স্মৃতিতে শহীদ ওয়াসিমের ১৬ জুলাই

ওয়াসিম আকরাম ও আব্দুল্লাহ আল নোমান
ওয়াসিম আকরাম ও আব্দুল্লাহ আল নোমান  © সম্পাদিত

১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ছিল ষোলশহর রেলস্টেশন। সেদিন আমি আমার নেতা-কর্মীদের দুপুর পৌনে ২টার দিকে ষোলশহর আসতে বলি। আমার সাথে থাকা কয়েকজনকে নিয়ে ষোলশহরের উদ্দেশ্যে রওনা হই। যাত্রাপথেই ওয়াসিম আকরাম আমাকে ফোন দিয়ে বলল, ‘ভাই আপনি কই?’ আমি বললাম, এখন মির্জাপুলের কাছাকাছি। ওয়াসিম বলল, ‘ভাই মেসেঞ্জার গ্রুপে আমি দেখলাম আপনি সবাইকে ষোলশহর রেল ষ্টেশনে আসতে বলেছেন। ওখানে নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি ও তার লোকজন অস্ত্রসহ অবস্থান নিয়েছে, ওখানে এখনই যাওয়া যাবে না ভাই।’

ওয়াসিম আরও বলল, ‘আমি কলেজ ছাত্রদলের বড় ভাইদের সাথে শিক্ষা বোর্ডের দিকে আছি। এখানে মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম-আহবায়ক সালাউদ্দিন শাহেদ ভাইও আছেন, আপনি যেখানে অবস্থান নেবেন, মিছিল শুরু করার আগেই আমাকে বললে সেখানে আসব।’ আমি ওয়াসিমকে বললাম, ‘ঠিক আছে তুই ওদের সাথে ওদিকেই থাক।’ আমি যেখানে অবস্থান নেব ছাত্রদল নেতা মিজানের সাথে যোগাযোগ করে জানিয়ে দেব, সেখানেই আসবি।’

এদিকে আমি বিচ্ছিনভাবে ছাত্রদলের ছোট ভাইদের নিয়ে দুপুর আড়াইটার দিকে মুরাদপুর মোড়ে (ব্রীজের উপরে) অবস্থান নিলাম। বিচ্ছিন্নভাবে কারণ ওই সময় মোড়ে মোড়ে পুলিশের তল্লাশি ছিল। মুরাদপুর পৌঁছে সবাইকে একত্রিত হতে বলি। তখন একদিকে ষোলশহরের ২ নম্বর গেট, অন্যদিকে মুরাদপুর ডাচ-বাংলা ব্যাংকের কাছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র অবস্থান নিয়েছে। সাথে থাকা ছোট ভাইদের মনে ভয় কাজ করছিল। আমি ওদের বললাম মনোবল শক্ত করতে, যেকোন পরিস্থিতিতে আমরা মিছিল করবোই। 

সবার উদ্দেশ্যে বললাম, ‘শোন সাহস নিয়ে রাজপথের এই যাত্রাটা কাউকে না কাউকে শুরু করতে হয়। আজকে যদি আমি এখান থেকে তোদের রেখে ফেরত যাই ছাত্রনেতা হিসেবে আমার নিজেকে খুব অপরাধী মনে হবে।’ তখন ওদের কয়েকজন বলল, ‘ভাই এত বড় ঝুঁকি নিয়েন না, আমাদের ওপর আক্রমণ করলে আমরা হয়তো বিভিন্ন দিকে দৌড়ে আশ্রয় নিতে পারব, কিন্তু আপনার পায়ের অপারেশন, আপনি কিভাবে মুভকরে নিরাপদে আশ্রয় নেবেন? আমি বললাম, ‘আমার যা হওয়ার হবে, এটা নিয়ে তোরা চিন্তা করিস না।’

আমি মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এর ঠিক ১০ মিনিট পর মিজান বলল, ভাই ওয়াসিম ফোন করে বলল সে নাকি আসতেছে, একটু অপেক্ষা করেন। পূর্বের কথামতো ওয়াসিম আমাদের সাথে যোগ দিল। তবে ওয়াসিম আবার বলল, ‘ভাই দুইটা ছোট ভাই আসছে ওদের নিয়ে আসি, আপনি মিছিল শুরু করার আগেই চলে আসব।’ ওয়াসিমের কথা ভেবে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। দেরি হওয়ায় আবার মিছিল শুরুর সিদ্ধান্ত নিলাম। ছোট ভাই কয়েকজন বলে উঠল, ‘প্লিজ ভাই। তিন দিকেই ছাত্রলীগ-যুবলীগ সশস্ত্র অবস্থান নিয়েছে, এখন মিছিল শুরু করিয়েন না, পরিস্থিতি আরেকটু পর্যবেক্ষণ করুন।’

সাথে থাকা চবি ছাত্রদলের মিলন ও ফরহাদ বলা শুরু করল তোমরা ভাইকে বাঁধা দিওনা, ভাই যে সিদ্ধান্ত নেন আমরা অনুসরণ করব। সবার আস্থা আর ভরসা দেখে আপ্লুত হয়ে উঠি। উদ্যোম নিয়ে মুরাদপুর মোড় ব্রীজের উপরেই স্লোগান দেওয়া শুরু করি। উল্লেখ্য ছাত্রলীগ-যুবলীগ সন্ত্রাসী ও পুলিশের ভয়ে কেউই রাস্তায় আসতে সাহস পাচ্ছিল না। তবে আমি বুঝেছিলাম, সবাই আশেপাশে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান নিয়েছে। আমরা ভয় ভেঙে দিলেই সবাই বাধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে উপস্থিত হবে।

যা ভাবা তাই কাজ, আমার সাথে থাকা নেতাকর্মীদের নিয়ে স্লোগান দেওয়া আরম্ভ করলাম। মুহুর্তেই ছাত্ররা আমাদের পাশে জড়ো হতে শুরু করলো। ছাত্রলীগ দুই দিক দিয়ে আমাদের ঘেরাও করে হামলা শুরু করে। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে আমরা দুই ভাগ হয়ে দুই দিকে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হই। একটা গ্রুপ চট্টগ্রাম নগরীর শিক্ষা বোর্ডের দিকে আরেকটা গ্রুপ মুরাদপুর গ্রিলের রেলিং ভেঙে মুরাদপুর ডাচ বাংলা ব্যাংকের নিচ থেকে আক্রমণ করা ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করার জন্য মুভ করল। 

আমি ছাত্রদলের ছোট ভাইদের সাথে নিয়ে সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষা বোর্ডের দিক থেকে আসা ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে সামনে আগ্রসর হলাম। একটু পর ওয়াসিমের সাথে থাকা ছাত্ররা আমাদের সাথে যোগ দিল। এসময় ছাত্রলীগকে ধাওয়া দিয়ে ২ নম্বর রেল গেটের দিকে নিয়ে গিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দিই।

এর মধ্যেই খবর এলো মির্জাপুলে ওদিকে থাকা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের আরেকটা গ্রুপ মুরাদপুরের দিকে অগ্রসর হয়ে ছাত্রদের উপর হামলা শুরু করছে। তখন ছাত্রদের একটা বিশাল অংশ শিক্ষা বোর্ডের সামনে অবস্থানে নেয়। এদিকে আমি কিছু ছোট ভাইদের সঙ্গে নিয়ে মুরাদপুর মোড় হয়ে মির্জাপুলের দিকে থাকা ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুললাম। এ সময় ছাত্ররাও আমাদের সাথে যোগ দেয়। প্রতিরোধের মুখে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।

একটু পর চট্টগ্রাম উত্তর জেলার ছাত্রদল নেতা সাকিব এসে বলল, ভাই ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রনির নেতৃত্বে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ২ নম্বর গেট থেকে গুলি করতে করতে শিক্ষা বোর্ডের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আমি তাকে বললাম শিক্ষা বোর্ডের সামনে থাকা ছাত্রদের বিশাল জমায়েত আছে ওরাই প্রতিরোধ করবে। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম মুরাদপুর মসজিদ এর সামনে মেইন রোডেই থাকবো। কারণ সবাই এক স্পটে চলে গেলে ছাত্রলীগ আমাদের আবারো ঘিরে ফেলবে।

সম্ভবত সাড়ে ৩টার দিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ভাই আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে পরিস্থিতি জানতে চাইলেন। তাকে বললাম, মুরাদপুরে আমাদের উপরে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা হামলা করছে, ছাত্রদের নিয়ে প্রতিরোধ করছি। রাকিব ভাই বললেন, ‘নোমান সবাইকে নিয়ে সর্বোচ্চ প্রতিরোধ গড়ে তুলে রাজপথে থাকতে হবে, কোনভাবেই মাঠ ছাড়া যাবেনা, এটাই দেশনায়ক তারেক রহমানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আমি তোমাকে জানিয়ে দিলাম, তুমি ছাত্রদলের সবাইকে বলে দাও। আমি পরক্ষণেই আমার সাথে থাকা সবাইকে বার্তা পৌঁছে দিলাম।’

কিছুক্ষণ পরেই আমার মোবাইলে কয়েকটা ফোন আসে। জিজ্ঞেস করতে থাকে, ওয়াসিমের খবর কি, আপনি কিছু জানেন কিনা। বললাম, আমি এক দিকে ওয়াসিমরা অন্যদিকে অবস্থান করছে। ফোন করে একজন বললো, আপনি ওয়াসিমের খবর নেন। এদিকে মির্জাপুল ও মসজিদ গলির দিক থেকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আবার হামলা শুরু করলে প্রায় ৩০-৩৫ মিনিট ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। 

শিক্ষার্থীদের শক্ত অবস্থানে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা আবার পালিয়ে যায়। তখন মুরাদপুর মোড় আমাদের একক নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। খবর পেলাম চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সামনে ওয়াসিম আহত হয়েছে, কয়েকজন ধরে রিকশায় চমেকে নিয়ে গেছে। আমি ইউএসটিসি মেডিকেলের ছাত্রদলের সভাপতি ডা. গিয়াস উদ্দিন নয়নকে ফোন করে বললাম, ‘আমার ছোট ভাই ওয়াসিমসহ বেশ কয়েকজনকে মেডিকেলে নিয়ে গেছে, তুমি তাড়াতাড়ি মেডিকেলের দিকে যাও।’

কিছুক্ষণ পর ওয়াসিমের বন্ধু হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম-আহবায়ক পারভেজ মোশাররফ আমাকে ফোন করে জানাল, ওয়াসিম গুলিবিদ্ধ হয়ে মেডিকেল ইমাজেন্সিতে আছে। এর আগে আমি জানতাম না ওয়াসিম গুলিবিদ্ধ হয়েছে। শোনার সাথে সাথে চট্টগ্রাম জেলা ড্যাবের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা ডা: মেহেদী হাসানকে ফোন করে তাড়াতাড়ি মেডিকেল ইমার্জেন্সিতে গিয়ে ওয়াসিমের খোঁজ নিতে বললাম। এদিকে আমি সরাসরি ওয়াসিমের নাম্বারেও ফোন দিলে একজন রিসিভ করে বললো, ওয়াসিমের ইমাজেন্সিতে চিকিৎসা চলছে। 

ফোন রাখতে না রাখতেই দেখতে পাই মুরাদপুর মসজিদের পাশের বিল্ডিংয়ের ছাদে আশ্রয় নেওয়া ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ছাদের ওপর থেকে ঢিল ছুড়ছে এবং মসজিদের গলি থেকে হামলার চেষ্টা করছে। ছাত্ররা এদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে। এরপর যে বিল্ডিং থেকে টিল ছুড়েছে সে বিল্ডিং এর নিচের গ্রীল ভাঙতে যায়। আমি ওইদিকে না গিয়ে ওয়াসিমের নাম্বারে আবার ফোন দেই। ওপাশ থেকে একজন ফোন রিসিভ করে বলল, ‘ভাই আমি প্রথমবার আপনার সাথে মিথ্যা কথা বলেছি। ওয়াসিম মারা গেছে।’ 

তখন মনে হলো, আমার মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। আমার কোনোভাবেই বিশ্বাসই হচ্ছিল না ওয়াসিম মারা যেতে পারে। নিজেকে স্থির রাখতে পারছিলাম না, হাউমাউ করে কান্না শুরু করতে থাকি। আমায় দেখে সবাই আমার দিকে এসে জিজ্ঞেস করল, ‘ভাই আপনার কি হইছে, আপনি কেন এইভাবে কান্না করছেন?’

আরও পড়ুন: পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদ: ১৬ জুলাইয়ে কোটা আন্দোলন রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে

কান্নাজড়িত কন্ঠে বললাম, আমার ছোট ভাই ওয়াসিম গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। তখন সবাই কান্না শুরু করল। কিছুটা স্থির হয়ে সবাইকে থামিয়ে বললাম, ‘তোরা এখানেই থাক স্থান ছেড়ে কোথাও যাবি না। আমরা চলে গেলে সবাই চলে যাবে।’ তখন ছাত্রলীগ এসে মুরাদপুর মোড় দখলে নেবে। চারদিকে যেহেতু মারামারি চলছে, মেডিকেল যাওয়ার জন্য বের হতে পারছিলাম না, ছোট ভাইয়েরাও বলছিল এখন কোন দিক দিয়ে যাওয়া যাবেনা। এক পর্যায়ে সবাইকে মুরাদপুর মোড়ে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা জিহাদ ও চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান রিমানসহ তিন জন ইমাজেন্সির লাশঘরে গিয়ে দেখি ৩টা লাশ। 

কান্না করতে করতে বলতে থাকি, ওয়াসিম কই? ড্যাব নেতা ডা. মেহেদী ইঙ্গিত করে বলেন, মাঝখানে থাকা লাশটাই ওয়াসিমের। আমি নিজেকে কিছুতেই সামলে নিতে পারছিলাম না। ওয়াসিমের লাশ জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকি। কিছুক্ষণ পর কয়েকজন আমাকে ধরে লাশঘর থেকে বাহিরে নিয়ে এসে বসতে দেয়। তখনও আমি কান্না থামাতে পারছিলাম না। আমার কান্না দেখে ইমার্জেন্সিতে থাকা আশেপাশের মানুষজনও কান্না করতে শুরু করে। শোক সন্তপ্ত হৃদয় নাড়িয়ে দেওয়া দৃশ্যের অবতারণ হয়। এরপর কিছু সময় আমার জ্ঞান ছিল না। অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম, মাথায় পানি ঢালার পর আমার জ্ঞান ফিরে আসে।

আমার নিজের কোনো ছোট ভাই নেই। কিন্তু ছাত্র রাজনীতি করতে এসে এমন কিছু কর্মী পেয়েছি যাদেরকে আমি নিজের ছোট ভাইয়ের চেয়েও বেশি ভালবাসি। ওরাও আমাকে বলতে গেলে নিজের বড় ভাইয়ের চেয়েও বেশি সম্মান ও শ্রদ্ধা করে। এদের মধ্যে ওয়াসিম ছিল অন্যতম। যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সে আমার পরামর্শ নিত। শহীদ ওয়াসিম ছাত্রদলের একজন নিবেদিত প্রাণ ছিল। তাকে হারিয়ে আমরা হারিয়েছি এক দেশপ্রেমিক যোদ্ধাকে। ছাত্রদল হারালো একজন সত্যিকারের ছাত্রনেতা। বাবা-মা হারাল তাদের পরিবারের আশার দিশাকে। আর আমি হারালাম আমার স্নেহের ছোট ভাইকে। 

ওয়াসিমকে হারানোর এই বেদনা আমাকে আমৃত্যু বয়ে বেড়াতে হবে। তবে ওয়াসিমের ত্যাগ শ্রমেই আমরা আজ মুক্ত। এ জাতি চিরকাল ওয়াসিমদের স্মরণে রাখবে। সবার মুখে মুখে থাকবে ওয়াসিমের সেই সাহসী বার্তা ‘চলে আসুন ষোলশহর।’

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!