শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এখন ১১ দফায়

নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা
নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা  © সংগৃহীত

রাজধানীর রামপুরার ব্রিজের ওপর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা ১১ দফা দাবি দিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম দাবি, শুধু ঢাকাই নয় সারা দেশে ছাত্রদের জন্য বাস ভাড়া অর্ধেক করা। আগের দিনের মতো বুধবার (১ ডিসেম্বর)  সকাল ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা রামপুরা ব্রিজের ওপর রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

এ সময় তাদের রামপুরা ব্রিজের দুই পাশের সড়কে অবস্থান নিয়ে যানবাহন ও চালকদের কাগজ ও লাইসেন্স যাচাই করতে দেখা যায়। সেই সঙ্গে শুধু ঢাকাই নয়, সারা দেশে ছাত্রদের জন্য বাসে হাফ পাস চালুসহ ১১ দফা দাবিতে স্লোগান দিতে দেখা যায় তাদের।

শিক্ষার্থীদের নতুন দাবিগুলো হলো—

১. সড়কে নির্মম কাঠামোগত হত্যার শিকার নাঈম ও মাইনুদ্দিনের হত্যার বিচার করতে হবে। তাদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গুলিস্তান ও রামপুরা ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় পথচারী পারাপারের জন্য পদচারী-সেতু নির্মাণ করতে হবে।

২. সারা দেশে সব গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস সরকারি প্রজ্ঞাপন দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে। হাফ পাসের জন্য কোনো সময় বা দিন নির্ধারণ করে দেওয়া যাবে না। বর্ধিত বাসভাড়া প্রত্যাহার করতে হবে। সব রুটে বিআরটিসির বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।

৩. গণপরিবহনে ছাত্রছাত্রী এবং নারীদের অবাধ যাত্রা ও সৌজন্যমূলক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

৪. ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি এবং লাইসেন্সবিহীন চালককে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। গাড়ি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে বিআরটিএর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৫. সব রাস্তায় ট্রাফিক লাইট, জেব্রা ক্রসিং নিশ্চিত করাসহ জনবহুল রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৬. বাসগুলোর মধ্যে বেপরোয়া প্রতিযোগিতা বন্ধে এক রুটে এক বাস এবং দৈনিক আয় সব পরিবহনমালিকের মধ্যে তাঁদের অংশ অনুয়ায়ী সমানভাবে বণ্টন করার নিয়ম চালু করতে হবে।

৭. শ্রমিকদের নিয়োগ ও পরিচয়পত্র নিশ্চিত করতে হবে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে। চুক্তি ভিত্তিতে বাস দেওয়ার বদলে টিকিট ও কাউন্টারের ভিত্তিতে গোটা পরিবহনব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। শ্রমিকদের জন্য বিশ্রামাগার ও টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. গাড়িচালকের কর্মঘণ্টা একনাগাড়ে ছয় ঘণ্টার বেশি হওয়া যাবে না। প্রতিটি বাসে দুজন চালক ও দুজন সহকারী রাখতে হবে। পর্যাপ্ত বাস টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে। পরিবহনশ্রমিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

৯. যাত্রী-পরিবহনশ্রমিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের মতামত নিয়ে সড়ক পরিবহন আইন সংস্কার করতে হবে এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

১০. ট্রাক, ময়লার গাড়িসহ অন্যান্য ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে।

১১. মাদকাসক্তি নিরসনে গোটা সমাজে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। চালক-সহকারীদের জন্য নিয়মিত ডোপ টেস্টের ও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

উল্লেখ্য, গত ১৮ নভেম্বর বাসে অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ২৪ নভেম্বর গাড়িচাপায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যুর পর তা রূপ নেয় নিরাপদ সড়কের ৯ দফা দাবির আন্দোলনে। এর মধ্যে সোমবার রাতে রামপুরায় বাসের চাপায় নিহত হয় এসএসসির ফলপ্রত্যাশী মাইনুদ্দিন ইসলাম।


সর্বশেষ সংবাদ