নিপাহ ভাইরাস ছড়িয়েছে আরও এক জেলায়, চার বিপদের শঙ্কা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:৩৯ PM , আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২৫, ১২:৫০ PM
দেশে নিপাহ ভাইরাসের বিস্তার নিয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। সংস্থাটির দেওয়া তথ্য বলছে, বাংলাদেশে দুই দশকের বেশি সময় ধরে যতজন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৭১ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে। এ বছর (মার্চ মাস পর্যন্ত) দেশে ১৪ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১০ জনই মারা গেছেন।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০০১ সাল থেকে দেশে এ পর্যন্ত ৩৩৯ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২৪০ জন মারা গেছেন। বাংলাদেশে ২০০১ সালে মেহেরপুর জেলায় নিপাহ ভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব চিহ্নিত হয়।
দেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঘটলেও এ নিয়ে সচেতনতা কম। বিশেষজ্ঞরা খেজুরের রস একেবারে না খাওয়াটাই যেখানে বাঁচার উপায় হিসেবে দেখলেও বাস্তবে রীতিমতো উৎসব করে রস খাওয়ার আয়োজন করছে নানা প্রতিষ্ঠান।
অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার তো আছেই। একে নিপাহ ভাইরাস ছড়ানোর একটি বিপদ হিসেবে দেখছেন তারা। এছাড়াও বিশেষজ্ঞরা এর সঙ্গে আরও অন্তত তিন বিপদ হিসেবে দেখছেন এবার শিশু-কিশোরদের বেশি আক্রান্ত হওয়া, মায়ের বুকের দুধে নিপাহ ভাইরাসের উপস্থিতি এবং নতুন একটি জেলায় এই ভাইরাস শনাক্ত হওয়া মতো বিষয়গুলো।
আরও পড়ুন: নিপাহ ভাইরাসের কারণে ভারতের এক জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলছেন, ২০০১ সালের পর প্রতিবছরই বাংলাদেশে এই রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। এই রোগে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুহার প্রায় ৭০ শতাংশ।
তিনি বলেন, টাঙ্গাইলে ২০০৫ সালে গবেষণায় আমরা দেখেছি, খেজুরের কাঁচা রস থেকে নিপাহ ভাইরাস মানুষে সংক্রমিত হয়। বাদুড়ের মুখের লালা বা বাদুড়ের মলমূত্র দ্বারা দূষিত হয় তালের রস বা তাড়ি। বাদুড়ের আংশিক খাওয়া ফল মানুষ খেলেও নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। বাংলাদেশে গবেষণা থেকে প্রমাণ পাওয়া গেছে, মানুষ থেকে মানুষে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও ভাইরাস বিশেষজ্ঞ নজরুল ইসলাম বলেন, বাদুড়ের লালা এবং প্রস্রাব রস সংগ্রহকালে এতে পড়ে। মশারি বা জাল দিয়ে এর সুরক্ষা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়।
জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন বলছিলেন, এবার নরসিংদী জেলায় নিপাহ ভাইরাসের রোগী পাওয়ার অর্থ হলো এ ভাইরাস এখন দেশের অন্য এলাকায় বিস্তৃত হয়ে পড়ছে। এটা একটা বিপদ। এখন দরকার এ বিস্তৃতি রোধ করা।
এবার নিপাহ ভাইরাস নতুন একটি জেলায় ছড়িয়েছে। জেলাটি হলো ঢাকার কাছের নরসিংদী। নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ এযাবৎ বেশি দেখা গেছে দেশের উত্তরের জেলা রাজশাহী, পাবনা, নাটোর, নওগাঁ; ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও শরীয়তপুর জেলায়।
আরও পড়ুন: ২৮ জেলায় ছড়িয়েছে নিপাহ ভাইরাস, নেই চিকিৎসাও
আইইডিসিআরের গবেষণার তথ্য বলছে, চলতি বছর দেশে একজন প্রসূতির বুকের দুধে নিপাহ ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ওই মায়ের সন্তানের পরে মৃত্যু ঘটে। বুকের দুধে নিপাহ ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া সারা বিশ্বে একটি বিরল ঘটনা বলে জানান অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন।
এখন খেজুরের রস নিয়ে এমন অবস্থায় জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, খেজুরের গুড় তৈরিই সঠিক উপায়। এতে ক্ষতি নেই। অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, রসের গুড় তৈরি হোক। এর চাহিদাও আছে যথেষ্ট। কিন্তু কোনোক্রমেই কাঁচা রস খাওয়া যাবে না।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, নিপাহ ভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকতে খেজুরের কাঁচা রস পান একেবারে বন্ধ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। অনেকেই মনে করেন, রস গরম করে খেলে বিপদ কাটবে। কিন্তু তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন। তিনি বলেন, নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য কোনোক্রমেই খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া যাবে না।
এছাড়াও যেকোনো ফল ভালো করে ধুয়ে খেতে হবে। গাছের নিচে পড়ে থাকা আধা খাওয়া কিংবা ফাটা ফল খাওয়া যাবে না। বিশেষ করে শিশুদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকার পাশাপাশি রস বিক্রিতে বিজ্ঞাপন না দেওয়া এবং বিক্রি রোধ করতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নেওয়া দরকার বলেও মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।
এ নিয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (আইন ও নীতি) আবু নূর মো. শামসুজ্জামান জানান, খেজুরের রস থেকে নিপাহ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ আছে। দেশের যে-সব অঞ্চলে খেজুরের রস বেশি পাওয়া যায় সেখান থেকে এনে পরীক্ষা করে পরে কী করা যায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেব। আইইডিসিআরের তথ্যগুলো আমলে নিয়ে আমরা কাজ করতে চান বলেও জানান তিনি।