সরকার বিচারব্যবস্থাকে ‘চরম রাজনৈতিকীকরণ’ করেছে, অভিযোগ ডেভিড বার্গম্যানের

ব্রিটিশ সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী ডেভিড বার্গম্যান
ব্রিটিশ সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী ডেভিড বার্গম্যান  © সংগৃহীত ছবি

অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে ‘চরম রাজনৈতিকীকরণ’ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্রিটিশ সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী ডেভিড বার্গম্যান।  সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গে টেনে তিনি এই অভিযোগ করেছেন।  

আজ শনিবার (২৬ জুলাই) এক ফেসবুক পোস্টে বার্গম্যান লিখেছেন যে, সরকার হয় এই রাজনৈতিকীকরণে জড়িত অথবা চোখ বন্ধ করে আছে। তিনি উল্লেখ করেন, এই গ্রেপ্তারের কোনো আইনি বা বাস্তবসম্মত ভিত্তি নেই। এবং এটিকে তিনি যথাযথ প্রক্রিয়ার লঙ্ঘন ও বিচারিক স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন।

গত বছরের ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ কর্মসূচির সময় যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুমের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে সাবেক এই প্রধান বিচারপতিও রয়েছেন। এই মামলাতেই পরে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

ওই মামলার প্রসঙ্গে বার্গম্যান লিখেছেন, খায়রুল হকের সঙ্গে ঘটনার কোনো যোগসূত্র নেই এবং তিনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ‘স্বেচ্ছাচারী আটকাদেশ’-এর অভিযোগ করেছেন। বার্গম্যান বলেন, ‘খায়রুল হককে যারা আটক করেছেন, যে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তাদের নির্দেশ দিয়েছেন এবং যে ম্যাজিস্ট্রেটরা তাকে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন — অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিটি সদস্যসহ তারা ভালো করেই জানেন যে (হত্যা মামলায় খায়রুলের সংশ্লিষ্টতার) এমন কোনো প্রমাণ নেই এবং ভবিষ্যতেও কোনো প্রমাণ পাওয়া যাবে না।’

তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, এই গ্রেপ্তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তার দাবি, খায়রুল হক ২০১১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অসাংবিধানিক ঘোষণার করে যে রায় দিয়েছেন, এটিকে সেটির ‘প্রতিশোধ’ হিসেবে বহুলভাবে মনে করা হচ্ছে। ওই রায় আওয়ামী লীগকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করার আইনি ভিত্তি দিয়েছিল, যা সেসময় ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।

বার্গম্যান বলেন, বিচারিক সিদ্ধান্ত, যতই অজনপ্রিয় হোক না কেন, তা বিচারের কারণ হওয়া উচিত নয়। তিনি মন্তব্য করেন, ‘একটি বিচারিক সিদ্ধান্তকে ফৌজদারি মামলার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা—যেখানে তার কোনো সংযোগ নেই এমন একটি হত্যা মামলা তো দূরের কথা — বিচারিক স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের নীতির ওপরও একটি সরাসরি আক্রমণ।’

তিনি সতর্ক করে দেন যে, এ ধরনের পদক্ষেপ একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করে। তিনি বলেন, যদিও বিচারকদের দুর্নীতি বা অন্য কোনো অপরাধের জন্য জবাবদিহি করা যেতে পারে, তবে এই (হত্যা) মামলায় এমন কোনো অভিযোগ বা প্রমাণ নেই। তিনি লিখেছেন, বিচারিক মতামত অজনপ্রিয় হবে এজন্য একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির বিচার করা একটি ভীতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে।

বার্গম্যান বলেছেন যে, কর্তৃপক্ষ যদি জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডের জবাবদিহিতার প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখতে চায়, তবে তাদের অবিলম্বে নিশ্চিত করতে হবে যেন সাবেক প্রধান বিচারপতিকে মুক্তি দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, গত ২৪ জুলাই খায়রুল হককে তার ধানমন্ডির বাসা থেকে আটক করা হয়। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম একজন সাবেক প্রধান বিচারপতিকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়। তাকে একই দিনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয় এবং ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের চিফ হাজির করা হয়।

যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক খালেদ হাসান আদালতে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।

 


সর্বশেষ সংবাদ