‘ফটোশপে এডিট করে পাঠ্যবই নিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে’
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৩৬ PM , আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:০১ PM
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আমাদের বইতে নেই এমন কল্পিত বিষয় ও ছবি নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা হচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রমের কয়েকটি পাঠ্যবই নিয়ে নানারকম বিতর্ক, নানারকম প্রচারণা আমরা শুনছি। ভুয়া ও আপত্তিকর কনটেন্ট আমাদের বইয়ে রয়েছে বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
প্রচারণাগুলোর সিংহভাই অসত্য, অপপ্রচার জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, বিভিন্ন ধরনের ছবি, বইয়ের ছবি, ফটোশপ করে সেগুলো নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বিভিন্ন বইয়ে লেখা এডিট করে।
ডা. দীপু মনি বলেন, অপপ্রচার চালানো হচ্ছে শিক্ষাক্রমের নয়, আমাদের বই নয়, যে বই আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ানো হয় না সেগুলোকে আমাদের বই বলে। ব্যক্তিগতভাবে কদর্য ভাষায় আক্রমণ করা হচ্ছে, হুমকি দেওয়া হচ্ছে লেখকদের। মন্ত্রী সম্পর্কে কদর্য বিবৃতি, হুমকি দেওয়া অব্যাহত রয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ বছরের বইগুলোতে লিখেই দেওয়া আছে পরীক্ষামূলক সংস্করণ। বই বিতরণের সময় আমিও বলেছি, অংশী-জনের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় যা কিছু পরিমার্জন দরকার তা করা হবে। যারা আক্রমণ করছেন তাদের কোনও প্রতিষ্ঠানে আমাদের এই শিক্ষাক্রমের বই কিন্তু পড়ানো হয় না। যাদের প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয় তাদের মতামত নিয়েই পরীক্ষামূলক সংস্করণগুলো তৈরি করা হয়েছে এবং প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের যৌক্তিক পরামর্শগুলো পাইলটিংয়ে সময় গ্রহণ করা হয়েছে। তার পরও যদি কোনও ভুল থাকে সেগুলো সংশোধন করা হচ্ছে এবং হবে।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের দুটো কমিটি কাজ করছে। একটি কমিটি সবার মতামত নিয়ে সুপারিশ করবে। কোথাও যদি ইচ্ছাকৃত বা গাফিলতির জন্য কিছু ঘটে থাকে তা চিহ্নিত করে দোষী ব্যক্তিদের কী শাস্তি দেওয়া যায় তারা আমাদের কাছে সুপারিশ করবে। বইয়ের কিছু ভুল যেগুলো চিহ্নিত হয়েছে তা ইতোমধ্যেই সংশোধন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যদি তাদের উদ্দেশ্য সৎ হতো তাহলে তারা গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে ভুল সংশোধনে আমাদের পরামর্শ দিতেন, মিথ্যাচার করতেন না। ফটোসপ করে, এডিট করে তারা এই মিথ্যাচার করা হতো না।
প্রসঙ্গত, নানা আলোচনা-সমালোচনার পর সরকার চলতি বছর পরীক্ষা-মূলকভাবে নতুন পাঠ্যক্রমে শিক্ষাক্রম শুরু করেছে। কিন্তু নতুন পাঠ্যক্রমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণসহ নানা কারণে এ আগে আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও চলতি আলোচনা পাঠ্যবইয়ের নানা অসঙ্গতি নিয়ে। পহেলা জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার পর ভুলের বিষয়টি নজরে আসলে খোদ পাঠ্যপুস্তক সম্পাদনা কমিটির পক্ষ থেকেই বিবৃতিতে নানা অসঙ্গতির কথা স্বীকার করে জানানো হয়েছে, ‘‘অবশ্যই পরবর্তী সংস্করণে বইগুলোর প্রয়োজনীয় পরিমার্জন করা হবে।”
পাঠ্যবই নিয়ে নানা বিতর্কে শুরুতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড নীরব থাকলেও সমালোচনা এতোটাই জোরালো হয় যে, কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে বিবৃতি দিয়ে সেটি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। নতুন শিক্ষাক্রমে সপ্তম শ্রেণির বাংলা মাধ্যমের একটি ও ইংরেজি মাধ্যমের একটি বই নিয়ে আলোচনা থাকলেও পাঠ্যপুস্তকের এমন নানান ভুল রয়েছে নবম-দশম শ্রেণির বইয়েও। ফলে, নানা আশার আলো দেখালেও আবারও অন্ধকারেই যাচ্ছে শিক্ষা-সংস্কারের নতুন উদ্যোগ-বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, পাঠদানের প্রধান উপকরণ পাঠ্যবইয়ে এমন নানা অসঙ্গতি ভোগাবে শিক্ষার্থীদের; আর বিব্রতকর অবস্থায় ফেলবে শিক্ষকদেরও। পাশাপাশি, নতুন পাঠ্যক্রমে ভুলের ফলে তার প্রভাব পড়তে পারে প্রশ্নপত্রের কাঙ্ক্ষিত মানে। সেজন্য তারা বলছেন, পাঠদানে সতর্কতার পাশাপাশি লক্ষ্য রাখতে হবে সংশোধনীতে; তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকতে হবে প্রশ্নপত্র প্রণয়নের ক্ষেত্রেও। তবে তা কতটুকু সম্ভব হবে সেটি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে তাদের; কেননা নতুন পাঠ্যক্রমে পাঠদান শুরুর পূর্বে যথাযথ প্রশিক্ষণ পাননি শিক্ষাগুরুরা। মাত্র এক ঘণ্টার অনলাইন প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও তার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি দেশের সকল শিক্ষকদেরও।