বাংলা একাডেমি পুরস্কার বিতর্ক: পদত্যাগ করলেন সাজ্জাদ শরিফ

সাজ্জাদ শরিফ
সাজ্জাদ শরিফ   © সংগৃহীত

পুরস্কার নিয়ে বিতর্কের মধ্যে এবার বাংলা একাডেমির নির্বাহী কমিটি থেকে সরে দাঁড়ালেন কবি ও সাংবাদিক সাজ্জাদ শরিফ। গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাজ্জাদ শরিফ বাংলা একাডেমির নবগঠিত নির্বাহী পরিষদে যুক্ত হয়েছিলেন। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) তিনি একাডেমির মহাপরিচালকের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। উল্লেখ্য, সাজ্জাদ শরিফ দৈনিক প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি সৃজনশীল লেখালেখিও করেন।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলা একাডেমি এবং একাডেমির মহাপরিচালক, নির্বাহী পরিষদের পদগুলোর মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ায় নৈতিক কারণে আমার পক্ষে এই পদে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। আমি পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছি।’

গত বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণার পর শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন তোলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। পুরস্কারে লেখকদের তালিকায় কোনো ‘নারী লেখক’ না থাকাকে ‘বিস্ময়কর’ বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা। এ পুরস্কারের জন্য ‘মনোনয়ন প্রক্রিয়া সংস্কারের সময় এসেছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এর পরদিন শনিবার ঘোষিত পুরস্কার স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানায় বাংলা একাডেমি। সংস্কৃতি উপদেষ্টা নিজেই পুরস্কার স্থগিতের খবর ফেইসবুক পোস্টে জানান। পুরস্কার স্থগিতে উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ রয়েছে বলে ফেইসবুকে লেখেন কেউ কেউ।

বিষয়টি নিয়ে পুরস্কারের জুরি সদস্যরাও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। জুরি সদস্য মোরশেদ শফিউল হাসান দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন মঙ্গলবার রাতে।

তিনি বলেন, সংস্কৃতি উপদেষ্টার পর পর দুটি ফেইসবুক পোস্ট পড়ার পর তিনি ‘আত্মসম্মান বোধ থেকে এবং নিজের বিচারবুদ্ধির ওপর আস্থা রেখে’ এই প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে পুরোপুরি সরিয়ে নিয়েছেন।

পুরস্কার স্থগিতের বিষয়ে বাংলা একাডেমির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল: ‘উদ্ভূত সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং পুরস্কার-তালিকাভুক্ত কারও কারও সম্পর্কে কিছু অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় পূর্বঘোষিত 'বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪'-এর পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন’ মনে করেছে একাডেমি।

কেন মনে করছেন বাংলা একাডেমির মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে– এ প্রশ্নে সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘আমি পদত্যাগপত্রে বিস্তারিত লিখেছি। কিন্তু এ বিষয়ে এখনই গণমাধ্যমে মন্তব্য করাটা সমীচীন হবে না।’

বুধবার মধ্যরাতে বাংলা একাডেমি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পুরস্কারের জন্য সাতজনের নতুন তালিকা ঘোষণা করে। সেখানে আগের দশ জনের তালিকা থেকে কথাসাহিত্যে সেলিম মোরশেদ, মুক্তিযুদ্ধে মোহাম্মদ হান্নান এবং শিশুসাহিত্যে ফারুক নওয়াজের নাম বাদ দেওয়া হয়।

নতুন তালিকা অনুযায়ী, এবার কবিতায় মাসুদ খান, নাটক ও নাট্যসাহিত্যে শুভাশিস সিনহা, প্রবন্ধ/গদ্যে সলিমুল্লাহ খান, অনুবাদে জি এইচ হাবীব, গবেষণায় মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া, বিজ্ঞানে রেজাউর রহমান, ফোকলোরে সৈয়দ জামিল আহমেদ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার দেওয়ার কথা রয়েছে।

যে তিনজনকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে কথাসাহিত্যিক সেলিম মোরশেদ রোববার রাতেই 'বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪' প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন।

আর পুরস্কারের জুরি সদস্য মোরশেদ শফিউল হাসান পুরস্কার সংক্রান্ত দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেন মঙ্গলবার রাতে। বছর আটেক আগে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছিলেন মোরশেদ শফিউল হাসান। তিনি বলেছেন, পুরস্কার নিয়ে সাম্প্রতিক নানা ঘটনায় এখন তিনি ‘গৌরবের পরিবর্তে বিব্রত’ বোধ করছেন।

সংস্কৃতি উপদেষ্টার ফেইসবুক পোস্টের প্রসঙ্গ টেনে মোরশেদ শফিউল হাসান বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে যেমন, সেভাবে এখন থেকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রদানের বেলায়ও লেখকের বিষয়ে গোয়েন্দা রিপোর্ট এবং তার অতীত রাজনৈতিক পরিচয় বা কার্যক্রম বিবেচনায় আনতে হবে, এমন ধারণা আমাদের কারো চিন্তায় আসেনি। আসা উচিত ছিল হয়ত!’

তিনি আরও বলেন, ‘সামাজিক মাধ্যমে সংস্কৃতি উপদেষ্টার পরপর দুটি পোস্ট পড়ার পরই প্রথম আমি এ বিষয়ে সচেতন হই এবং পুরস্কার পুনর্বিবেচনার কথা ওঠার পর আত্মসম্মানবোধ থেকে এবং নিজের বিচারবুদ্ধির ওপর আস্থা রেখে এই প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে পুরোপুরি সরিয়ে নিই।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence