কুয়াশামাখা ভোরে রসের খোঁজে
- রেদওয়ান রাকিব
- প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:০৩ PM , আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:২৫ AM
তখনও আড়মোড় ঘুম ভাঙেনি ক্যাম্পাসের। ঘড়ির কাঁটায় সবে ভোর ৬টা বাজে। একদিকে ফোনের রিংটোন অন্যদিকে বন্ধুদের একের পর এক ফোন কলে ঘুম ভাঙল। ফোন রিসিভ করতেই কলের ওপাশ ভেসে আসল রস খেতে যাব দ্রুত চলে আয় বঙ্গবন্ধু হলের নিচে। ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে বিছানা থেকে উঠে চোখে মুখে পানি দিয়ে বেরিয়ে পড়ি।
বছরের বেশির ভাগ দিন সকালের ঘুম বিসর্জন দিতে অপারগ বন্ধুটিও রস খাওয়ার দিনে ঠিক সময়ে উপস্থিত হয়। খেজুরের রস না খেলে যেন শীতকালের পূর্ণতা পায় না। নতুন একটা দিনের সূচনালগ্নে রসের খোঁজে বেরিয়ে পড়া একদল রস প্রেমিকের ছুটে চলা। তখনও প্রকৃতি কুয়াশার চাদরে আচ্ছন্ন। কুয়াশা ভেদ করে শীতের আড়মোড়া ভেঙে রসের খোঁজে ছুটে চলা পথিকেরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের সহপাঠী বন্ধুরা।
ভোরে কোন যানবাহন না পাওয়ায় পায়ে হেটে চলা শুরু করলাম। ত্রিবেণী গ্রামের ভিতরের রাস্তা দিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার অতিক্রম করার পর রাস্তাটি শেষ হয়ে যায়। পরক্ষণেই পলাশ জানাল আমরা ভুল পথে এসে পড়েছি। রস খাওয়ার গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পলাশের হওয়ায় সহপাঠীদের কথা শুনতে হয় তাকে। এরপর এক ব্যাক্তির সঙ্গে বললে বিলের মেঠো পথ ধরে সোজা যেতে বলেন।
তারপর আবার মোঠো পথ দিয়ে লাইন ধরে পথচলা শুরু। কুয়াশাভেজা রাস্তা পিচ্ছিল হওয়ায় অনেকে মাঝেমাঝে পড়ে যাচ্ছিল। পথ চলতেই চলছিল খুনসুটি গান ও আড্ডা। ভুল পথের যাত্রা এনে দিয়েছিল আনন্দের পূর্ণতা। আরও দুই কিলোমিটার হাঁটার পরে রস খাওয়ার গন্ত্যবে পৌছায়।
রসের কলস কিংবা কেউ গ্লাস হাতে রস খাওয়ায় ব্যস্ত সবাই। দিনটি স্মৃতি করে রাখতে ছবিও তুলছেন। শীতের সকালের সূযোদয়ের সঙ্গে এক গ্লাস রস এক অন্যরকম ভাল লাগার অনুভূতির সঞ্চার করে।
গাছি রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখানে রস খেতে আসে। তারা মজা করে রস খেয়ে থাকে। আমাদেরও খুব ভাল লাগে।
রস খেতে যাওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে রেজওয়ান বলেন, পৌষের কাক ডাকা ভোরে শিশির ভেজা সকালে বেরিয়ে পড়া। সহপাঠীদের সাথে ভুল পথে হেঁটেও সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে খেজুর রস খাওয়ার অনুভূতি কোন বাক্য দিয়ে বোঝানো সম্ভব না। শীতের প্রতিটি সকাল এভাবে উৎসব ও আমেজে কাটুক।