কন্যাশিশুর নিরাপত্তা: ইসলামী দৃষ্টিকোণ ও বাস্তব করণীয়

  © টিডিসি সম্পাদিত

কন্যাশিশুর নিরাপত্তা শুধু সামাজিক বা পারিবারিক বিষয় নয়, এটি ইসলামেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। ইসলাম নারীকে সর্বোচ্চ সম্মান ও সুরক্ষা দিয়েছে এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য স্পষ্ট কিছু নির্দেশনা প্রদান করেছে। বর্তমান সমাজে অভিভাবকদের অবশ্যই ইসলামি শিক্ষা অনুযায়ী তাদের কন্যাশিশুর সুরক্ষায় সচেতন হতে হবে।

নিচে ইসলামী বিধান ও বাস্তব জীবনের করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো—

বিপজ্জনক পরিস্থিতি যেখানে কন্যাশিশু নিরাপদ নয়:

পরপুরুষের সঙ্গে অবাধ মেলামেশা: ইসলামে নন-মাহরাম (যাদের সঙ্গে বিয়ে বৈধ) পুরুষদের সঙ্গে মিশতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তাই মেয়েদের ছোট থেকেই শেখানো উচিত, কীভাবে সীমারেখা বজায় রাখতে হয়। আত্মীয় হলেও সতর্ক থাকতে হবে, কারণ অপরাধমূলক ঘটনা অনেক সময় কাছের মানুষদের দ্বারাই ঘটে।

পর্দাহীনভাবে বাইরে চলাফেরা: ইসলাম নারীদের জন্য হিজাবকে ফরজ করেছে (সূরা আন-নূর ২৪:৩১, সূরা আহযাব ৩৩:৫৯)। মেয়েকে শালীন পোশাক পরার শিক্ষা দিন এবং ছোট থেকেই হিজাবের গুরুত্ব বোঝান। অভিভাবকদের উচিত মেয়েকে এমন পোশাকে অভ্যস্ত করা, যা তাকে সুরক্ষা দেবে এবং অশ্লীল দৃষ্টির হাত থেকে বাঁচাবে।

নির্জন জায়গায় একা অবস্থান (খালওয়া): রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো নারী যেন কোনো পুরুষের সঙ্গে নির্জনে একা না থাকে, তৃতীয়জন হবে শয়তান। (সহিহ মুসলিম: ১৩৪১)

মেয়েকে এমন কোনো পরিবেশে যেতে দেবেন না, যেখানে সে একা হয়ে যায়—যেমন কোচিং সেন্টারে, বন্ধুর বাসায় বা আত্মীয়দের বাসায়, যেখানে পুরুষ সদস্য থাকে।

সামাজিক অনুষ্ঠানে নজরদারি ছাড়া থাকা: বিয়ের অনুষ্ঠান, জন্মদিনের পার্টি বা পারিবারিক সমাবেশে মেয়েকে নজরদারি ছাড়া রাখা নিরাপদ নয়। ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে, যেখানে অনিয়ন্ত্রিত পরিবেশ থাকে, সেখানে সতর্ক থাকতে হবে। মেয়েকে শেখান, কীভাবে আত্মসম্মান বজায় রেখে চলতে হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অযথা প্রকাশ্যে আসা: ইসলামে নারীদের গোপনীয়তা বজায় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আজকাল অনেক বাবা-মা নিজেদের মেয়েদের ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন, যা বিভিন্ন অপব্যবহারের শিকার হতে পারে। অজানা লোকদের সামনে মেয়েদের প্রকাশ্যে আনা থেকে বিরত থাকুন।

রাতে একা বাইরে বের হওয়া বা গণপরিবহন ব্যবহার: রাসুল (সা.) বলেছেন, “তোমরা মেয়ে ও নারীদের রাতের বেলায় একা বের হতে দিও না, যদি না কোনো মাহরাম থাকে।” (তিরমিজি)

রাতের বেলা একা বাইরে পাঠানো ঠিক নয়, বিশেষ করে যদি তাকে গণপরিবহন বা রিকশার মতো যাতায়াত ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করতে হয়।

অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা থেকে দূরে রাখা: কুরআনে এসেছে, ব্যভিচারের ধারে-কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই তা অশ্লীল ও খুবই মন্দ পথ। (সূরা ইসরা: ১৭:৩২)

মেয়েকে এমন পরিবেশ থেকে দূরে রাখুন, যেখানে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা প্রচারিত হয়—যেমন টিভি, সিনেমা, অনলাইন কনটেন্ট, বা অসৎ বন্ধু-বান্ধবের সংস্পর্শ।

বান্ধবীর বাসায় থাকা, যেখানে পুরুষ সদস্য রয়েছে: মেয়েকে এমন কোনো বান্ধবীর বাসায় থাকতে দেবেন না, যেখানে ভাই, চাচা বা বাবা থাকেন। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ফিতনার কারণ হতে পারে।

ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে করণীয়:

নিয়মিত দোয়া করা: প্রতিদিন সকালে ও রাতে সন্তানদের জন্য দোয়া করুন— “আউযু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক।” (আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালামের মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টি সকল অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাইছি।)

পর্দার শিক্ষা দিন: ছোটবেলা থেকেই মেয়েকে ইসলামি পোশাক ও পর্দার গুরুত্ব বোঝান।

নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করুন: স্কুল, কোচিং, আত্মীয়স্বজনের বাসায় পাঠানোর আগে নিশ্চিত করুন যে পরিবেশটি নিরাপদ।

গোপনীয়তার শিক্ষা দিন: মেয়েকে শেখান যে, তার শরীরের কিছু অংশ স্পর্শ করার অধিকার কেবল তার বাবা-মা ও নির্দিষ্ট মাহরামদের আছে (যেমন ছোট বয়সে মা-বাবা স্নান করাতে পারে, কিন্তু অন্য কেউ নয়)।

সঠিক ইসলামি শিক্ষা দিন: ইসলামের বিধান সম্পর্কে জানানো এবং ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি আগ্রহী করে তোলা জরুরি।

কোমল ব্যবহার ও ভালোবাসায় সঠিক দিকনির্দেশনা দিন: ইসলাম কঠোরতা নয়, বরং ভালোবাসা ও সহানুভূতির মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়ার কথা বলে।

অশ্লীলতা ও অবৈধ সম্পর্ক থেকে বাঁচান: মেয়েকে বোঝান, কীভাবে সন্দেহজনক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হয় এবং কীভাবে নিজের সম্মান রক্ষা করতে হয়।

সন্তানের আচার-আচরণ পর্যবেক্ষণ করুন: কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখলে গুরুত্ব সহকারে খোঁজ নিন এবং প্রয়োজনে ইসলামি পরামর্শদাতার সহযোগিতা নিন।

সন্তানকে ইসলামি সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সঙ্গে পরিচিত করুন: ইসলামি জীবনধারায় অভ্যস্ত করার জন্য কুরআন, হাদিস ও নৈতিক শিক্ষার চর্চা করুন।

সর্বশেষ কথা: একজন বাবা-মা হিসেবে কন্যাশিশুর নিরাপত্তা ও নৈতিক মূল্যবোধ বজায় রাখা আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। ইসলামের বিধান মেনে চললে এবং সচেতন থাকলে ইনশাআল্লাহ, আপনার সন্তান দুনিয়া ও আখিরাতে নিরাপদ থাকবে।

➡ কন্যাশিশুর নিরাপত্তার জন্য সর্বদা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন এবং তার সঠিক লালন-পালনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। اللهم احفظ بناتنا من كل شر و سوء

(হে আল্লাহ, আমাদের কন্যাদের সকল অনিষ্ট ও অকল্যাণ থেকে রক্ষা করুন। আমিন।)

লেখক: সহকারি শিক্ষক, আল-আজম হাইস্কুল এন্ড কলেজ, সিলেট।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence