জনগণ আগের অবস্থায় ফিরে যেতে চায় না: ড. ইউনূস

সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস  © সংগৃহীত

‘অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কত দিন হবে, তা নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। কেউ বলছে, দ্রুত নির্বাচন দেওয়া উচিত। কেউ বলছে, সংস্কার শেষ করার পরই নির্বাচন হওয়া উচিত। তবে জনগণ আগের মতো অবস্থায় ফিরে যেতে চায় না, তারা পরিবর্তন চায়।’

মার্কিন পাবলিক ব্রডকাস্টিং সংস্থা এনপিআরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এসব কথা বলেন।

গত সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ড. ইউনূস এনপিআরের মর্নিং এডিশনে মিশেল মার্টিনকে সাক্ষাৎকার দেন। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এ সাক্ষাৎকার প্রচার করে এনপিআর।

নির্বাচন আয়োজন নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘কেউ কেউ বলছে যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার করার জন্য। না হয় আপনি (ড. ইউনূস) যত দেরি করবেন, তত অজনপ্রিয় হয়ে পড়বেন; সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাবে। আবার কেউ কেউ বলছে, না, আপনাকে অবশ্যই এই সংস্কার শেষ করতে হবে। তাই আপনাকে এই দীর্ঘ সময় থাকতে হবে। কারণ সবকিছুর সংস্কার না করে আমরা বাংলাদেশ ২.০-তে যেতে চাই না। তাই এই বিতর্ক চলছে।’

আরও পড়ুন: যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার কাজ শেষে নির্বাচন: ড. ইউনূস

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা পুরোনো অবস্থায় ফিরে যেতে চাই না। তাহলে এত প্রাণ দেওয়ার মানে কী দাঁড়াল! এর কোনো মানে হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ জাতি সবচেয়ে বড় একটি সুযোগ পেয়েছে। এর আগে কখনোই সব মানুষ একটি বিষয়ে এতটা ঐক্যবদ্ধ হয়নি যে আমাদের পরিবর্তন দরকার।’

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত। তাই এটা আলাদা করা যাবে না যে তারা শেখ হাসিনার অনুসারী হওয়ার কারণে নাকি হিন্দু হওয়ার কারণে আক্রান্ত হয়েছেন।’

প্রতিশোধপরায়ণতার মানসিকতার বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘প্রতিশোধ নেওয়ার ঘটনাটি মাত্র সপ্তাহ দুয়েকের মতো হয়তো ছিল। এরপর স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে শুরু করে। তাই আমরা দেশ চালাচ্ছি। কিন্তু বিক্ষোভ আছে, প্রতিশোধমূলক বিক্ষোভ নয়। বেশির ভাগ বিক্ষোভ তাদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে, তাদের চাকরির দাবিতে, যাদের সরকার আগে বরখাস্ত করেছিল।

‘তারা বলেছিল, অতীতের সরকার আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে এবং আমরা বিনা কারণে আমাদের চাকরি হারিয়েছি। কারণ আমরা অন্য রাজনৈতিক দলের সদস্য। তাই বঞ্চিতরা সবাই তাদের দাবি মেটানোর চেষ্টা করছে। আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করে বলেছি, এগুলো আপনাদের ১৫ বছরের ক্ষোভ। আমরা ১৫ দিনের মধ্যে এটি সমাধান করতে পারি না। আমাদের কিছু সময় দিন, যাতে আমরা ফিরে যেতে পারি।’ যোগ করে বলেন তিনি।

আরও পড়ুন: সাবেক সেনাপ্রধানসহ তিন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ

সেনাবাহিনী বলেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ১৮ মাস শাসন করতে, এ বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘জনগণ এই সংখ্যাগুলো বিবেচনা করছে না। কত মাস, কত বছর তাদের প্রয়োজন মনে হয়। কেউ কেউ বলে যে এটি দ্রুত করা উচিত, কারণ আপনি যদি দীর্ঘায়িত করেন আপনি অজনপ্রিয় হবেন এবং সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাবে। কেউ কেউ বলেন যে না, আপনাকে সংস্কার শেষ করতে হবে। সুতরাং আপনি দীর্ঘ সময় ধরে থাকুন। কারণ আমরা সবকিছু ঠিক না করে বাংলাদেশ ২.০-এ যেতে চাই না। তাই এই নিয়ে বিতর্ক চলছে।’

এটি চ্যালেঞ্জিং কিন্তু উত্তেজনাপূর্ণ, ব্যাখ্যা দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। এই জাতি সবচেয়ে বড় সুযোগ পেয়েছে। মানুষ ও দেশ একটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ, আমাদের পরিবর্তন দরকার।’


সর্বশেষ সংবাদ