শিশুদের বেলায় করোনার চেয়েও ডেঙ্গু ভয়ানক!

ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু
ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু  © ফাইল ছবি

করোনার মত সমানভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে ডেঙ্গু। রাজধানীর হাসপাতালে গেলে চোখে পড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ। আর যার শিকার হচ্ছে শিশুরা। শিশুদের বেলায় করোনার চেয়েও ডেঙ্গু ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে। 

করোনার চেয়েও শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গু। চিকিৎসকরা বলছেন, অন্য কোনও জটিলতা ছাড়া যদি শিশুরা করোনায় আক্রান্ত হয় তবে তাদের মৃত্যুঝুঁকি খুব একটা থাকে না। কিন্তু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে সময়মতো চিকিৎসা না পেলেই মারা যাচ্ছে শিশুরা।

ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২১ আগস্ট সকাল ৮টা পর্যন্ত পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছে ৩৩১ শিশু। এদের মধ্যে এক বছরের নিচে ২৮ জন, ১-৫ বছরের মধ্যে ৯৬, ৫-১০ বছরের মধ্যে ১২৯ ও ১০ বছরের বেশি ভর্তি হয়েছে ৭৮ জন। এখন ডেঙ্গু আক্রান্ত ৮০ শিশু ভর্তি আছে। আইসিইউতে আছে ১৪ শিশু। ২০ আগস্ট সকাল থেকে ২১ আগস্ট সকালে ভর্তি হয়েছে সাত শিশু। তার আগের ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ১৭ জন।

১৯ আগস্ট রাত ১১টায় রাজধানীর মহাখালী থেকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয় ৯ বছরের ইসমাইল। মারা যায় রাত ১২টার কিছু সময় পরেই। চিকিৎসকদের ভাষ্যে ইসমাইল এসেছিল শেষ মুহূর্তে। চিকিৎসার জন্য সে ডাক্তারদের সময়ই দেয়নি। শিশু হাসপাতালে আনার পর সরাসরি তাকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হলেও তখন ইসমাইলের রক্তচাপ ও পালস পাওয়া যাচ্ছিল না। তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে মাত্র দেড় ঘণ্টা পেয়েছিলেন এখানকার চিকিৎসকরা।

চিকিৎসকরা বলছেন, তাদের তিনজনের অবস্থাই ছিল ইসমাইলের মতো। ঢাকা শিশু হাসপাতালের রোগতত্ত্ববিদ ডা. কিংকর ঘোষ বলেন, জানুয়ারি থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৩৫৪ শিশু এখানে ভর্তি হয়েছে। জুলাইতে ভর্তি হয়েছে ১০৪ জন। আগস্টের ২০ দিনে ২৩৩ শিশু। গত সাত দিনে ভর্তি ৯৩ শিশু।

নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে কিংকর ঘোষ বলেন, ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালের ডেঙ্গু পরিস্থিতি আমি দেখেছি। কখনওই এ হাসপাতালে একসঙ্গে ৬৯ জনের বেশি ভর্তি ছিল না। এবার রেকর্ড ছাড়িয়ে আজ ৮০ জন ভর্তি আছে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে। এর মধ্যে গত জুলাইতে ১২ জন আর চলতি ২১ আগস্ট সকাল পর্যন্ত মারা গেছে ২৩ জন। তবে তাদের মধ্যে কতজন শিশু বা বয়স বিবেচনায় পরিসংখ্যান জানায়নি আইইডিসিআর।

শিশুদের ক্ষেত্রে করোনার চেয়েও ডেঙ্গু ভয়ংকর মন্তব্য করে কিংকর ঘোষ বলেন, ‘শিশু হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা নেওয়া ৬০০ শিশুর চিকিৎসা দেওয়ার অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। শুধু কোভিড নিয়ে কোনও শিশুর অবস্থা খারাপ হয়েছে বা মারা গেছে এমনটা ঘটেনি। যাদের অন্য জটিলতা ছিল তারা করোনাতে মারা গেছে। কিন্তু ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে পুরো চিত্রটা ভিন্ন। এখন ডেঙ্গু হলে সময়মতো চিকিৎসা না পেলেই একটা শিশু মারা যাবে।’

কিংকর ঘোষ আরও বলেন, “কোনও শিশুর জ্বর হলেও যখন অভিভাবকরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন না বা বাড়িতে অপেক্ষা করছেন- তখনই ডেঙ্গুর জটিলতা বাড়ছে। যেমন রক্তচাপ কমে যাওয়া, প্লাটিলেট কমে যাওয়া। এগুলো অনেক সময় বোঝাও যায় না। এ সময়টুকুতেই শরীরের অন্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। এসব কারণেই শিশুদের অবস্থা জটিল পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। যখন এসব জটিলতা নিয়ে শিশু হাসপাতালে আসে তখন সেসব ‘ম্যানেজ’ করা সমস্যা হয়ে যায়।”

 

 


সর্বশেষ সংবাদ