ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন আইন ও জনসচেতনতা

লেখক- কামরুজ্জামান পলাশ
লেখক- কামরুজ্জামান পলাশ  © টিডিসি ফটো

আজকাল আমরা ইন্টারনেট তথা প্রযুক্তির সাহায্যে ঘরে বসে সহজেই দেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে পন্য ক্রয় করতে সক্ষম হচ্ছি। এতে করে আমাদের সময়, শ্রম ও টাকা তুলনামূলক কম ব্যয় করতে হচ্ছে।

বিশেষ করে সম্প্রতি অনলাইন প্লাটফর্ম গুলোতে নজর কাড়া বিভিন্ন অফার বা সুবিধার কথা উল্লেখ করে বিভিন্ন পন্য বিক্রয় করছে। পরর্তীতে দেখা যাচ্ছে প্রতিশ্রুত পন্য ও সরবরাহকৃত পন্যের মধ্যে কোন মিল নেই বা অন্য কোন নকল পন্য দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ভোক্তা কতৃক ক্রয়কৃত পন্য ভেজাল, নকল,মানহীন বা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য আদায় সহ নানাবিধ সমস্যার প্রতিকার প্রদানের লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয় ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন আইন-২০০৯’ ।
এ আইনের ধারা-৯ এ ভোক্তা বা কনজ্যুমার সম্পর্কে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যাতে বলা হয় ___
ভোক্তা বা কনজ্যুমার হলো এমন এক ব্যাক্তি,
ক) যিনি পুনঃবিক্রয় (RESALE) বা বানিজ্যিক উদ্দ্যেশ্য(COMMERCIAL PURPOSE) ব্যাতিতঃ মূল্য পরিশোধ পূর্বক বা মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতি প্রদানের মাধ্যমে কোন দ্রব্য ক্রয় করেন। আংশিক মূল্য পরিশোধ পূর্বক বা আংশিক মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতি প্রদানের মাধ্যমে কোন দ্রব্য ক্রয় করেন, বা প্রলম্বিত মেয়াদ বা কিস্তি সুবিধার মাধ্যমে মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন

খ) যিনি দফা -ক এর অধীন ক্রেতার সম্মতিতে ক্রয়কৃত পন্য ব্যবহার করেন 
গ) যিনি আত্মকর্মসংস্থান বা নিজ জীবিকা নির্বাহ করার লক্ষ্যে পন্য ক্রয় করে বানিজ্যিকভাবে ব্যবহার করেন,

ঘ) যিনি___ মূল্য পরিশোধ পূর্বক বা মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতি প্রদানের মাধ্যমে কোন সেবা ভাড়া বা অন্যভাবে গ্রহন করেন,বা আংশিক মূল্য পরিশোধ পূর্বক বা আংশিক মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতি প্রদানের মাধ্যমে কোন সেবা ভাড়া বা অন্যভাবে গ্রহন করেন,বা প্রলম্বিত মেয়াদ বা কিস্তি সুবিধার মাধ্যমে মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতি প্রদানের মাধ্যমে কোন সেবা ভাড়া বা অন্যভাবে গ্রহন করেন, বা

আরও পড়ুন: র‍্যাগিং বন্ধে অ্যান্টি র‍্যাগিং আইন প্রণয়ন জরুরি!

ঙ) যিনি সেবা গ্রহীতার সম্মতিতে দফা -ঘ এর অধীন গৃহিত সেবা উপভোগ করেন তাই উপরিউক্ত বিধান অনুযায়ী যারা ভোক্তা হিসেবে বিবেচিত হবেন , তারা পন্য ক্রয় করে প্রতারিত হলে উক্ত আইন তথা ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন আইন-২০০৯’ এর মাধ্যমে প্রতিকার পাবেন।

তবে শর্ত থাকে যে, কারন উৎঘাটন (CAUSE OF ACTION) হবার ৩০(ত্রিশ) দিনের মধ্যে অভিযোগ দায়ের করতে হবে যা উক্ত আইনের ধারা- ৬০ এ বলা হয়েছে ।

তাছাড়া ধারা- ৭৬ এ বলা হয়েছে যে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে, জরিমানা আরোপ করবে এবং আরোপিত জরিমানার ২৫% (পঁচিশ শতাংশ) তাৎক্ষনিক অভিযোগকারীকে প্রদান করতে হবে।
তবে শর্ত থাকে যে, অভিযোগকারী অধিদপ্তরের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী হয়ে থাকলে আদায়কৃত জরিমানার ২৫% (পঁচিশ শতাংশ) পাবেন না।

৪ এপ্রিল ২০২১ দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়। যেখানে জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, এমপি বলেছেনঃ নকল পন্য বিক্রয়ের প্রবনতা একটি সামাজিক ব্যাধি।এই ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন জরুরি ।

তাই আমাদের উচিত ভোক্তা হিসেবে আইনের সাহায্যে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং অন্যকে এই অধিকার সম্পর্কে অবগত করা।যাতে করে অসাধু ব্যবসায়ীগন কোন প্রকার প্রতারনার আশ্রয় নিতে না পারে ।

লেখক- শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি


সর্বশেষ সংবাদ