৪ জুলাই : সারাদেশে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক, উত্তাল সব বিশ্ববিদ্যালয়

৪ জুলাই ২০২৪, শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা
৪ জুলাই ২০২৪, শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা  © উইকিপিডিয়া

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে চলমান ছাত্র আন্দোলনের চতুর্থ দিনে—২০২৪ সালের ৪ জুলাই, সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। দিনভর টানা বৃষ্টিতে ভিজে আন্দোলনে নামে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখা হয় ছয় ঘণ্টা, আর একই দাবিতে দেশের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ৭ জুলাই সারাদেশে বিক্ষোভ এবং ৮ জুলাই ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের মাধ্যমে ছাত্র ধর্মঘট পালনের ডাক দেন।

এদিন সকালে ঢাকায় ঝুম বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা শাহবাগ মোড়ে জড়ো হন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে তারা বিকেল ৬টা পর্যন্ত শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন। মিছিল হয় মাস্টারদা সূর্যসেন হল, টিএসসি, ভিসি চত্বর, রাজু ভাস্কর্য হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত। সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীরা রাজু ভাস্কর্যে ফিরে পরবর্তী তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

একই দিনে সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, খুলনা, বরিশাল, কুমিল্লা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাস এবং সড়কে বিক্ষোভ করেন।

আরও পড়ুন: ফোনের ছবিতে বাবাকে খোঁজে ছাত্রদল নেতা আরিফুলের ২ বছরের মেয়ে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করলে উভয় লেনে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রায়সাহেব বাজার মোড়, চবি শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক, রাবির শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক, শেকৃবি শিক্ষার্থীরা আগারগাঁও মোড়, খুবির শিক্ষার্থীরা খুলনার জিরো পয়েন্ট এবং কুবির শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ব্যাচভিত্তিক শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়। ‘কোটা পুনর্বহাল করা চলবে না’ ফেসবুক গ্রুপ এবং টেলিগ্রাম চ্যানেলের মাধ্যমে আন্দোলনের খবর ও নির্দেশনা সারাদেশে পৌঁছে যায়।

এই দিনে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ বাধার মুখে পড়েন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হলের গেটে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তালা দিয়ে রাখেন, গেস্টরুমে শিক্ষার্থীদের আটকে রাখা হয়। তবে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে হলে প্রবেশ করে তালা খুলে দেন।

এদিকে, এদিনই সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগে বহাল থাকে। ফলে ৫ জুনের পরিপত্র বাতিল করে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল হয়। এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। আন্দোলনকারীদের ভাষ্য, রাষ্ট্রযন্ত্রের সমন্বয়হীনতার শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন: মায়ের ওষুধ আনতে গিয়ে শহীদ হন সুমন, ছেলের শোকে মায়েরও মৃত্যু

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম জানান, শুক্রবার (৫ জুলাই) সারাদেশে অনলাইন-অফলাইনে জনসংযোগ ও সমন্বয়, শনিবার (৬ জুলাই) দেশজুড়ে বিক্ষোভ এবং রোববার (৭ জুলাই) ছাত্র ধর্মঘট পালিত হবে। রাষ্ট্রের প্রতি তার আহ্বান, ২০১৮ সালের পরিপত্র দ্রুত কার্যকর করে কোটাব্যবস্থা বাতিল নিশ্চিত করতে হবে।

প্রসঙ্গত, জুলাই-আগষ্টে শিক্ষার্থীদের এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন পরবর্তীতে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। সরকার এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দমন-পীড়নের মাধ্যমে থামাতে গিয়ে সরকারই আরও প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে। ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে সরকারের সহিংস হস্তক্ষেপে প্রায় হাজারো নিরস্ত্র মানুষ প্রাণ হারান, আহত হন হাজার হাজার। মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে আন্দোলন পরিণত হয় গণঅভ্যুত্থানে। পতন ঘটে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে দীর্ঘদিন নিপীড়ন নির্যাতন চালানো আওয়ামী লীগ সরকারের। ক্ষমতাসীন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। তথ্যসূত্র: বাসস


সর্বশেষ সংবাদ