প্রধানমন্ত্রীর ‘সাদামাটা জীবনের গল্প’ শোনালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল  © সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘সাদামাটা জীবন’ নিয়ে একটি গল্প শুনিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

সোমবার (২৯ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক রাজু আলীমের লেখা ‘শেখ হাসিনা সরকার’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নিজের জীবনের এক অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঘটনা ১৯৯৬ কি ১৯৯৭ সালের। প্রথম সন্তানের জন্ম হবে মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের। তাকে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উঠলেন ফ্লোরিডার একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত অ্যাপার্টমেন্ট এস্টেটে। একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী পাশের ফ্ল্যাটে আছেন তা জানতেন না তার প্রতিবেশীও। মোমেন তখন বস্টনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।

মোমেন জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে ফোন করে বললেন, ‘আমরা এত দিন ধরে আসছি, আপনারা খোঁজটোজ নেন না।’ আমরা বললাম, আমাদেরকে রাষ্ট্রদূত বলেছেন যে, ‘আপনাকে বিরক্ত করা যাবে না। আপনি মেয়েকে দেখাশোনার জন্য আসছেন।’

তারপর প্রধানমন্ত্রী তাকে যাওয়ার জন্য বললে তিনি সেখানে যান। কিন্তু সেই অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের নিচে গিয়ে বাঁধল বিপত্তি; কোড নম্বর জানা না থাকায় ঢুকতে পারছিলেন না মোমেন। বারবার চেষ্টা করায় সময় লাগছিল। তাতে প্রবেশমুখে গাড়ির জট লেগে যায়। এক পর্যায়ে পেছনের গাড়ি থেকে তার সাহায্যে এগিয়ে আসেন এক নারী। তিনি এল সালভাদরের সেই নাগরিক।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি এসে আমাকে বলতেছেন, ‘কী হল?’ বললাম, আমি তো এখানে কোড নম্বর জানি না। তো সে আমাকে নিজের কোড দিয়ে ঢুকিয়ে দিল।

এরপর ওই নারীকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য থামলেন মোমেন। অভিবাদনের পর কুশল বিনিময়ও হয়। তখন সেই নারী জানতে চান, কেন এখানে এসেছেন মোমেন।

তখন তিনি বললেন, এই রকম একটা অ্যাপার্টমেন্ট, সেখানে যাব। তিনি বললেন, ‘কেন? তুমি কি ওখানে থাকো?’ তিনি জবাব দিলেন, না। এখানে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী আছে। সেখানে যাব।

সেই উত্তর শুনে সেই নারী বিস্মিত হয়ে বললেন, ‘এখানে প্রধানমন্ত্রী! আমার বাড়ি এল সালভাদরে। আমাদের মন্ত্রীও যখন আসে, তখন রিসোর্টে থাকে, ফাইভ স্টার হোটেলে থাকে। এখানে কীভাবে প্রধানমন্ত্রী থাকে? নো ওয়ে!’

তারপর পররাষ্ট্র মন্ত্রী তাকে বললেন, উনি আছেন।

তখন ওই নারী বললেন, ‘যে বাসার কথা বলছ, সেটা আমার উল্টোদিকে’। এরপর বললেন, ‘একটা কালো গাড়ি দেখতেছি এখানে, সম্ভবত সিকিউরিটি গাড়ি।”

তখন ওই নারী মোমেনকে বলেন, তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান। মোমেন তাকে শেখ হাসিনার কাছে নিয়ে যান।

সেই সাক্ষাতের বিবরণ দিয়ে মোমেন বলেন, সেখানে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে) বললাম যে, আপনাকে একজন দেখতে চায়। প্রধানমন্ত্রী সাথে সাথে তাকে সাক্ষাৎ দিলেন।

মন্ত্রী বলেন, সে তো এত ভক্ত হয়ে গেল যে, তৃতীয় বিশ্বের একজন প্রধানমন্ত্রী, যিনি এই রকম সাধারণ বাসায় থাকেন। দুই বেডরুমের। একটাতে তার মেয়ে থাকেন, আরেকটাতে উনি। আরেকটা টিভি রুমের মত ছোট জায়গা। এটা দেখে সে তাজ্জব।

ওই নারী বলে- ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, তোমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী এত সাধারণভাবে থাকে!’

ওইদিন প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে রান্না করেছিলেন জানিয়ে মোমেন জানান, তারপর প্রধানমন্ত্রী ই নারীকে বললেন, ‘তুমি খেয়ে যাও।’ এতে সেই নারী আরও অভিভূত হয়ে গেলেন।”

ঘটনার বর্ণনার শেষে মোমেন বলেন, এটা হলো শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। এই স্টোরিগুলো অনেকে জানে না। এটা তার ব্যক্তি জীবনের স্টোরি। এত সাধারণভাবে উনি থাকেন মানুষের কথা চিন্তা করে, যখন তিনি বড়লোকের মত থাকতে পারতেন, অনেক খরচ করতে পারতেন।

দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে তার এমন সাধারণ জীবনের গল্পও উঠে আসা উচিত বলেও অনুষ্ঠানে জানা মন্ত্রী।

কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার সভাপতিত্বে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া, বইয়ের প্রকাশক অনন্যা প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী মনিরুল হক, ’দি ফ্ল্যাগ গার্ল’ নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা প্রিয়তা ইফতেখার বক্তব্য দেন।


সর্বশেষ সংবাদ