তিন উপায়ে অস্থায়ী হল ব্যবস্থার কথা ভাবছে জবি প্রশাসন

অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম ও জবি লোগো
অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম ও জবি লোগো  © টিডিসি রিপোর্ট

সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সমাজকর্ম বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম। ইতোমদ্যে এক সপ্তাহের ওপরে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে পরবর্তী চার বছর জন্য এ দায়িত্ব পালন করবেন। অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম দেশের উচ্চ শিক্ষাঙ্গনের হালচাল ও পরিবেশ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নানা দাবি এবং জবিতে আগামীর পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে। গল্প-আলাপে পাঠকদের জন্য তার চুম্বক অংশ তুলে ধরছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক— আরিফুল ইসলাম


দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সম্প্রতি জবির উপাচার্য হিসেবে আপনি নিয়োগ পেয়েছেন। আপনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাই?

অধ্যাপক ড.রেজাউল করিম: জুলাই বিপ্লবের অসংখ্য শহীদের বিনিময়ে আমরা নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি। এ স্বাধীনতার জন্য যারা জীবন দিয়েছে কিংবা আহত হয়েছে তাদের উদ্দেশ্য ছিল বৈষম্যহীন সমাজ গড়া, যার লক্ষ্যেই আমি দায়িত্ব পেয়েছি। এতে আমি আনন্দিত। আমি সব শহীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং বর্তমান সরকারের কাছে আমি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এখানে দেশ গড়া ও পরিবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থা গড়ার ভূমিকা রাখতে পারবো বলে আমি আনন্দিত। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দায়িত্ব গ্রহণ পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বহুমুখী সমস্যা। আবার সম্ভাবনাও কম নয়। অন্যতম সম্ভাবনা হচ্ছে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেক এক্সট্রা কারিকুলামে ভূমিকা রাখছে। এর ফলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে সেন্টার অফ এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তোলা খুবই সম্ভব। আমাদের এখন প্রয়োজন, সমস্যাগুলোকে নিয়ে কাজ করা। এর লক্ষ্যে আমি দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করবো। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক সমস্যা সমাধানে কি পদক্ষেপ নিবেন?

অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম: ঢাকা শহরে আবাসিক সংকট কিন্তু খুবই জটিল বিষয়। আমাদের শিক্ষার্থীরা এ সংকট মোকাবিলা করেই তাদের অবদান সব দিকে রাখছে। ঐতিহাসিকভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু হল ছিল। মালিকানা সংক্রান্ত কারণে বর্তমানে জায়গাগুলোতে স্থাপনা নির্মাণ করা আইনগত বাধা আছে। ইতিমধ্যে আমরা ডিসি অফিসের সাথে আলোচনা করেছি। তিন উপায়ে অস্থায়ী হল ব্যবস্থার কথা ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বর্তমানে দুইটি হল আমাদের আওতাধীন আছে। একটা হাবিবুর রহমান হল, আর একটা বাণী ভবন। আব্দুর রহমান হলে এখন যারা বসবাস করছেন, তাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তারা চলে গেলে আমরা এ হলটিও পাব। কিন্তু আমরা সেখানে স্থায়ী কোনো হল নির্মাণের সুযোগ পাব কিনা, এ ব্যাপারটি দেখতে হবে। তবে আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্থায়ী অথবা অস্থায়ী আবাসন ব্যবস্থা করার জন্য অনুমতির জন্য আবেদন করেছি। এ অনুমতি পেলে আমরা সেখানে আবাসন ব্যবস্থা করবো শিক্ষার্থীদের জন্য। 

আরও পড়ুন: উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করতে চাই

এছাড়াও অনেকে বলছে বাড়ি ভাড়া করে অস্থায়ী হলের ব্যবস্থা করতে। কিন্তু এত শিক্ষার্থীদের জন্য এটা করা খুবই চ্যালেঞ্জের বিষয়। কিন্তু আমরা এটাকে পারবো না বলে ছেড়ে দিব না। আমরা ইতিমধ্যে সিটি করপোরেশনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি, যাতে ধূপখোলা মাঠের পাশে ভবনটি নেওয়া যায়। ফলে সেখানে অস্থায়ী হল নির্মাণ সম্ভব হবে। আরেকটি ব্যবস্থার কথা মাথায় আছে- সেটি হচ্ছে, আমাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে যদি উপযুক্তভাবে গ্রাউন্ডওয়ার্ক হয়ে যায়, তাহলে সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে থাকার ব্যবস্থা করবো। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নতুন ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে তুলে দেয়ার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ কি নিয়েছেন নাকি শুধু ইচ্ছার কথাই জানিয়েছেন?

অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম: দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। আমরা সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে কাজ শুরু করেছি। আমরা বেশ কিছু কাজ করেছি এ লক্ষ্যে। আমাদের ইচ্ছার কমতি নেই। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস:  নতুন ক্যাফেটেরিয়ার কাজ এখনও শুরু হয়নি। এ বিষয়ে আপনি কি পদক্ষেপ নিবেন?

অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম: দ্বিতীয় ক্যাফেটেরিয়ার বিষয়টিও আমার নজরে এসেছে। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থী পড়াশোনা করবে, সারাদিন এখানে থাকবে। তারা যদি ভালো খাবার না পায় তাহলে তাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে না। আমি যুক্ত হয়েছি খুব অল্প কয়েকদিন হয়েছে। তবে খুব দ্রুত এই কাজ করতে আমরা কাজ করবো। ইতিমধ্যে ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মান উন্নয়নের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি এবং কিছুটা সফলও হয়েছি। খাবারের মান উন্নত রাখতে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করবো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পূর্বের প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিদের বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে তদন্তমূলক কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না? 

অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম: এ বিষয়ে আমার অবস্থান সুস্পষ্ট। আমি দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান সব সময় বজায় রাখবো। আমার ইচ্ছা, আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ, শিক্ষার্থীবান্ধব একটি বিশ্ববিদ্যালয় হবে। এক্ষেত্রে, আমাদের আইন ও বিধিবিধানের বাইরে কোনো কর্মকাণ্ড যদি পরিচালিত হয়ে থাকে আর সেটার তদন্তের প্রয়োজন হলে আমরা সেটা করবো। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: জবিতে অবন্তীকা নামে একজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার ঘটনায় তদন্ত কমিটি এখনো কোনো রিপোর্ট দেয়নি। এ ব্যাপারে আপনার চিন্তা-ভাবনা কি?

অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম: অবন্তীকার মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত। এর আগের প্রক্টরিয়াল বডিতে যারা ছিলেন, তারা হয়তো সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এ ইস্যুতে একটি মামলা চলছে আদালতে। আমাদের ইনটার্নালভাবে যে তদন্ত কমিটি, সেটির কোনো প্রতিবেদন আমি পাইনি। যদি নতুন করে তদন্তের দরকার হয়, তবে সেটি করা যেতে পারে। পূর্বের তদন্ত কমিটি অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে প্রায় নেই বললেই চলে। তবে আমরা চাই এর উপযুক্ত বিচার হোক।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: জবিতে গবেষণা খাতে খুব কম বাজেট থাকে। গবেষণার উন্নয়নে আপনার প্রশাসন কি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে?

অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম: সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ আমরা গবেষণা খাতে রাখার চেষ্টা করবো। আমরা আরও নতুন নতুন গবেষণার উৎস খুঁজব। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করে আমরা গবেষণার সুযোগ বাড়াবো। বিশ্ববিদ্যালয় হলো শিখন এবং গবেষণার জায়গা। কিন্তু এখানে সেটি নেই বললেই চলে। আমরা সে ব্যবস্থা তৈরি করতে কাজ করবো এই ইচ্ছা আমার আছে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: জকসু নির্বাচন দেওয়ার ইচ্ছা জানিয়েছেন। কত দিনের মধ্যে এটি হতে পারে?  

অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম: আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ এ কিন্তু শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ আছে। কিন্তু ছাত্র রাজনীতি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা হয়নি সেখানে। তবে ছাত্র-ছাত্রীদের গণতান্ত্রিক অনুশীলন বন্ধ করার একেবারেই বিপক্ষে আমি। কিন্তু আমাদের প্রচলিত কালচার পরিবর্তন করতে হবে। সেজন্য আমি মনে করি, জকসু প্রয়োজন। আমাদের আইনে যদি জকসু নির্বাচন করতে কোনো বাধা না থাকে, তাহলে আমরা স্বল্প সময়ের মধ্যে এ আয়োজন করবো। এর লক্ষ্যে আমরা একটা কমিটি করে দেব। ইতিমধ্যে তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘পশ্চিমাদের চাপে বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা গৃহীত হয়েছিল’

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ১৯ বছরে একটি সমাবর্তন পেয়েছে জবি। শিক্ষার্থীরা চায় নিয়মিত সমাবর্তন হোক। সমাবর্তন নিয়ে কি ভাবছেন?

অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম: আমিও আমার শিক্ষার্থীদের সাথে একমত। আমরা খুব দ্রুত যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবো। যত দ্রুত সম্ভব হয় আমরা সমাবর্তন আয়োজন করবো। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সাম্প্রতিক শিক্ষার্থী আন্দোলনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কে বেশ অবনতি ঘটেছে। এ পরিস্থিতির উন্নয়নে কোনো বিশেষ কর্মসূচি নেবেন কী? 

অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম: এ ব্যাপারে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্ক হলো পাঠদানের প্রথম শর্ত। তবে আমাদের শিক্ষার্থী খুবই ভালো যে, আন্দোলনের এত কষ্ট, হয়রানির শিকার হয়েও তারা আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছেন। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আমাদের এখানেই সবার আগে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে আমাদের এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্ক এখনো খুবই ভালো। সুনির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে অবনতি হয়েছে। কিছু শিক্ষক-শিক্ষার্থী জুলাই বিপ্লবের বিপক্ষে থাকায় এটি হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত এর উন্নতি হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে ধন্যবাদ।

অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও ধন্যবাদ।


সর্বশেষ সংবাদ