নেটওয়ার্কের বাইরে সুনামগঞ্জ, সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র  © সংগৃহীত

চলমান বৃষ্টি ও উজানের ঢলে বেড়েই চলেছে সিলেটের নদ-নদীর পানি, যার ফলে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি। বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্কসহ সারা দেশের সঙ্গে প্রায় সব ধরনের যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বন্যাকবলিত উপজেলার বাসিন্দারা। দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ।

শুক্রবার (১৭ জুন) ভোর থেকেই সুনামগঞ্জ সদর নেটওয়ার্কের বাইরে। গত ১০ ঘণ্টায় সদর এলাকার কারোর সঙ্গে মোবাইলে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকায় বিকল হয়ে পড়েছে মোবাইল অপারেটরের টাওয়ারগুলোর ব্যাকআপ পাওয়ার সাপ্লাই। বন্ধ হয়ে গেছে ল্যান্ডফোনের সংযোগ। অন্যদিকে সড়ক যোগাযোগও বন্ধ থাকায় সারাদেশ থেকেই কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সুনামগঞ্জ। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় স্বেচ্ছাসেবীরাও উদ্ধার অভিযানে বের হতে পারছে না।

আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে ঢাবির ২১ শিক্ষার্থী

সিলেট ও সুনামগঞ্জের অনেক স্থানে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ও বৈদ্যুতিক খুঁটি তলিয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্তত পৌনে দুই লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন রয়েছেন। শুক্রবার (১৭ জুন) দুপুরে বিদ্যুৎ বিভাগ বিষয়টি জানায়। মানুষের ঘরে সুপেয় পানি নেই। মুঠোফোনেও নেটওয়ার্ক নেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট তো রয়েছেই, সঙ্গে যোগ হয়েছে জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা।

দেশের বিভিন্ন প্রাণ ও দেশের বাইরে থেকে সুনামগঞ্জের বাসিন্দারা জানান, শুক্রবার ভোর থেকেই তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। যে নাম্বারেই কল করা হচ্ছে সেটিই বন্ধ দেখাচ্ছে। সেসময় ঘণ্টাখানেক আগেও যার মোবাইলে ৮০ ভাগ চার্জ ছিল, সেই মোবাইল নম্বরটিও অচল দেখাচ্ছে। এ অবস্থায় স্বজনদের নিরাপত্তা নিয়ে তারা ভীষণ দুশ্চিন্তা ও শঙ্কায় পড়েছেন।

ভয়াবহ বন্যার কবলে সুনামগঞ্জ, ক্রমেই বাড়ছে পানির স্রোতঘরে-বাইরে পানি থই থই, বিভীষিকাময় রাত পার করলো সুনামগঞ্জের মানুষ মাঝেমাঝে নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া গেলেও তা কয়েক সেকেন্ডের বেশি স্থায়ী হচ্ছে না। সুনামগঞ্জ পৌর কলেজের শিক্ষক জাফর আহমেদ জানান, 'আমার বাসায় বুকসমান পানি। আমার ছয়মাস বয়সী মেয়ে ও স্ত্রীকে ফুফুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। বিছানা সহ সব আসবাবপত্র পানির নিচে। পানির কমার লক্ষ্মণ দেখছি না।' 

ফেসবুকের মেসেঞ্জারের মাধ্যমে তিনি জানান, হঠাৎ ডাটা সংযোগ পাওয়ায় তিনি মেসেজ ডেলিভার করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু কাউকে কল করে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। গ্রামীনফোন, এয়ারটেল, রবি, বাংলালিংক, টেলিটক—কোনো অপারেটরেই নেটওয়ার্ক নেই। বিদ্যুৎ ও গ্যাস না থাকায় অবস্থা আরও করুণ। দ্রুত সেনাবাহিনী উদ্ধারকাজ না করলে বিপদ আরও বাড়বে। পানির উচ্চতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে।

এর আগে গত বুধবার থেকে উজান থেকে ব্যাপক পরিমাণে পাহাড়ি ঢল নামা শুরু হলে সিলেট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হয়। আজ শুক্রবার (১৭ জুন) সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলা সদরের সঙ্গে পাঁচটি উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। তবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসন চেষ্টা চালাচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