নিকাব না খোলায় ছাত্রীকে পরীক্ষার হল থেকে বহিষ্কার, যা বলল শিবির

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের লোগো
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের লোগো  © সংগৃহীত

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) অধীনে সমাজতত্ত্ব-২ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী একজন অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রী নিকাব খুলতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে পরীক্ষার হল থেকে বহিষ্কার করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও সেক্রেটারি জেনারেল।

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সাদেক আব্দুল্লাহর সই করা এক যৌথ বিবৃতি পাঠানো হয়।

যৌথ বিবৃতি কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্দা পালনের কারণে একজন অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও উদ্বেগজনক।’

তারা আরও বলেন, ‘ইসলামী অনুশাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা আমাদের ধর্ম ও সাংবিধানিক অধিকার। একজন শিক্ষার্থী যদি পর্দা রক্ষা করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে চান, তাহলে তার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কিন্তু উল্টো তাকে অপমানিত ও হয়রানি করা হয়েছে, যা মানবাধিকার ও নৈতিকতার চরম লঙ্ঘন।’

ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘আমরা মনে করি এই ধরনের ঘটনা আমাদের সমাজের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও শিক্ষার নৈতিক পরিবেশের পরিপন্থী। এটি একদিকে যেমন একজন মুসলিম নারীর ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, অন্যদিকে তা সমাজে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার পরিবেশ তৈরি করতে পারে।’

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সব শিক্ষার্থীর ধর্মীয় অধিকার রক্ষা নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই।’

এর আগে শনিবার ফেসবুকে নিজের আইডিতে এক পোস্টে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী উম্মে আন্জুমানয়ারা। তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) ২০২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। পোস্টে তিনি মাটিরাঙা সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও পরীক্ষার কেন্দ্র সচিব কামাল হোসেন মজুমদারকে দায়ী করেছেন।

ফেসবুক পোস্টে আন্জুমানয়ারা লেখেন, ‘শুক্রবার বেলা ২টার দিকে পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই কলেজের শিক্ষকরা আমার নেকাব খুলে মুখ দেখানোর জন্য বলেন। একজন নারী শিক্ষক বা নারী শিক্ষার্থীর সামনে নেকাব খোলার ইচ্ছে পোষণ করে শিক্ষকদের অনুরোধ করি। কিন্তু শিক্ষকরা আমার অনুরোধে সায় দেয়নি। বরং আমাকে হেনস্তা করার চেষ্টা করছিল। এ সময় হলের অন্য শিক্ষার্থীরা আমার পরিচয় নিশ্চিত করে। তারপরও অধ্যক্ষ এসে আমাকে নেকাব খোলার জন্য বলেন। আমি রাজি না হওয়ায় আমার পরীক্ষার খাতা নিয়ে নেয় এবং বহিষ্কার করা হবে হুমকি দেন অধ্যক্ষ। পুলিশ ডেকে আমাকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেয়। পরে আমি পুলিশের হেল্প লাইন ৯৯৯ এ ফোন করি। এর পর মাটিরাঙা থানা থেকে পুলিশ আসে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ ৩টা ৫৫ মিনিটের দিকে আমার পরীক্ষা কেন্দ্রে আসে। তখনো ১ ঘণ্টার বেশি পরীক্ষার সময় ছিল। এ সময় অধ্যক্ষ পুলিশ নিয়ে তার কক্ষে চলে যায়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১০ থেকে ২০ মিনিট আগে অধ্যক্ষ তার রুম থেকে বের হয়ে মহিলা পুলিশ দিয়ে আমার পরিচয় নিশ্চিত করেন। ততক্ষণে আমার পরীক্ষার সময় শেষ।’

ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি কোনো অসদুপায় অবলম্বন করি নাই, খারাপ ব্যবহারও করিনি। তারপরও আমার সাথে অন্যায় হয়েছে। আমি পরীক্ষা দিতে পারি নাই। আমি এর প্রতিকার চাই।’

এ বিষয়ে মাটিরাঙা সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামাল হোসেন মজুমদার বলেন, ‘বিধি অনুযায়ী প্রবেশপত্রে যে ছবি তা দেখে পরীক্ষা নিতে হবে। হলের শিক্ষকরা তাকে অনুরোধ করে নেকাব খোলার জন্য। পরে আমি পুলিশকে মহিলা পুলিশ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেও সেভাবে রেসপন্স পাইনি। পরে ওই শিক্ষার্থী ৯৯৯-এ ফোন করায় মহিলা পুলিশ আসে। শেষ মুহূর্তে মহিলা পুলিশ এসে তার পরিচয় নিশ্চিত করে। তবে কেউ যদি আমাকে ফাঁসাতে চায়, তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমাকে বদলি করলে আমি চলে যেতে এক পায়ে রাজি।’


সর্বশেষ সংবাদ