ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা হারাবেন চাকরি, ফেরত নেওয়া হবে ভাতাও

  © সংগৃহীত

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকরি নিয়ে কর্মরতদের তালিকা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৮৪ হাজার ৫৬ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, এর মধ্যে বেশ কিছু ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আছেন। তারা জাল সনদ তৈরি করে চাকরি নিয়েছেন। তাদের চাকরি থেকে বাদ দিতে তালিকা করছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আজকের পত্রিকা।

এ ছাড়া সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধার ভাতাভোগীদের মধ্যে কাদের সনদ ভুয়া, সে তালিকাও করা হচ্ছে। ভাতা হিসেবে তারা যে টাকা পেয়েছেন, সেই অর্থ ফেরত নেওয়া হবে। যাদের বিরুদ্ধে ভুয়া সনদে চাকরি নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী বলেন, ‘ভুয়া সনদে যারা চাকরি নিয়েছেন, তাদের শাস্তি হতেই হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং যেসব মন্ত্রণালয়ের অধীনে চাকরি নিয়েছেন, সেসব মন্ত্রণালয়কে জানাব। বিধিগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে। ভুয়া সনদ তৈরি করে যারা আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন, তা ফেরত নেওয়া হবে।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম গত আগস্টে মুক্তিযোদ্ধা কোটার চাকরিধারীদের তালিকা করার নির্দেশনা দেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিরতদের তথ্য জানাতে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি দেয়।

আরও পড়ুন: ১২ বছর নিম্নমানের বই ছেপে ৩ হাজার কোটি টাকা লোপাট!

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে পাঠানো তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকরি নিয়ে কর্মরত আছেন ৮৪ হাজার ৫৬ হাজার জন। তবে দু-একটি দপ্তর থেকে এখনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সেসব তথ্য আসার পর এ সংখ্যা কিছুটা বাড়তে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আসা তালিকার অর্ধেক যাচাই করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকের মুক্তিযোদ্ধার সনদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত কতজনের সনদ পাওয়া যায়নি, সে সংখ্যা আলাদা করা হয়নি। সব তালিকা যাচাইয়ের পর এসব তথ্য আলাদা করা হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) বিভাগ তাদের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫৬ জন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিতে থাকার তালিকা দিয়েছে। তাদের মধ্যে ছয়জনের সনদের তথ্য পায়নি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। বেশ কয়েকজনের সনদে থাকা নামে ভুল এবং কয়েকজনের নাম সনদে পাওয়া গেলেও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে (এমআইএস) পাওয়া যায়নি।

গত জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি সংশোধনের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে সরকার কোটাপদ্ধতি সংশোধন করলেও পরে তা সরকার পতনের ১ দফার আন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন: আগামী নির্বাচনে কি অংশ নেবেন ড. ইউনূস?

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর সরকারি চাকরিতে এখন মেধায় ৯৩ শতাংশ; মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা রয়েছে।

গত ২৩ জুলাই কোটাপদ্ধতি সংশোধনের আগে মুক্তিযোদ্ধার পোষ্যদের জন্য ৩০ শতাংশসহ ৫৬ শতাংশ কোটাধারীদের জন্য বরাদ্দ ছিল। তবে কখনই সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার পোষ্যরা ১০ শতাংশের বেশি নিয়োজিত ছিলেন না বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, সরকারি চাকরিতে বেসামরিক প্রশাসনে এখন ১৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৮ জন কর্মরত। তাদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নিয়ে কর্মরত ৮৪ হাজার ৫৬ জন। এ হিসাবে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ কর্মচারী মুক্তিযোদ্ধা কোটার।

যেভাবে হচ্ছে তালিকা
মুক্তিযোদ্ধাদের সব ধরনের তালিকা যাচাই করে ২ লাখ ৬ হাজার ৫১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার বিস্তারিত তথ্য সমন্বিত তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। কয়েকজনের আপিল আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়ায় সমন্বিত তালিকায় আরও কিছু নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তাদের মধ্যে যাদের নাম এমআইএসে রয়েছে, তারা ভাতা পাচ্ছেন।

এক কর্মকর্তা বলেন, কোটায় নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে যাদের নাম কোনো তালিকাতেই নেই, তাদের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ফেলা হচ্ছে। যাদের নাম সমন্বিত তালিকায় নেই; কিন্তু এমআইএসে আছে, সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এমনও হতে পারে, সনদ বাতিল হওয়ার পর এমআইএসে তথ্য হালনাগাদ করা হয়নি।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে সব থেকে বেশি চাকরিতে কর্মরত। এরপর কোটায় পুলিশে চাকরি নেওয়ার সংখ্যা বেশি। এখন পর্যন্ত ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদে ব্যাংকে চাকরি নেওয়ার সংখ্যা বেশি পাওয়া গেছে, তারপর পুলিশে। সব তালিকা যাচাই শেষে এসব বিষয়ে নির্দিষ্ট করে বলা যাবে।’

আরও পড়ুন: ভারতীয় সব চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধে রিট শুনবেন হাইকোর্ট

কর্মকর্তারা জানান, আগে মুক্তিযোদ্ধাদের সনদে নিরাপত্তামূলক বৈশিষ্ট্য যুক্ত না থাকায় অনেকেই এ সনদ বানিয়ে সুবিধা নিয়েছেন। রাজনৈতিক বিবেচনায়ও অনেককে মুক্তিযোদ্ধার সনদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সব তালিকা যাচাই করে সমন্বিত তালিকায় যাদের নাম রয়েছে, তারাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। সমন্বিত তালিকায় যাদের নাম নেই এবং তাদের আপিল আবেদন নিষ্পত্তি হয়ে থাকলে তাদের আর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে না। সমন্বিত তালিকায় নাম থাকার পর এমআইএসে নাম না থাকলেও তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বর্তমান ডিজিটাল সনদে ১৪টি নিরাপত্তামূলক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের এমবসড মনোগ্রাম, অদৃশ্য আলট্রাভায়োলেট কালি, জাতীয় স্মৃতিসৌধের ডিজিটাল জলছাপ, এমআইএস নম্বর, ঘোস্ট ইমেজে বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচিতি নম্বরের ১১ ডিজিট এবং মন্ত্রী ও সচিবের সই। বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করে এ সনদ যাচাই করা যাবে।

তালিকা যাচাইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা বলেন, তালিকা যাচাই করার পর নির্ধারিত ফরম্যাটে তা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টাকে দেওয়া হবে। ভুয়া সনদ দেখিয়ে চাকরি নেওয়া কর্মচারীদের চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার পাশাপাশি তাদের দেওয়া বেতন-ভাতা ফেরত চাওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence