‘আগে ছাত্র সংসদ, পরে অন্য নির্বাচন’
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০২ AM , আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৬ AM
জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন করার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংসদ কার্যকর করার পক্ষে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে কাজও করছেন তারা। অচলায়তন ভেঙে ছাত্র সংসদ কার্যকর হলে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরবে বলে মনে করেন ছাত্রনেতারা। ছাত্র সংসদ কার্যকর না থাকায় নিজেদের দাবি-দাওয়ার বিষয় তুলে ধরার মতো শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম ছিল না এত দিন। আবার ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নানা ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন চালাতো।
হল দখল, টেন্ডার বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, মাদকের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অপরাধের স্বর্গরাজ্যে রূপ দিয়েছিল তারা। তবে দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়েছে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর। এখন ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র সংগঠনের একচ্ছত্র আধিপত্য নেই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরেছে ক্যাম্পাসগুলোতে।
গত বুধবার তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, যেকোনো জাতীয় বা অন্য কোনো নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করবে। ছাত্রদের রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে আমাদের সর্বপ্রথম কর্তব্য।
আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তই থাকছে সাত কলেজ, তবে...
তিনি বলেন, ছাত্ররা দেশের ভালো চায় এবং দেশকে পুনর্গঠন করতে চায়। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তা তারা কামনা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতি সংস্কার করার দাবি প্রবলভাবে উঠেছে। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলই সেটি অ্যাড্রেস করছে না।
ছাত্রদের অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের কথা রাজনৈতিক দলগুলো যতবার বলেছে, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কথা তারা একবারের জন্যও বলিনি। আন্দোলনটা কিন্তু ছাত্ররা শুরু করেছিল, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুরু করেছিল। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে আমাদের ভাবনা কী, রাজনৈতিক দলগুলোর ভাবনা কী, সেই কথা কেউ বলছে না। ছাত্ররা নেতৃত্ব দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে।
মূলত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই ছাত্র আন্দোলনকে কার্যকরের আলোচনা চলছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারেও ছাত্রদের প্রভাব রয়েছে। সরকারও চায় ছাত্র সংসদ কার্যকর হোক। সরকার গঠনের পর ছাত্রদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার এক বৈঠকেও বিষয়টি উঠে আসে। সেখানে ছাত্ররা ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের মনোভাব জানতে চান। এ সময় শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নতুন প্রশাসনকে ছাত্র সংসদ কার্যকর করার ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, বলেন তিনি।
প্রায় তিন দশক পর ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের প্রশাসন ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়। এরপর আবার অচলায়তন শুরু হয় ছাত্র সংসদ নিয়ে। আজ পর্যন্ত আর ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজেও একই অবস্থা। সেখানে নির্বাচন নেই কয়েক দশক ধরে।
আরও পড়ুন: ঢাবির বিশেষ মাইগ্রেশন ফল প্রকাশ, বিষয় মনোনয়ন পেলেন কতজন?
তবে নতুন বাংলাদেশে ছাত্র সংসদ কার্যকরের দাবি জোরালো হচ্ছে। দলীয় লেজুড়ভিত্তিক রাজনীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে তারা। সেই ক্ষেত্রে ছাত্র সংসদ কার্যকর হওয়াকেই একমাত্র সমাধান মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। সরকারও ছাত্র সংসদ কার্যকর করতে আগ্রহী। এ অবস্থায় ছাত্র আন্দোলন থেকে আসা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একজন উপদেষ্টা ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জানান, সরকার জাতীয় ও অন্য কোনো নির্বাচনের আগে ছাত্র সংসদ কার্যকর করবে। এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি গুরুত্ব পেয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ সম্প্রতি একটি জরিপ চালায় ছাত্ররাজনীতি নিয়ে। সেখানে ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন দলীয় ছাত্ররাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে ৮৩ দশমিক ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্ররাজনীতিকে ‘একেবারেই নিষিদ্ধ’ রূপে প্রত্যাশা করেছেন। সংস্কারকৃতরূপে বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতি প্রত্যাশা করেছেন মাত্র ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ ৪টি সুপারিশ করে। যেখানে ডাকসু পুনরুজ্জীবিত ও সংস্কারেরও সুপারিশ করা হয়।
শিক্ষার্থীরা মনে করেন, ছাত্র সংসদ কার্যকর হলে তাদের অধিকার নিশ্চিত হবে। তাই এটি কার্যকরই একমাত্র পথ। এদিকে ২৯ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতর শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি বন্ধ করার দাবি ওঠে। সেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন করার পরামর্শ দেওয়া হয়।