বিল না পেয়ে প্রকৌশলীকে ছাত্রলীগ কর্মীদের মারধর
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৩, ১২:৫৭ AM , আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৩, ১২:৫৭ AM
বাগেরহাট জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফকে তাঁর কার্যালয় থেকে তুলে নিয়ে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় বাধা দিতে গিয়ে দায়িত্বরত এক আনসার সদস্যসহ দু’জনও মারধরের শিকার হয়েছেন। আহত আনসার সদস্য নিত্যানন্দকে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বাগেরহাট পাউবো সূত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার রাতে শহরের মদনের মাঠ সংলগ্ন কার্যালয়ে ছিলেন উপসহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফ। এ সময় চারটি মোটরসাইকেলে দশজন লোক আসে। বকেয়া বিল না দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে গালাগালি করতে থাকে তারা। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মনির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সরদার নাহিয়ান আল সুলতান ওশান ডেকেছে বলে তাদের সঙ্গে যেতে বলে। প্রকৌশলী আবু হানিফ রাজি না হলে তুলে নিয়ে যেতে থাকে। এ সময় আনসার সদস্য নিত্যানন্দ বাধা দিতে গেলে তাঁর নাক-মুখ ফাটিয়ে দেয় তারা। গেট অপারেটর নাইমকেও মারধর করে।
আবু হানিফকে উঠিয়ে নিয়ে শহর রক্ষাবাঁধ সংলগ্ন বটতলায় নিয়ে যায় তারা। সেখানে ছাত্রলীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। একটি কাজের বিল না দেওয়ার অভিযোগে আবু হানিফকে তাঁরা লাঞ্ছিত করেন। খবর পেয়ে পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের জানান। ঘণ্টাখানেক পরে আবু হানিফকে ছেড়ে দেয় অভিযুক্তরা।
বাগেরহাট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, রাত ৯টার কিছু পরে একে একে চারটি মোটরসাইকেলে করে দশজন কার্যালয়ের সামনে আসে। ভেতরে প্রবেশ করে প্রকৌশলী আবু হানিফকে তারা খুঁজতে থাকে। না পেয়ে উপস্থিত অন্যদের গালাগালি ও হুমকি দেয়। সিসিটিভি ফুটেজে চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে রাতেই বাগেরহাট মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উপসহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফ। তবে অভিযোগে কারও নাম উল্লেখ করেননি। অন্ধকারে কাউকে চিনতে পারেননি বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
উপসহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফ বলেন, কাজের চাপ থাকায় অফিসে বসে কাজ করছিলাম। এ সময় কয়েকজন ছেলে এসে আমাকে তাদের সঙ্গে যেতে বলে। রাজি না হলে মারধর করে জোর করে নিয়ে যায়। ঠেকাতে গেলে অফিসের আনসার নিত্যানন্দ ও গেট অপারেটর নাইমকেও মারধর করে। আমাকে নিয়ে শহর রক্ষাবাঁধের বটতলায় ঘণ্টাখানেক আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের মতো করে। তারা আমাকে লাঞ্ছিত করেছে, গায়েও হাত তুলেছে। তাদের ঠিকাদারি কাজের বিল আটকে রেখেছি কেন তা জানতে চায়। কিন্তু কোন কাজ বা কিসের বিল এইটা আমি সঠিক জানি না।
বাগেরহাট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, রাত ৯টার দিকে ছাত্রলীগ নামধারী ৮ থেকে ১০ জন মোটরসাইকেল নিয়ে ঢুকে আমার অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফকে মারধর করেছে। পরে ধরে নিয়ে যায়। এ সময় এক আনসার সদস্যকেও মারধর করে নাক ভেঙে দেয়। সে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি। গেট অপারেটরকেও মেরেছে তারা। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় প্রশাসনকে জানালে একপর্যায়ে আবু হানিফকে ছেড়ে দেয় তারা। আমরা এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছি। সিসিটিভি ফুটেজে দোষীদের সহজেই চিহ্নিত করা যাবে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনির ও সাধারণ সম্পাদক ওশানের কথা বলে হামলাকারীরা ধরে নিয়ে যায়। তাদের ঠিকাদারি কাজের বিল নাকি বাকি রয়েছে। কিন্তু প্রকৌশলী আবু হানিফ তো বিল দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। তারা আমার কাছে আসতে পারত, অভিযোগ থাকলে বলতে পারত। ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশনা ও আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার নাহিয়ান আল সুলতান ওশান বলেন, যে প্রকৌশলী অভিযোগ দিয়েছেন তাঁর সঙ্গে আমাদের কিছু লেনদেন ছিল। কয়েক দিন আগে তিনি আমাদের কাছে একটা বড় অঙ্কের টাকা ঘুষ দাবি করেন। আমরা ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায়, তিনি আমাদের বিলটি আটকে দেন। তাঁদের যদি কোনো ঠিকাদার ঘুষ না দেয়, তাহলে তাঁরা বিল আটকে দেন। এর সঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলীও জড়িত।
বুধবার রাতের ঘটনার বিষয়ে এ ছাত্রলীগ নেতা বলেন, গতকাল তাঁকে ডেকে শুধু কথা বলা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনই তাঁকে নিয়ে গেছে। তাঁকে মারধর করা হয়নি। জোর করে আনা হয়নি, জোর করে আনলে তিনি তো ৯৯৯ বা পুলিশের সহযোগিতা নিতে পারতেন।’
বাগেরহাট জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের সমন্বয়কারী পুলিশ পরিদর্শক বাবুল আক্তার বলেন, প্রকৌশলীকে মারধর করা হয়েছে এমন একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।