ঢাবিসহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও ভর্তি অনিশ্চিত

মায়ের সঙ্গে অনিক
মায়ের সঙ্গে অনিক  © সংগৃহীত

অভাব-অনটন মেধাকে দাবিয়ে রাখতে না পারলেও শেষ পর্যন্ত অর্থের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার মেধাবী শিক্ষার্থী অনিকের। দারিদ্র্যের কাছে হার মেনে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত থমকে দাঁড়াবে কি না, সেই আশঙ্কায় দিন কাটছে মেধাবী শিক্ষার্থীর।

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনিক মিয়া ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু অর্থের অভাব বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মেধাবী শিক্ষার্থীর সামনে। অসহায় দরিদ্র বাবা-মা ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ জোগান কীভাবে দেবেন সে চিন্তায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

অনিক মিয়া ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের তালুক শিমুলবাড়ী গ্রামের দিনমজুর আব্দুস ছালামের ছেলে, মা রেনুকা বেগম গৃহিণী। তিন ভাইয়ের মধ্যে অনিক বড়। ছোট দুই ভাই ৫ম ও ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থী। তিন ছেলের পড়াশোনা ও ভরণ-পোষণ যোগাতে পরিবার ছেড়ে রাজধানীতে একটি রাইস মিলে শ্রমিকের কাজ করেন আব্দুস ছালাম। 

২০১৭ সালে শিমুলবাড়ী মিয়াপাড়া নাজিমউদ্দিন বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপি-এ ৪.৭৩ এবং ২০১৯ সালে রংপুর সরকারি কলেজে মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ ৪.৪২ পেয়ে উর্ত্তীর্ণ হন অনিক। স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। 

মেধার পরিচয় দিয়ে ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগও পেয়েছেন তিনি। ভর্তির অপেক্ষমান তালিকায় রয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে তার স্বপ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার।

অনিক বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি ঠিকই কিন্তু আমার ইচ্ছা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। তবে এখনও ভর্তির টাকা যোগাড় করতে পারিনি।’’ নিজের হতাশা আর সীমাবদ্ধতার কথা জানাতে গিয়ে অনিক বলেন, ‘‘আমার বাবা সামান্য দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান। জানিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবো কিনা।’’

অনিকের মা রেনুকা বেগম জানান, ‘‘টাকার অভাবে ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভিটেবাড়ি ছাড়া আমাদের আর কোনো সম্পদও নেই। ছেলের পড়াশোনার খরচ চালাতে পারবো কি না জানি না।’’

তবে মেধাবী এই শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুমা আরেফীন বলেন, ‘‘অনিকের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাওয়া ও তার ভর্তির টাকা যোগাড় না হওয়ার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। সে বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করলে তার ভর্তির বিষয়ে যথাসাধ্য সহায়তা করা হবে।’’


সর্বশেষ সংবাদ