আশ্রয়কেন্দ্রে ২২ লাখের পরিবর্তে গেল ১২ লাখ মানুষ

  © সংগৃহীত

ঢাকায় আবহাওয়া দপ্তর বলেছে, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাব বাংলাদেশে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। সে কারণে সারাদেশে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। উপকূলের পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা এবং বাগেরহাটে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উপকূলীয় ১৯টি জেলায় ২২ লাখ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়ার পরিকল্পনা থাকলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত নেয়া সম্ভব হয়েছে ১২ লাখ মানুষকে। আবহাওয়াবিদরা বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাব সারারাত ধরেই বাংলাদেশের ওপর থাকবে। বিবিসি বাংলার খবরে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

দেশের দক্ষিণে পটুয়াখালী জেলার লালুয়া ইউনিয়নের অবস্থান সমুদ্রের তীর ঘেঁষে। সেখানে বাধ আগে থেকে ক্ষতিগ্রস্ত থাকায় জোয়ারের চাপে পানি ঢুকে ঐ ইউনিয়নের ১৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের কাউন্সিলর খাদেজা বেগম বলছিলেন, গ্রামে পানি ওঠায় নৌকায় করে লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে। অনেকে নিজেদের উদ্যোগে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছেন।

বাগেরহাটেরও কিছু নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনীহা অনেকের: দক্ষিণ পশ্চিমের সাতক্ষীরা জেলার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে গাবুরা ইউনিয়নকে। এই ইউনিয়নের তিন পাশে সুন্দরবন এবং অন্যদিকে নদী। ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, তার ইউনিয়নে ৪২ হাজার মানুষের বসবাস। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত আড়াই হাজারের মতো মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে।

"আমাদের এলাকায় মানুষ একেবারে খারাপ অবস্থা না হলে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চায় না। বিকেলের পরে কিছু লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছে।’

বরিশাল, ভোলা এবং বরগুনাতেও মানুষের মাঝে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যাওয়ার আগ্রহ কম। বরিশাল থেকে সাংবাদিক শাহিনা আজমিন বলেন, বরিশাল অঞ্চলে ঝুঁকিপূর্ণ গ্রামগুলো থেকে জোর করে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে। "অনেক জায়গায় লোকজনকে পুলিশ দিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে। তবে সন্ধ্যায় ঝড় আঘাত হানতে পারে, এই ভয়ে বিকেল থেকে অনেক মানুষ নিজেরাই আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছে।"

উপকূলের বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় লোকজন এবং সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে একই চিত্র পাওয়া যাচ্ছে যে, মানুষ বাড়ি ঘর ফেলে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে খুব একটা আগ্রহী নয়।

তবে এসব জেলায় গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত প্রশাসন থেকে মাইকিং করে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়। আশ্রয় কেন্দ্রে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল বলেন, ঝড়ের আগে এবং পরের পরিস্থিতির জন্য যথাযথ প্রস্তুতি সরকারের রয়েছে। "অতীত অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, সাধারণত আমরা ২১/ ২২লাখ মানুষকে নিরাপদে নিয়ে আসি। কিন্তু এবার ঝড়টি উড়িষ্যায় আঘাত হানার পর দুর্বল হয়েছে, এটা হয়তো সবাই ধারণা করছে। সেজন্য এপর্যন্ত ১২ লাখের মতো মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা সম্ভব হয়েছে।"

"সামগ্রিকভাবে উপকূলের সব জেলায় রাজনীতিক, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ সমন্বিত-ভাবে প্রস্তুতির কাজগুলো করছে। ঝড়ের পরে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য জরুরী ত্রাণ এবং মেডিকেল সহায়তাসহ সব ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।"

আবহাওয়া দপ্তর বলেছে, ফণীর প্রভাবে সারাদেশেই বৃষ্টি হচ্ছে। এটি উড়িষ্যায় আঘাত হেনে ভূমিতে উঠে যাওয়ার কারণে কিছুটা দুর্বল হতে পারে। প্রথম আঘাতের সময় এর গতিবেগ ২১০কিলোমিটার পর্যন্ত ছিল। সেটা বাংলাদেশে এসে হয়তো ১০০কিলোমিটারের মধ্যে থাকবে।

আবহাওয়া দপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ বলছেন, ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মধ্যরাতে বাংলাদেশে আসার পর বাাকি রাত বাংলাদেশের ওপর থাকবে।

"ঘূর্ণিঝড়টি তো বিশাল আকৃতির। এর অগ্রভাগ থেকে বিভিন্ন ধরণের মেঘ ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ছুটে এসেছে। আর এই মেঘ ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ঘটিয়েছে।"

"রাতে সারা বাংলাদেশ এই ঘূর্ণিঝড়ের আওতায় এসে যাবে। এটি খুলনা, সাতক্ষীরা দিয়ে অতিক্রম করবে। দেশের উত্তরাঞ্চলের দিকেও যাচ্ছে। উত্তরে রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী-এসব অঞ্চলে ভারী বর্ষণ ঘটাবে। ভারী বর্ষণ ঘটিয়ে এটি আবার ভারতের মেঘালয়ের দিকে যাবে।"

আবহাওয়া দপ্তর আরও বলেছে, এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে শনিবার সারাদেশে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence