ডিসেম্বরেও শীতের দেখা নেই, কবে পড়বে?
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০৫:১২ PM , আপডেট: ২৮ আগস্ট ২০২৫, ০২:৫৩ PM
বাংলাদেশে নভেম্বর গড়িয়ে ডিসেম্বর মাস চলে এলেও এখনও শীতের দেখা মেলেনি। উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় রাত ও ভোরের দিকে কুয়াশা ঘনিয়ে শীত শীত অনুভূত হলেও সকালের সূর্য ওঠার সাথে সাথে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দেশটির মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে দিনে ও রাতে দুই সময়ের তাপমাত্রা তুলনামূলক বেশি বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়া অফিস বলছে, গত বছরের চাইতে এবারে নভেম্বর মাস-জুড়ে গড় তাপমাত্রা এক ডিগ্রী বা সামান্য বেশি রেকর্ড করা হয়েছে। অন্যদিকে সামনের তিন দিন বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এখনও ৩০ থেকে ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে বলে আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গিয়েছে। অথচ বছরের এই সময়ে সাধারণত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রীর নীচে থাকার কথা।
সিত্রাং-এর পর পরিবর্তন
অক্টোবরের শেষের দিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আঘাত হানার পর তাপমাত্রা অনেক নেমে যাওয়ায় ধারণা করা হয়েছিল এবারে শীত আগে ভাগে পড়তে পারে। আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান জানান, সিত্রাং-এর প্রভাবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে গিয়েছিল।
সেই সাথে বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে শীতল বায়ু প্রবাহ থাকায় আর্দ্রতা কমে যায়। এ কারণে শীতের অনুভূতি হয়। মূলত উত্তর পশ্চিম দিকে প্রবাহিত ঠাণ্ডা হাওয়ার কারণেই বাংলাদেশ ও এর আশেপাশের অঞ্চলে শীত পড়ে।
কিন্তু পরবর্তীকালে বঙ্গোপসাগরে পরপর বেশ কয়েকটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। সেইসাথে বাংলাদেশ অঞ্চলের বায়ুপ্রবাহে বড় ধরণের পরিবর্তন হয়নি, একারণে তাপমাত্রাও কমেনি। নভেম্বরের প্রথম কয়েকদিন পারদ নেমে এলেও মাসের বাকি দিনগুলোয় কখনও গরম বেড়েছে, কখনও কিছুটা কমছে। এই বাড়া-কমার কারণে আবহাওয়ায় শীতের আমেজ নেই বলে জানান আবদুল মান্নান।
ডিসেম্বরে যেখানে ভালো শীত পড়ার কথা সেখানে শীত তো দূরে থাক বরং বেলা বাড়ার সাথে সাথে দেশটির মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে রীতিমতো গরম লাগতে শুরু করেছে।
লঘুচাপের প্রভাবের সাথে শীতের সম্পর্ক
শীতের দেখা না পাওয়ার কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেছেন, মেঘমুক্ত আকাশ থাকা, উত্তর পশ্চিমের শীতল বায়ুপ্রবাহ না থাকা, বঙ্গোপসাগরে ঘন ঘন লঘুচাপ সৃষ্টির কারণে আবহাওয়ায় এই পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: শীত আসছে, আপনি প্রস্তুত তো!
