঝে এমন স্কুল ব্যাপারটি ভাবনাতেও যেন আসে না। তবে বাস্তবেই রয়েছে এমন এক স্কুল। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্র ছাড়াই শীতলও থাকে। এর নির্মাণ শৈলি দেখলেও যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য।

রাজস্থানের থর মরুভূমি রয়েছে স্কুলটি। নাম রাজকুমারী রত্মাবতী গার্লস স্কুল বালিপাথরের তৈরি এর অত্যাধুনিক পরিকাঠামো। মরুভূমির মাঝে এমন স্থাপনা দেখে যে কেউ বিস্মিত হতে পারেন। স্থানীয় হলুদ বালিপাথর দিয়ে তৈরি হয়েছে স্কুলটি। এ নিয়ে সিএনএন ডয়েচে ভেলেসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো খবর প্রকাশ করেছে।

২০১৮ সালে স্কুলটি তৈরির কাজ শুরু হয়। এক বছরের মধ্যেই নির্মাণ হয়ে যায়। এটিকে পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা হয়েছে। তবে পুরোপুরি তৈরি হলেও করোনার কারণে পড়াশোনা চালু করতে দেরি হয়। স্কুলটিতে কোনও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র নেই। তারপরও বাইরের এবং ভিতরের তাপমাত্রার ব্যাপক পার্থক্য। স্কুল ক্যাম্পাসের ভেতরের মাঠে শিক্ষার্থীরা নিশ্চিন্তে খেলাধুলা করতে পারে।

স্কুলটি কিন্ডারগার্টেন থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত। এটি তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি অলাভজনক সংস্থা। অনেক খুঁজে থর মরুভূমির জায়গাটিকে চিহ্নিত করেছে তারা। আর্কিটেকচারাল ডিজাইন ইন্ডিয়া এরই মধ্যে এ স্কুলকে 'বিল্ডিং অব দ্য ইয়ার' হিসেবে অভিহিত করেছে। ২০২১ সালের নভেম্বরে চালু হওয়া স্কুলে বর্তমানে ১২০ জন মেয়ে পড়াশোনা করছে।

কিন্তু মরুভূমির মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় গ্রীষ্মকালে এখানে তাপমাত্রা ১২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এ দাবদাহের কথা মাথায় রেখেই এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে গরম কম অনুভূত হয়। আর এ শহরেরই রাজকুমারি রত্মাবতী গার্লস স্কুলের ভবনের নকশা করতে গিয়ে সে ধারণাটি মাথায় রেখেছিলেন নিউইয়র্কের স্থপতি ডায়ানা কেলোগ।

ভারতে নারী শিক্ষার হার সর্বনিম্ন যে অঞ্চলে, সেখানে শিক্ষার মাধ্যমে নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এই স্কুল নির্মাণের প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা সিআইটিটিএ’র উদ্যোগে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। তিন স্তরের প্রকল্পের প্রথম ধাপ হিসেবে স্কুলটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের মধ্যে আরও আছে নারীদের জন্য কোঅপারেটিভ সেন্টার এবং এক্সিবিশন স্পেস তৈরি।

খবরে বলা হয়েছে, ২০১০ সালে এমন স্কুল তৈরির পরিকল্পনা করেন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল দৌবে। সে জন্য দীর্ঘ সময় রাজস্থানে কাটিয়েছেন তিনি। সংস্কৃতি, পরিবেশ বুঝেছেন। রাজনৈতিক নেতা এবং সরকারি স্তরে আলোচনার পর স্কুলের অনুমতি পান।

এ অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। মেয়েদের শিক্ষার হার তলানিতে ঠেকেছে। সে অবস্থা উপলব্ধি করার পর মাইকেল চেয়েছিলেন, এমন স্কুল করতে যা সারা ভারতে নজির তৈরি করবে। স্কুলে সন্তান ভর্তি হলে গর্ব বোধ করবেন অভিভাবকেরা। যে স্কুল এ অঞ্চলের সংস্কৃতিকেও তুলে ধরবে।

স্কুলটি ডিম্বাকার। চারদিকে স্কুলের মাঝখানে ফাঁকা খেলার মাঠ। ছাদে এবং পুরো স্কুল ক্যাম্পাসজুড়েই রয়েছে সোলার প্যানেল। একদিকে সোলার প্যানেল বিদ্যুতের জোগান দেয়, তেমনি মাঠে ছায়া দেয়। বালিপাথর দিয়ে স্কুলটি তৈরি করায় কার্বন কম নির্গত হয়। ফলে স্কুল এবং আশপাশের পরিবেশ অনেক ঠান্ডা। মরুভূমি রাতে ঠান্ডা এবং দিনে গরম হয়।

কিন্তু স্কুলের গঠন এমনভাবে করা যাতে রাতের ঠান্ডা হাওয়া স্কুলের ভিতরে আটকে থাকে। স্কুলের ভিতরের দেওয়াল চুন দিয়ে প্লাস্টার করা। এটিও ইনসুলেটরের কাজ করে। ফলে স্কুলের ভিতরের পরিবেশ তুলনামূলক ঠান্ডা রাখা যায়। বাইরের দেওয়ালে জানালা নেই। সব জানালাই ভিতরের মাঠের দিকে। হাওয়ার সঙ্গে বালি উড়ে স্কুলে ঢোকার উপায় নেই।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence