রঙিন থেকে সাদাকালো: সেই ছবি এখন এই ছবি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২২, ১০:২৮ PM , আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২২, ১০:২৮ PM
সময়ের ব্যবধান হয়তো ৬ ঘন্টা হবে। সকালে যেই ছবিতে সবাই হাসিখুশি ছিলো। দুপুর পেরোতেই সেই হাসি হারিয়ে গেলো চিরতরে। এই মানুুষগুলো আর কোনদিন ফিরে আসবেনা এই রঙিন দুনিয়ায়।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে খৈয়াছড়া যাওয়ার আগে ১৪ জন একটি গ্রুপ ছবি তুলেছিলেন। সেই ছবি পোস্টও করে ছিলেন ফেসবুকে। হয়তো এটাই ছিলো ফেসবুকে শেয়ার করা শেষ রঙিন ছবি। সারি বেধে আগপিছ করে দাঁড়ানো সেই রঙিন ছবি এখন সাদাকালো। এখনও সারিবদ্ধভাবেই আছে তবে হাসিমাখা মুখে দাড়িয়ে নয় নিথর দেহ নিয়ে লাশের সারি হয়ে। কে জানতো ৬ ঘন্টার ব্যবধানে এই রং চটা এই ডিজিটাল ছবিতে থাকা মানুষগুলো সারা জীবনের জন্য রং হারাবে।
সামনে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা তাই মনটাকে ফ্রেশ করতে আমানবাজারে আর এন জে কোচিং সেন্টারের ১৬ জন ছাত্র-শিক্ষক মিলে গিয়েছিলেন মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝরণা দেখতে। কে জানতো এই আনন্দ যাত্রা অন্তিম যাত্রায় রূপ নিবে। নিহতরা সবাই চট্টগ্রামের হাটহাজারীর চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের যুগিরহাট এলাকার বাসিন্দা। আপনজন হারানোর বেদনায় সেই এলাকায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে গেছে।
ঘটনার পর থেকে ঘুরতে যাওয়ার আগের ছবিটি ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এর একটিতে হাস্যোজ্জল মুখে দাঁড়িয়ে সবাই। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই ছবিটি দেখিয়ে নিহত সজিবের ভাই তৌসিফ বলেন, শেখ মার্কেটে অবস্থিত প্রিয় কোচিংয়ের সামনেই ছবিটি তুলেছিলেন তারা। সেই ছবিটি পরে ফেসবুকে দিয়েছিলেন রাকিব বিন খান। আমার ভাই সজিব, রাকিবসহ ১৪ জনের মধ্যে বেশিরভাগই মারা গেছেন।
আরও পড়ুন: ‘আয় জাগা–সম্পত্তি কিছু ন চাই, আর পুতরে আনি দে’
অন্য ছবিটি যেন সেটিরই সত্যতা জানান দিচ্ছে। এই ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, উদ্ধার করার পর মরদেহগুলো সাদা কাপনে মুড়িয়ে ঘটনাস্থলে সাজিয়ে রেখেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
ছবি দুটি পাশাপাশি ফেসবুকে শেয়ার করে অনেকেই চোখের পানি ফেলছেন। কেউ লিখেছেন, ‘এই শোক সইব কী করে!’, ‘ছবি দুটি দেখে কলিজা কেঁপে উঠছে। তাঁদের বাবা–মায়ের কী অবস্থা কে জানে!’
আজ শুক্রবার (২৯ জুলাই) সকালে কোচিং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মিলে হাটহাজারী থেকে পিকনিকে যান মীরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝর্ণা এলাকায়। পথে শিক্ষার্থীদের বহনকারী মাক্রোবাসটি পূর্ব খৈয়াছড়া রেলক্রসিং অতিক্রম করার সময় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ গেটম্যানের ভুলেই ঝরেছে এতো প্রাণ। দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া সেই মাইক্রোবাসের ১৮ যাত্রীর মধ্যে ১১ যাত্রীই ঘটনাস্থলে নিহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় চমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে সাতজন। এরমধ্যে ছয়জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং একজন আশঙ্কামুক্ত রয়েছেন। আশঙ্কামুক্ত মো. ইমন নিজেই মাইক্রোবাসে ১৮ জনের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহতদের মধ্যে চারজন শিক্ষক, ছয়জন ছাত্র ও মাইক্রোবাসের চালক আছেন।