স্কুলগুলোর প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা অনুযায়ী বিশেষ মনোযোগ দেয়া

কানিজ মোরশেদা
কানিজ মোরশেদা  © টিডিসি সম্পাদিত

নিভান রহমান গ্রেড ৪ এ ক্লাস শুরু করেছে বেশি দিন হয়নি। কিন্তু, গতবছর থেকেই কিছু বিষয়ে ও ক্লাসের বাকি শিক্ষার্থীদের সাথে সমানভাবে তাল মেলাতে পারছে না সে। ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনায় হাতেখড়ি হওয়ায় খুব স্বাভাবিকভাবেই নিভান বাংলায় কিছুটা পিছিয়ে। বিষয় হিসেবে বাংলা ওর কাছে একটু কঠিন লাগে, কিছুটা হয়ত ভয়ও পায়। আর ভয় থেকেই শুরু হয় ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়া। বিষয়টা নিয়ে ওর অভিভাবকরাও দুশ্চিন্তায় আছেন। কী করলে আসলে ওর জন্য ভালো হবে! সারাদিন স্কুল করে এসে আবার আলাদা কারও কাছ থেকে টিউশন নিবে কিনা, এ ভাবনাও ভেবেছেন নিভানের বাবা-মা!

এটা ঠিক যে, সব শিক্ষার্থী একইরকম ভাবে শিক্ষাগ্রহণ করে না। কেউ হয়ত গণিতে খুব ভালো, সারাদিন সে গণিত নিয়ে থাকে। কারও হয়ত গণিত শুনলেই গায়ে জ্বর চলে আসে, গণিতের আশপাশ দিয়েও ভিড়তে চায় না ওই শিক্ষার্থী। এড়িয়ে চলার ফল হিসেবে ওই নির্দিষ্ট বিষয়ে আরও পিছিয়ে পড়তে থাকে শিক্ষার্থী। ধারাবাহিকভাবে খারাপ ফল করতে থাকলে নিজের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এমনকি, শেষমেশ কেউ কেউ হয়ত হালও ছেড়ে দিতে পারে।

সাধারণত, স্কুলগুলোতে এমনভাবে কারিকুলাম তৈরি করা হয় যেন সকল শিক্ষার্থী একটি বিষয় মোটামোটিভাবে বুঝতে পারে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর কথা বিবেচনা করে তৈরি করা সেই কারিকুলাম থেকে কেউ হয়ত একটু ভালো বুঝতে পারে, কেউ একটু কম। সমস্যা হচ্ছে যারা কম বুঝতে পারে তাদের প্রতি আলাদা মনোযোগ দেয়া না হলে, তারা ধীরে ধীরে আরও বেশি দুর্বল হতে থাকে। ফলে, এখনকার স্কুলগুলো চেষ্টা করে নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে একজন শিক্ষার্থীর দুর্বলতা থাকলে তার প্রতি আলাদা করে আরেকটু বেশি মনোযোগ দিতে।

আরও পড়ুন: আইন বিভাগের অনুমোদনেই আইনের ব্যত্যয়, বার কাউন্সিলের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে আইএসইউ-জেডএনআরএফ 

বলছিলাম নিভানের কথা। বাংলায় ওর দুর্বলতা কীভাবে কাটিয়ে তোলা যায়, তা নিয়ে ওর অভিভাবকদের মতো, শিক্ষকরাও একই দুশ্চিন্তায় ছিলেন। দেখা গেলো, ওর মতো আরও দুয়েকজন শিক্ষার্থী আছে যাদের বাংলায় আরেকটু বেশি মনোযোগ দেয়া দরকার। এমন প্রয়োজন থেকেই নিভানদের জন্য নিয়মিত ক্লাসের বাইরে সপ্তাহে দুই দিন অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়। ওই দুই দিনের অতিরিক্ত ক্লাসে বাংলা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক তাদের দুর্বলতাগুলো বোঝার চেষ্টা করেন, তাদের প্রতি আলাদা যত্ন নেন। বাংলায় দুর্বলতা কাটিয়ে উঠে খুব সহজে দক্ষ হয়ে উঠতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়। এভাবে শিক্ষার্থীর দুর্বলতার ওপর ভিত্তি করে তাদের জন্য ওই বিষয়ের অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করেন শিক্ষকরা।

এটাতো সবাই জানেন, ছোটবেলায় যে শিশু বাকিদের চেয়ে একটু বেশি দুর্বল থাকে, বাবা-মায়ের নজর তার দিকেই কিছুটা বেশি থাকে। তাকে একটু বেশি চোখে চোখে রাখা হয়; বাকিদের চেয়ে আলাদা করে যত্নআত্তি নেয়া হয় তার। ঠিক তেমনি, গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলেও বিষয় ও শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা অনুযায়ী ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়। অতিরিক্ত এই ক্লাসগুলোকে বলা হয় পারফরমেন্স এনহান্সমেন্ট ক্লাস বা পিইসি। এজন্য শিক্ষার্থীদের আলাদা করে কোনো খরচ করা লাগে না, আবার তাদের বাসায় বসে টিউশন নেয়ার ঝামেলাও পোহানো লাগে না। স্কুলের পক্ষ থেকেই শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক দুর্বলতা কাটিয়ে তোলার ব্যবস্থা নেয়া হয়।

আরও পড়ুন: সরকারি চাকরিজীবীদের ‘বিশেষ সুবিধা’ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি

একজন শিক্ষার্থীর আগামীর পথচলা কেমন হবে, তার মাঝে কতটুকু আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে, তা অনেকখানিই স্কুল, শিক্ষক ও পরিবারের ওপর নির্ভর করে। বিশেষ করে, এখনকার অভিভাবকরা শিশুর পড়াশোনা নিয়ে অনেকবেশি যত্ন নেয়ার চেষ্টা করেন। একই দায়িত্ব শিক্ষকরাও পালন করেন। সবাইকে সমানভাবে এগিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করছেন তারা। একজন শিক্ষার্থী একটি বিষয়ে দুর্বল হতে পারে, একটি বিষয় বাকিদের চেয়ে কম বুঝতে পারে। কিন্তু, তাকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী গড়ে তোলার দায়িত্ব পালন করেন একজন শিক্ষক ও তার স্কুল। তিনিই দেখিয়ে দেন ওই শিক্ষার্থীর আগামীর পথ কোনদিকে যাবে।

লেখক: প্রধান, বাংলা বিভাগ (সিনিয়র স্কুল), গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, উত্তরা


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence