বাধা দেবার কেউ নেই, তাই সময়ে সময়ে বন্ধ করা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

করোনায় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা
করোনায় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা  © ফাইল ফটো

কোনো ধরনের বাধা পেতে হয় না বলে যেকোনো সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন। তিনি বলেন, যেখানে জাতিসংঘ বলেছে যেকোনো মূল্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রাখতে, সেখানে সবকিছু খোলা রেখে দ্বিতীয় দফায় স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু অন্য সবকিছুর চেয়ে এটা সহজ কাজ, কোনো ধরনের বাধা নেই, তাই সেখানেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

অধ্যাপক কামরুল আরো বলেন, মাসের পর মাস বন্ধের ফলে যে অপূরণীয় ক্ষতি, সেটা সরকার দেখে না, বরং ক্রেডিট নেয়। সংক্রমণের ঝুঁকির কথা বলে বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু নন্দলাল হয়ে বসে থাকলে তো আর চলবে না। প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় কত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, তাই বলে তো আর কেউ ঘরে বসে থাকছে না। তাহলে যেখানে শিক্ষার্থীদের আক্রান্ত ও মৃত্যুহার যেকোনো বয়সের তুলনায় কিছুই না, সেখানে তারাই কেবল ঘরবন্দী, বাকি সবকিছু খোলা।

করোনাভাইরাসে সংক্রমণের হার শিশু-কিশোরদের মধ্যে সবচেয়ে কম। মৃত্যুর হারও নগণ্য। অথচ করোনার প্রকোপ বাড়লেই দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কর্মকাণ্ড চললেও বন্ধ থাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে করোনা সংক্রমিত মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৯ লাখ ১৪ হাজার ৩৫৬ জন। এর মধ্যে শূন্য থেকে ১৪ বছর বয়সী অর্থাৎ শিশু এবং প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার ছিল শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থাৎ ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে আক্রান্তের হার ২ দশমিক ৩ শতাংশ। ২৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সীদের মধ্যে সংক্রমণের হার ছিল ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আর ৫৫ বছর থেকে তদূর্ধ্ব বয়সীদের করোনায় আক্রান্তের হার ছিল ৮৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

শুধু সংক্রমণের হারই নয়, শিশু এবং স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই ভাইরাসে মৃত্যুর হারও সবচেয়ে কম। সরকারি তথ্য বলছে, ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ৮৩৮ জনের। এর মধ্যে শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সীদের মধ্যে করোনায় মৃত্যুহার ছিল শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. আবু জামিল ফয়সাল  বলেন, করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সবকিছু ছিল তাৎক্ষণিক। দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনার পাশাপাশি বিকল্প ব্যবস্থা কখনোই ছিল না। এটাই সবচেয়ে বড় ঘাটতি। তিনি বলেন, অনলাইনে ক্লাস করার মতো সক্ষমতা ঢাকায় বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের কিছুটা থাকলেও গ্রামে বসবাসকারী অনেকেরই তা নেই। সরকারি ব্যবস্থাপনায় চরম ঘাটতি রয়েছে। যাঁরা দায়িত্বে, তাঁদের অনেকের প্রশিক্ষণ নেই, নেই অভিজ্ঞতা। ফলে অনলাইনে পাঠদানে শিক্ষার্থীরা যতটা উপকৃত হয়েছে, তার চেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ডিভাইসের অতিরিক্ত ব্যবহারে।

অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের তেমন ভয় নেই, যতটা প্রাপ্তবয়স্কদের রয়েছে। উপরন্তু বাচ্চারাই আমাদের দেখিয়েছে, কীভাবে শতভাগ মাস্ক পরতে হয়। তারা মাস্ক পরে স্কুলে ঢুকেছে, বের হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার বেলায়ও শিশুরা সচেতন, এ ছাড়া শিক্ষকেরা তো আছেনই। তারপরও বারবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই সঠিক হতে পারে না।’

করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপট শুরু হলে গত ২১ জানুয়ারি ফের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। সংক্রমণ এখন কমতে থাকায় আগামী মঙ্গলবার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে ক্লাস শুরু হবে। ১ মার্চ খুলবে প্রাথমিক বিদ্যালয়। ইউনিসেফের তথ্য বলছে, করোনায় বাংলাদেশের ৪ কোটির বেশি শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখায় শিক্ষার্থীদের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তা হবে দীর্ঘমেয়াদি। কারণ, দুই বছর ধরে বাস্তবসম্মত কোনো পরিকল্পনা নেয়নি সরকার। ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শিক্ষার্থীদের।

 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence