১৮তম নিবন্ধনে উত্তীর্ণ হয়েও আবেদনের সুযোগ পাননি ঢাবি-জাবির শিক্ষার্থীরা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৫, ০৫:২২ PM , আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:০৫ PM
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন সায়মা আক্তার। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে বিএসসি এবং এমএসসি সম্পন্ন করেছেন এ শিক্ষার্থী। তবে বয়সের ব্যাড়াজালে আটকে গেছে তার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন। আবেদনেরই সুযোগ পাননি সায়মা। আক্ষেপ করে তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সহকারী শিক্ষক ও প্রভাষক আইসিটি পদে ৭০ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। ছোটবেলা থেকে প্রবল ইচ্ছা ছিল শিক্ষক হওয়ার। সেই আকাঙ্খা থেকেই নিবন্ধন পরীক্ষায় আবেদন করেছিলাম। তবে এনটিআরসিএর বিধির মারপ্যাঁচে আবেদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। অন্যান্য চাকরির পরীক্ষায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন থেকে বয়স গণনা করা হলেও এনটিআরসিএর ক্ষেত্রে ভিন্ন নিয়ম। আইসিটি বিষয়ে সাড়ে সাত হাজারের বেশি পদ ফাঁকা রয়েছে। অথচ যোগ্যতা থাকলেও আমাদের আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়নি।
সায়মা বলেন, ‘বিগত গণবিজ্ঞপ্তিগুলোতে ব্যাকডেট দেওয়া হলেও ১৮তম নিবন্ধনধারীদের জন্য প্রকাশিত ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে কোনো ব্যাকডেট দেওয়া হয়নি। আমাদের ভাইভা নিতে প্রায় নয় মাস লেগেছে। আমরা সার্টিফিকেট অর্জন করেছি তিনটা ধাপ অতিক্রম করে, অথচ একটি বারও আবেদন করতে পারলাম না। করোনাভাইরাসের জন্য যাদের পরীক্ষা নিতে দেরি হয়েছে বা সার্কুলার হতে দেরি হয়েছে তারাই বঞ্চিত। আমরা একটাও গণবিজ্ঞপ্তি পেলাম না, আমরা শুধু আবেদনের সুযোগ চাই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন রাকিবুর রহমান। ১৮তম নিবন্ধনে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হলেও তিনিও আবেদন করতে পারেননি বয়সসংক্রান্ত জটিলতার কারণে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে লেখাপড়া করলেও হতে চেয়েছিলেন শিক্ষক। তবে দীর্ঘ নয় মাস ধরে ভাইভা নেওয়ায় তারও বয়স শেষ হয়ে গেছে। এতে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেছে রাকিবুরের।
রাকিবুর রহমান বলেন, ‘আমার সনদের মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও বয়স ৩৫ উর্দ্ধ হওয়ায় এনটিআরসিএ আমাকে একবারের জন্যেও ৬ষ্ঠ গনবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করার সুযোগ দেয়নি। কিন্তু বিগত সময়ে সবাই ব্যাকডেট পেয়েছে। তাছাড়া ৬ষ্ঠ গনবিজ্ঞপ্তিতে মাত্র ৪০ নম্বর পেয়েও অনেকেই চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। আমরা যারা ভালো নম্বর পেয়েছি, তারাই বাদ পড়ে গেছি। এটা আমাদের সাথে চরম জুলুম এবং বৈষম্য। এ বৈষম্য থেকে মুক্তি চেয়ে বিশেষ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আমাদের বঞ্চিত সকলকে অন্তত একটি বারের জন্য হলেও আবেদন করার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
শুধু সায়মা আর রাকিবুরই নয়; ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েও বয়স সংক্রান্ত জটিলতায় আবেদনের সুযোগ পাননি অনেক প্রার্থী। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) আদলে প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং ভাইভায় উত্তীর্ণ হয়েও আবেদনের সুযোগ পাননি তারা। এ অবস্থায় অনেকেই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন সার্কুলার প্রকাশিত হয় ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর। দীর্ঘ দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে পরীক্ষার প্রতিটি ধাপ শেষে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয় ২০২৫ সালের ৪ জুন। এত দীর্ঘ সময় ব্যয় হওয়ার কারণে অনেকের বয়স ৩৫ বছর অতিক্রম হয়ে যায়। ফলে ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে তারা আবেদন করতে পারেননি।
ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, সরকারিসহ যেকোনো চাকরির পরীক্ষায় প্রার্থীদের বয়স গণনা করা হয় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ থেকে। অথচ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বয়স নির্ধারণ করছে ফলাফল প্রকাশের তারিখ অনুযায়ী। এর ফলে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়েও দেশসেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আবেদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। পূর্ববর্তী গণবিজ্ঞপ্তিগুলোতে বয়সে ছাড় দেওয়া হলেও এবার সে সুযোগ দেওয়া হয়নি। ফলশ্রুতিতে দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি ও ভালো নম্বর থাকা সত্ত্বেও শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ভেঙেছে গেছে কয়েকশ প্রার্থীর।
প্রার্থীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম এবং সচিব এ এম এম রিজওয়ানুল হকের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তারা রিসিভ করেননি।
আদালতের শরণাপন্ন ভুক্তেভোগীরা, রুল জারি
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েও ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ না পাওয়া ৪৩ জন প্রার্থী আদালতে রিট করেছেন। ভুক্তভোগীদের বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি আমলে নিয়ে ‘আবেদনকারীর বয়স ৪ জুন, ২০২৫ এ ৩৫ বছর বা তার কম হতে হবে’ সেটি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এ মর্মে রুল জারি করেছেন। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে রুলে জবাব দিতে বলা হয়েছে। গত ২৫ আগস্ট বিচারপতি হাবিবুল গণি এবং বিচারপতি তাহসীন আলীর সমন্বিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ কামাল হোসেন। ১৮তম নিবন্ধনে আবেদনবঞ্চিত ৪৩ জন প্রার্থী এ রিটটি করেছেন। তবে এখনো রিটের কোনো জবাব দেয়নি এনটিআরসিএ।