দেশের এসএসসি নাটকীয় পতন, শিক্ষকরা কি এর জন্য দায়ী?
- রাসেল ইব্রাহীম
- প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৫, ০৮:০২ PM , আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০২৫, ০৮:১৪ PM
শিক্ষার্থীদের অক্লান্ত পরিশ্রম, অভিভাবকদের সচেতনতা এবং শিক্ষকবৃন্দের দিকনির্দেশনা– এই তিনের সমন্বয়েই সম্ভব ভালো রেজাল্ট। তবে সবকিছু থাকা সত্ত্বেও যদি শিক্ষার্থীদের পরিশ্রম করার মনোভাব না থাকে তাহলে প্রত্যাশিত রেজাল্ট অসম্ভব। যারা ভালো করেছে এবং যারা খারাপ করেছে –সবাইকেই শিক্ষকরা পড়িয়েছেন। শিক্ষকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। এক্ষেত্রে যারা ভালো রিসিভ করেছে, তারাই ভালো রেজাল্ট করেছে। কোনো শিক্ষকই চান না প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট হোক। সবাই মনেপ্রাণে চায় প্রতিষ্ঠান সম্মুখপানে এগিয়ে যাক।
প্রশ্নফাঁসের যুগ, পরীক্ষার হলে কিংবা খাতা দেখায় মমতার যুগ এবং অটোপাশের যুগ – এই লংটাইমে শিক্ষার্থীরা দেখেছে, পাশের বাসার ভাই সারাদিন খেলাধুলা করে এবং যাচ্ছেতাই করেও প্লাস পেয়েছে, তাহলে আমিও না পড়লে কী আর প্রব্লেম হবে! ফলে শিক্ষার্থীরা হয়ে যায় অবাধ্য, চলতে থাকে লাগামহীন ঘোড়ার মতো। তাদের থামানোর দায়িত্ব কাদের ছিল?
সবাই কম-বেশি ক্লাস করেছে, প্রাইভেট পড়েছে/ কোচিং করেছে কিন্তু সবাই বাসায় পড়েনি/চর্চা করেনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছিল আসক্ত এবং বাইক নিয়ে হয়ে পড়ে বেপরোয়া,এগুলোর জন্য দায়ী কে? আমাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী ছিল শিক্ষকদের অবাধ্য। শিক্ষকরা শাসন করলে কিংবা পরীক্ষার হলে সুযোগ না দিলে পথেঘাটে হেনস্তা হওয়ার রেকর্ড আছে, তাই অনেক শিক্ষকই শাসনের ভাষা ভুলে গেছে।বলুন, এর জন্য দায়ী কে?
শিক্ষাক্ষেত্রে পরিবর্তন দরকার। অভিভাবকদের সচেতনতা দরকার।প্রশিক্ষণের পাশাপাশি শিক্ষকদের উন্নত বেতন নিশ্চিত করা দরকার, যেন একজন শিক্ষক সারাটাদিন শিক্ষকতার কাজে নিজেকে উজাড় করে দিতে পারেন। কিছু শর্ত দিয়ে শিক্ষকদের হাতে বেত ফিরিয়ে দিন।আর অভিভাবকবৃন্দ,আপনারা স্কুল মিটিংয়ে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন, শিক্ষকদের পরামর্শ নিন এবং অভিভাবক হয়ে শিক্ষকদের পরামর্শও কাজে লাগান– সকল পক্ষের চেষ্টায় রেজাল্ট ভালো হবে। আর A+ এর জন্য শিক্ষকদের প্রেশার দেবেন না। শিক্ষার্থীর পরিশ্রম অনুসারে রেজাল্ট হবে, সেটাই প্রত্যাশা করুন। হাতে মোবাইল দেবেন, বাইক দেবেন আর ভালো রেজাল্টের আশা করবেন – তা হবে না, তা হবে না।
বর্তমান যুগে মনে রাখতে হবে, A+ পাওয়া সকল শিক্ষার্থী মেধাবী নয় এবং A+ না পাওয়া সকল শিক্ষার্থী দুর্বল নয়। তাই A+ না পাওয়া/ পাশ না করা নিয়ে অভিভাবক হিসেবে মানসিক টর্চার করবেন না। অনেক ফেল করা শিক্ষার্থীও নেক্সট টাইমে চেষ্টা করে ভালো পর্যায়ে গেছে। যাদের রেজাল্ট খারাপ হয়/ হবে, তাদের সান্ত্বনা দিন এবং পাশে রাখুন। এবার যে পরীক্ষা হয়েছে, তা ১০০% বিশুদ্ধ ছিল, তা আমি বলব না ; তবে বর্তমান প্রশাসন / সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে সেরাটা দিয়েছে। ফিউচারে এই ধারা অব্যাহত থাকবে, সেটাই আমি কামনা করি।
লেখক: শিক্ষক ও গীতিকার