সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ, জনমনে স্বস্তি

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উচ্ছেদ করা হয়
অবৈধ দোকান
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উচ্ছেদ করা হয় অবৈধ দোকান  © টিডিসি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা ভাসমান অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে কমেছে জনাকীর্ণতা, প্রাণ ফিরে পেয়েছে উদ্যানটি। প্রশাসনের এমন উদ্যোগে খুশি ছাত্র-জনতা।

রোববার (১৭ নভেম্বর) গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল ভ্রাম্যমাণ দল এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। এর আগে গত শুক্র ও শনিবার মাইকিং করে এ উচ্ছেদের ঘোষণা দেওয়া হয়।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবৈধ দোকান ছিল ১৬৪টি। এ সংখ্যা প্রতিদিন চাঁদার ওপর নির্ভর করে কমবেশি হতো। এর মধ্যে সিগারেট ও চায়ের দোকান ২৪টি, শিঙাড়া ও চপের ১৪, ফুচকা ৩০, কাবাব ৭, আইসক্রিম ১৫, সাজসজ্জাসহ বিভিন্ন প্রসাধনী ২৯, শরবত ১৫, পিঠা ৫, চিকেন মমো ১৯, কাপড় ২, আচার ৭ ও দইয়ের দোকান ছিল ৩টি।

পতিত শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত এ উদ্যানে চাঁদাবাজি, মাদক ও অবৈধ দোকান পরিচালনা করতেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

Sorawardi uddan Inner-2

অবৈধ দোকান উচ্ছেদের পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

পড়ন্ত বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসত অবৈধ দোকান। চলত বেচাকেনা ও মাদক কারবারি। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসে এ বিষয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সম্প্রতি শাহবাগ থানার নতুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এ বিষয়ে অবগত করার পর তিনি এক সপ্তাহের মধ্যে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে উদ্যানে নতুন পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন।

অবশেষে রবিবার পূর্বঘোষণা অনুযায়ী উদ্যানের দুই শতাধিক অবৈধ দোকান উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। এতে জনমনে স্বস্তি এসেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আজিজুল হক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এটি একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এটা বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বপ্নের ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার দ্বার উন্মোচিত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। একটু একটু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠুক আমাদের স্বপ্নের ক্যাম্পাস। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে সারাদেশের মাদক সরবরাহের কেন্দ্র বলা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা প্রতিষ্ঠানের পাশে এভাবে অবাধে মাদক ব্যবসা, সেবন, আদান-প্রদান একেবারেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। এ ছাড়া উদ্যান চরম একটা রিস্কি জায়গা। ছিনতাই যেন নিত্যদিনের ঘটনা।  আশা করি এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে প্রসাশন। শুধু উচ্ছেদ করলেই হবে না, নিয়মিত এর তদারকি করতে হবে।’

আরও পড়ুন: ঢাবি ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোন ইউনিটে কত আবেদন পড়ল

মাস্টারদা সূর্য সেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রিয়াজ উদ্দীন সাকিব দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আর উদ্যান পাশাপাশি হওয়ায় মূলত উদ্যান আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মধ্যে আসা-যাওয়াটা সহজ।  উদ্যানের ভেতরে ফাস্ট ফুড, বাচ্চাদের খেলনার দোকান, কসমেটিকসসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান থাকায় সেখানে সাধারণত ছুটির দিনগুলোয় আশপাশের লোকজন আসে। উদ্যানের টিএসসিমুখী গেট খোলা থাকার কারণে উদ্যানে আসা দর্শনার্থীদের মোটামুটি সবাই বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে আসা-যাওয়া করে। তারা আবার ক্যাম্পাস এরিয়াতেও আসে। ফলে দেখা যায়, যে ছুটির দিনগুলোয় ক্যাম্পাস আর ক্যাম্পাস থাকে না, মনে হয় না যেন কোনো পার্ক! এ ছাড়া উদ্যানে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদকসেবনসহ নানান ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপ হয়, যেগুলোর প্রভাব ক্যাম্পাসেও চলে আসে অনেক সময়।’

সাকিব আরও বলেন, ‘উদ্যানের এই গেট বন্ধ হওয়ায় আশা করি এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা তুলনামূলক সহজ হবে। ক্যাম্পাসে বহিরাগত নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে ছুটির দিনগুলোয় ক্যাম্পাসে যে যানবাহন ও বহিরাগতদের অতিরিক্ত চাপ পড়ে, সেটাও নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামিম আক্তার শুভ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর ঢাবি ছাত্রলীগের সিন্ডিকেট মাস্টারমাইন্ড তানভীর হাসান সৈকত এসব ভাসমান দোকান, মাদক কারবারিদের দিয়ে উদ্যানের সুস্থ পরিবেশ বিনষ্ট করেছে। জুলাই-পরবর্তী ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে পুলিশ প্রশাসন ও ঢাবি কর্তৃপক্ষের এ রকম সিদ্ধান্তকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। আশা করছি ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ও সার্বিক শৃঙ্খলার জন্য এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’

Sorawardi uddan Inner

অবৈধ দোকান উচ্ছেদের পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রায়ই ঘুরতে আসেন আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, উচ্ছেদের আগে টিএসসি-সংলগ্ন অংশে অনেক দোকান ছিল। লোকজনের ভিড় লেগেই থাকত। উচ্ছেদের পর এখন স্বস্তি হাঁটা যাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মূলত গণপূর্ত অধিদপ্তরের মালিকানাধীন। এটির অভ্যন্তরে অবৈধ দোকানপাট ও হকারদের কারণে আগত বহিরাগতদের চাপ ও ঝামেলা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভোগ করতে হয়। সেই জায়গা থেকে এসব অবৈধ দোকানপাট উৎখাতের জন্য আমরা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে চিঠি দিয়েছিলাম এবং তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। এ পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ কমিশনার একটি আইনশৃঙ্খলা কমিটি করে দেন। তখন পুলিশ গণপূর্ত অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানানোর পরামর্শ দিলে, আমরা তা বাস্তবায়ন করি। গত শুক্র ও শনিবার এসব অবৈধ দোকানপাট তুলে নেওয়ার জন্য মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হয়।’

সাইফুদ্দীন আহমদ আরও বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এসব অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হয়। এরপর গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের তত্ত্বাবধানে টিএসসি-সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গেটে তালা দিয়ে তা বন্ধ করে দেয়া হয়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence