যেভাবে কাটবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতাদের ঈদ

ছাত্রনেতারা
ছাত্রনেতারা  © টিডিসি ফটো

বিশ্বব্যাপী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস রমজান মাস এখন বিদায়ের পথে। বছর ঘুরে পবিত্র ঈদুল ফিতর আবারো স্বমহিমায় ফিরে এসেছে সবার মাঝে। শিশু কিশোর থেকে শুরু করে আবালবৃদ্ধবনিতা সবার মাঝেই বিরাজ করছে ঈদের আমেজ। ঈদ আনন্দের বাইরে নেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারাও। কোথায় ঈদ কাটাচ্ছেন তারা? কেমন কাটবে তাদের ঈদ, প্রস্তুতি ই বা কেমন— এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আজকের প্রতিবেদন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতাদের ঈদের গল্প শুনেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ওয়াসিফ আল আবরার ।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, আমি মূলত গাঁয়ের ছেলে। শহরের ঈদের চেয়ে গ্রামের ঈদে সময় কাটানো আমার হৃদয়ে অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি করে। এজন্য প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বাবা, চাচা ও পরিবারের সবার সাথে গ্রামেই পবিত্র ঈদ উদযাপন করবো। ঈদ অর্থই খুশি, আনন্দ, উৎসবের আয়োজন, বিশেষ করে ঈদে সালামি নেওয়া দেওয়াটা অন্যতম আনন্দ দিয়ে থাকে। আমি এখনো আমার বাবা-মা, চাচা-চাচীদের থেকে সালামি পাই। আবার ভাতিজা, ভাগ্নিকে সালামি দেই। অন্যান্য বছরে ঈদের আমেজ একরকম থাকলেও এবারে ফ্যাসিজম থেকে মুক্তির ফলে এই ঈদ আনন্দে নতুন মাত্রা যুক্ত করবে। দেশের মানুষ এবার মুক্ত স্বাধীন বাতাসে ঈদ উদযাপন করতে পারবে। 

তিনি বলেন, তবে গরিব, অসহায় ও খেটে খাওয়া মানুষদের ক্ষেত্রে ঈদের আমেজটা ভিন্ন হয়ে থাকে। অভাব অনটন থাকায় অনেক সময় তাদের মাঝে ঈদের খুশি তেমন একটা প্রভাব ফেলে না। ঈদের দিনও তাদের অনেককে হয়তো কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়, পরিবারের সকলের মুখে একটু আহার তুলে দিতে। পথশিশু কিংবা অভাবী পরিবারের সদস্যদের ঈদের নতুন জামা কেনার সামর্থ্যটুকুও থাকে না। এজন্য এবারের ঈদে চেষ্টা থাকবে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ যাতে সুন্দরভাবে ঈদ পালন করতে পারে সেজন্য কিছু করার। সবশেষে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ইসলমী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ এর পক্ষ ইবি পরিবারের সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা রইলো। সবার ঈদ ভালো কাটুক, সুন্দর কাটুক, আনন্দময় হোক। 

শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহমেদ বলেন, আলহামদুলিল্লাহ দীর্ঘ একটি মাস সিয়াম সাধনার পরে পবিত্র ঈদুল ফিতর আমাদের মাঝে এসেছে। প্রতিবারের ন্যায় এবারও পরিবারের সবার সাথে ঝিনাইদহে নিজ গ্রামে ঈদ উদযাপন করবো ইনশাআল্লাহ। সর্বশেষ কবে এতটা মুক্তভাবে ঈদ উদযাপন করতে পেরেছি তা মনে পড়ে না। জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় ১/১১ এবং তারপর সুদীর্ঘ ১৬ বছর যাবত স্বৈরাচারী রাজনৈতিক আমলের সময় কাটাতে যেয়ে ঈদটা কেমন যেন একপেশে হয়ে গেছে। রাজনৈতিক ব্যস্ততার কারণে এখন আর আগের মতো শপিং করা কিংবা বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা হয় না। আগে সালামি পেলেও এবারে এখনো পাইনি, তবে কাছের ছোট ভাইবোনদের সালামি দিয়েছি। তবে অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে এবারের ঈদ আনন্দেই কাটবে বলে আশাকরি। 

তিনি বলেন, ঈদের দিনে তেমন স্পেশাল কোন কার্যক্রম নেই। তবে দীর্ঘদিনের রীতি অনুযায়ী বিএনপির এবং ছাত্রদলের সিনিয়র নেতাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে। আসলে দীর্ঘদিন দলের সাথে যুক্ত থাকায় সবই এখন রাজনীতি কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। যেহেতু সামনেই নির্বাচনের প্রস্তুতির একটা বিষয় আছে তো ভোটারদের দোয়া নিতে বিএনপি নেতাদের সাথে অবশ্যই তাদের কাছে যাব, দেশের পরিস্থিতি নিয়ে এবং উত্তোরণে করনীয় সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা হবে। এছাড়া তরুণদের সাথে কাজ করার সুযোগ এসেছে আমাদের সামনে, চেষ্টা থাকবে তরুণদের আকৃষ্ট করার। পবিত্র ঈদে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইবোনদের প্রতি আহবান থাকবে তারা যেন চব্বিশের অভ্যুত্থানকে সামনে রেখে দেশ ও জাতির কল্যাণে সঠিক ও সুচিন্তিত একটি সিদ্ধান্ত নেয় এবং সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে দেশের কল্যাণে অবদান রাখতে প্রত্যয়ী হয়। 

ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ইবি সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত বলেন, মুসলিমরা উৎসব প্রিয়, তবে স্রষ্টা কর্তৃক নির্ধারিত উৎসবে। মুসলিম সংস্কৃতি দুটি বড়ো উৎসবের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে। মুসলিম উৎসবের তালিকায় রয়েছে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, শবে বরাত, শবে কদর ও শবে মেরাজ সহ নানা উৎসব। বাঙ্গালী মুসলমানের ঘরে ঈদের বার্তা পৌঁছে সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বয়ান নিয়ে। বাঙ্গালী সমাজে ঈদুল ফিতরের উৎসবে কোনো কৃত্রিমতা নেই, আছে অকৃত্রিম ভালোবাসা তৈরীতে একে অপরের কাছে আসার বাণী। জুলাই গণঅভ্যূত্থান পরবর্তী দেশের মাটিতে বৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠী হৃদে-হৃদ মিলে এক অনন্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করবে এবারের ঈদুল ফিতর। তারই প্রেক্ষিতে বুকভরা আনন্দ নিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে নাড়ির টানে চলে এসেছি নিজ পরিবার, প্রতিবেশী, পাড়া-মহল্লায় ছোটবেলার খেলার সাথী ও এলাকার মেহনতি মানুষের সাথে ঈদ উৎসবের আমেজ ভাগাভাগি করতে। ঈদুল ফিতর বাঙ্গালী সংস্কৃতি বিনির্মাণে এক অনন্য উপমা হতে পারে, এমন দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে আমরা নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ঈদুল ফিতরের আগমনী বার্তা পৌঁছে দিতে চাঁদ রাতে ঈদ মিছিল, ঈদের রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ঈদ পরবর্তী রাতে নাইট শর্টপিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও মেহনতি মানুষের মাঝে ঈদ শুভেচ্ছা সামগ্রী বিতরণ সহ নানাবিধ আয়োজনে আমাদের ঈদ হবে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানে এক উজ্জ্বল মাইলফলক। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইবোন সবাইকে জানাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে সিয়াম সাধনার পরে পবিত্র ঈদুল ফিতর এসেছে। আল্লাহর সন্তুষ্টির কথা মাথায় রেখেই ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছি। ক্যাম্পাসে নানান ব্যস্ততার কারণে দীর্ঘদিন বাড়িতে আসা হয়নি। তাই অবশ্যই এবারের ঈদটা ঠাকুরগাঁওয়ে আমার পরিবারের সাথেই কাটানোর ইচ্ছা রয়েছে। ছোটবেলায় ঈদ এলেই কেনাকাটার একটা আমেজ থাকতো। কিন্তু আমার বাবা মারা যাওয়ার পরে থেকে শপিংয়ের আমেজটা আর অনুভব করি না। যেহেতু গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের এটাই প্রথম ঈদ তাই স্বভাবতই অনুভূতিটা একটু আলাদা। এতদিন ঈদের উৎসবগুলোও ছিলো একটি পরিবার কেন্দ্রিক, গণমানুষের ঈদ হতে পারেনি। 

তিনি বলেন, মানুষের বাকস্বাধীনতা ছিল না, নিজস্ব স্বাধীনতা ছিলো না, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছিলো না। কিন্তু এবার মানুষ মন-প্রাণ খুলে নিজস্ব ভঙ্গিতে ঈদ উদযাপনের সুযোগ পেয়েছে। ঈদের দিন বিশেষ কোন কর্মসূচী না থাকলেও যেহেতু আমার এলাকায় ও আশপাশে বেশ কয়েকজন ভাই অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন তো ঈদের দিন শহীদ পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার চেষ্টা করবো। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইবোনদের প্রতি একটাই বার্তা থাকবে তা হলো- জুলাই অভ্যুত্থানে দলমত নির্বিশেষে সবাই যেভাবে একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ফ্যাসিস্টের পতন করেছিলাম, আগামী দিনেও যেন ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশের স্বার্থে কাজ করতে পারি। কেও যেন আমাদের মাঝে ডিভাইড এন্ড রুল ফর্মুলা প্রয়োগ করে সুবিধা নিতে না পারে। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানাই। 

বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার সেক্রেটারি এস এম শামীম বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর জন্য এক অপার খুশির বার্তা বয়ে আনে, যখন আমরা সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেই। ইবাদত-বন্দেগী, পরিবার ও সংগঠনের দায়িত্ব পালন—সব মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ ঈদের প্রস্তুতি যথারীতি চলছে, একটু ব্যস্ত সময় কাটছে। ঈদের প্রকৃত আনন্দ পরিবার ও প্রিয়জনদের সঙ্গেই পাওয়া যায় তাই ইনশাআল্লাহ, নিজ এলাকায় গ্রামের সকলকে নিয়ে ঈদ উদযাপন করার পরিকল্পনা আছে। জুলাই বিপ্লবের পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে এটি আমাদের প্রথম ঈদ। 

তিনি বলেন, আমরা বাকস্বাধীনতার পরিবেশ ফিরে পেয়েছি যেখানে ঈদগাহ ময়দানে এখন ইমাম-খতিবরা ভয় ভীতি প্রদর্শন ছাড়াই মন খুলে কুরআন হাদিস থেকে হকের কথা বলতে পারবেন। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এটাই সবচেয়ে আনন্দের। ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা থাকবে। ঈদ উপহার বিতরণসহ বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করব ইনশাআল্লাহ। ইবির ভাইবোনদের প্রতি আহ্বান থাকবে- ‘আসুন, ঈদুল ফিতরের শিক্ষা নিয়ে সকল হিংসা, বিদ্বেষ ও বিভেদ ভুলে গিয়ে ন্যায়, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, দয়া ও মানবতার আদর্শে সবাই একত্রিত হই। আসুন, একসাথে একটি নিরাপদ, ভালোবাসাপূর্ণ ক্যাম্পাস এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পক্ষ থেকে সবাইকে জানাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের আন্তরিক শুভেচ্ছা।’

ইবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি মো. ইউসুফ আলী বলেন, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে আগত মাহে রমজান এখন বিদায়ের পথে যা এসেছিল আমাদের পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর গোলাম ও মুত্তাকী বানানোর জন্য। এক মাস সিয়াম সাধনার পর আমাদের সামনে আসছে আনন্দের দিন পবিত্র ঈদুল ফিতর। এই দিন শুধু আনন্দ বা উৎসবের নয়, বরং এই দিন আমাদের আত্মশুদ্ধি, ভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা ও সমাজের প্রতিটি স্তরে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার শপথ গ্রহণের দিন। ছাত্রশিবির সবসময়ই একটি আদর্শ সমাজ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে অগ্রসর হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, প্রকৃত ঈদের আনন্দ তখনই পরিপূর্ণ হয়, যখন সমাজের প্রতিটি মানুষ ন্যায্য অধিকার পায় এবং ভালোবাসা, সহযোগিতা ও মানবতার বন্ধনে আমরা একে অপরের পাশে থাকি। 

তিনি বলেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী এবারের ঈদেও নিজের পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে ঈদুল ফিতরের শিক্ষা ও সৌন্দর্য পূর্ণতা দিতে চাই। এই ঈদে আমার কিছু ক্ষুদ্র পরিকল্পনা রয়েছে। যেমন- আওয়ামী স্বৈরাচারী শাসনামলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ভাই শহীদ হয়েছেন এবং যারা গুম হয়েছেন, সামর্থ্য অনুযায়ী সেই পরিবারগুলোর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। দ্বিতীয়ত, ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি অসহায় পরিবারকে ঈদ সামগ্রী ও একজনকে ঈদ উপহার প্রদান নিশ্চিত করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। ইবির ভাইবোনদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান থাকবে- আসুন, এই ঈদে আমরা জুলাই আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে, আমাদের চারপাশের গরিব-দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে ঈদের আনন্দকে সর্বজনীন করে তুলি। ছাত্রসমাজকে দেশ ও জাতির কল্যাণে প্রস্তুত করতে আমরা যেন আরও বেশি আত্মনিয়োগ করি।

 


সর্বশেষ সংবাদ