সিত্রাং-এর পরে দক্ষিণ-পূর্ব আরব সাগর এবং পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে তিনটি লঘুচাপ হয়ে গিয়েছে। এরমধ্যে একটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। যার ফলে গাঙ্গেয় উপকূলে কনকনে উত্তরে হাওয়া ঢুকতে পারছে না। এ কারণে রাতে ও ভোরের দিকে কিছুটা শীত শীত অনুভূত হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে রোদের তাপে গলদঘর্ম অবস্থা হতে হচ্ছে।
আব্দুল মান্নান জানান, বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সামনের আরও দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর একটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। তখন উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে যে শীতল বাতাস বয়ে যাওয়ার কথা সেটায় ব্যত্যয় ঘটবে। ফলের শীতের অনুভূতি হবে না।
বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হলে এতে প্রচুর জলীয়-বাষ্পপূর্ণ বাতাস থাকে এবং আকাশে মেঘমালার সৃষ্টি হয় এবং এই লঘুচাপের বর্ধিতাংশের প্রভাব বাংলাদেশে উপকূল পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। জলীয়-বাষ্পপূর্ণ বাতাস সাধারণত উষ্ণ ও আর্দ্র হয়ে থাকে। ফলে এই বাতাস বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে এলে বাংলাদেশের নিম্নস্তরের বায়ু সেই জলীয় বাষ্প ধারণ করে, এজন্য তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
এ কারণে গত কয়েকদিন বাংলাদেশে যখন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল তখন রাতের তাপমাত্রা এক থেকে তিন ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছিল বলে জানান মান্নান। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ বাংলাদেশের মধ্য থেকে দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা বাড়ার প্রধান সহায়ক।
শীত পড়বে কবে
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ও এর পরবর্তী সময়ে বঙ্গোপসাগরে যে লঘুচাপের সৃষ্টি হবে সেগুলো পশ্চিম দিকে অর্থাৎ ভারতের দক্ষিণাঞ্চল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কার দিকে সরে যাবে। বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে সরে যাওয়ার সেটার প্রভাব বাংলাদেশে থাকবে না। এতে শীতের অনুভূতি বর্তমান সময়ের চাইতে অনেকটা বেড়ে যাবে।
সে হিসেবে আগামী ১৫ই ডিসেম্বরের পর শীত পড়বে বলে জানিয়েছেন আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, তাপমাত্রা ক্রমেই কমতে কমতে ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি ও শেষার্ধে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের কাছাকাছি হিমালয় পর্বতমালা থাকায় সেখানে শীতের অনুভূতি সবার আগে দেখা দেবে এবং তীব্রতা থাকবে তুলনামূলক বেশি। বর্তমানে দেশটির উত্তরের জেলা তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। অর্থাৎ রাতে ও ভোরে যথেষ্ট শীত অনুভূত হচ্ছে।
যদিও মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে দিনের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রাতের বেলা তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রীর কাছাকাছি অবস্থান করছে। কিন্তু সকালের আলো ফোটার সাথে সাথে সব অঞ্চলেই এই শীত শীত অনুভূতি আর থাকছে না।
তবে আর দুই সপ্তাহ পরেই সূর্যের দক্ষিণায়নের কারণে উপমহাদেশের উচ্চচাপ বলয় ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এসব জায়গায় অবস্থান করতে সক্ষম হবে। তখন বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমের যে সীমান্তবর্তী এলাকা অর্থাৎ উঁচু স্থান থেকে ঠাণ্ডা বায়ুপ্রবাহ বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করবে। এই শীতল বায়ু প্রবাহের কারণে শীতের অনুভূতি বাড়বে। রাতের তাপমাত্রা আরও কমবে।
সূর্যের দূরত্ব
সূর্য বছরের একটি সময়ে পৃথিবীর কাছে চলে আসে আবার আরেক সময়ে দূরে চলে যায়। সূর্য দূরে অবস্থানের কারণেও শীত পড়ে। আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান জানান, সাধারণত জুন থেকে ২১শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সূর্য বাংলাদেশের অংশে খুব কাছে চলে আসে এবং ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সূর্য দূরে যেতে থাকে।
দূরত্ব বাড়ার ফলে সৌর শক্তির পরিমাণ কমে আসে। দিনের ছোট হয়ে আসে রাত বড় হয়। এতে দিনে সূর্যকিরণ কম পায় রাতে বিকিরণের সময় বেশি থাকে। সে কারণে রাত ঠাণ্ডা থেকে ঠান্ডাতর হতে থাকে। সে হিসেবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকে সাময়িকভাবে বাংলাদেশের উত্তর ও পশ্চিমের সীমান্তবর্তী জেলাসমূহে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
সাধারণত তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রী হলে মাঝারি, তাপমাত্রা ৪ থেকে ৬ ডিগ্রী হলে তীব্র এবং তাপমাত্রা চার ডিগ্রী সেলসিয়াসের নীচে নেমে এলে তাকে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। তবে জাঁকিয়ে শীতের জন্য জানুয়ারি মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান আব্দুল মান্নান। [সূত্র: বিবিসি বাংলা]