কিডনির পাথর চিকিৎসায় হোমিও প্রতিবিধান

  © সংগৃহীত

কিডনি মানবদেহের অন্যতম প্রধান অংশ। বেঁচে থাকার জন্য যেমন মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্র জরুরি, ঠিক তেমনি জরুরি হলো কিডনি। কিডনি না থাকলে মানুষের জীবনধারণ অসম্ভব। সাধারণত মানুষের পেটের ভেতর মেরুদণ্ড বা শিরদাঁড়ার উভয় পাশে একটি করে মোট দুটি কিডনি থাকে। কিডনিগুলো দেখতে অনেকটা সিমের মতো।

কিডনি রোগগুলোর মধ্যে স্টোন বা পাথর হওয়া অন্যতম। কিডনি স্টোনের প্রাথমিক লক্ষণগুলো নির্ভর করে কিডনির কোথায় স্টোন আছে এবং কীভাবে আছে। স্টোনের আকার আকৃতিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। পাথর খুব ছোট হলে সেটি কোনো ব্যথা ছাড়াই দীর্ঘদিন এমনকি কয়েক বছর পর্যন্ত শরীরে সুপ্তভাবে থাকতে পারে! স্টোনটি বড় হলে বা বড় হতে শুরু করলে এটি কিডনির ভেতরে ক্ষতের সৃষ্টি করে এবং ব্যথা অনুভূত হয়। কিডনির মধ্যে শক্তদানার মত কঠিন পদার্থ বা স্টোনের মত জমা হলে তাকে রোনাল স্টোন বা কিডনি পাথর বলা হয়, তাই আজ কিডনি পাথর নিয়ে লেখা এখান থেকে শুরু....

এ পাথর কখনো মূত্রগ্রন্থি, কিডনি, মূত্রনালী, আবার কখনো মূত্রথলিতে এসে জমা হয়। যার ফলে বিভিন্ন সমস্যাসহ প্রস্রাব বন্ধ বা অবরোধ হতে পারে। কিডনির প্রধান কাজ হলো শরীরের রক্ত থেকে ময়লা আবর্জনা ও পানি প্রসাব আকারে শোধন করে বের করে দেয়। দুটি ইউরেটারের মাধ্যমে প্রসাব মূত্রথলিতে এসে জমা হয়। তারপর প্রয়োজন মতো বেরিয়ে আসে। আমরা সারাদিন যে খাবার গ্রহণ ও পান করি তা হতে শরীরের প্রয়োজনীয় পদার্থ বা অংশ শরীর কোষ নিজে রাখে। বাকী অপ্রয়োজনীয় অংশ বজ্য পদার্থ হিসাবে রক্তের সাথে মিশে কিডনি এ বর্জ্য পদার্থ রক্ত থেকে বের করে প্রস্রাব আকারে নিঃস্বরণ করে।তাছাড়া আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও কিডনি পালন করে থাকে।

পাথর যে কারণে হয়: কিডনিতে অনেক রকম স্টোন হতে পারে, যেমন ইউরিক স্টোন,স্ট্রভাইন স্টোন, সিস্টিক এবং ক্যালসিয়াম স্টোন হতে পারে। যে খাবারে ইউরিয়া বা ইউরিক এসিড বেশি থাকে এবং ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবারের কারণেও কিডনি সমস্য দেখা দিতে পারে।

যারা প্রতিনিয়ত পান খান তারাও ক্যালসিয়াম খাচ্ছে। অর্থাৎ যিনি পানের সাথে চুন খাচ্ছেন আর চুনে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম থাকে। একটু ভেবে দেখুনত চুন আর মিষ্টি মশলা খাচ্ছেন তাদের জন্য কি এটা হওয়া খুব অসাধারণ?

অতিরিক্ত স্নেহ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করে যারা রক্ত সংবহন ক্রিয়ার ব্যাঘাত, পরিপাক বা পরিপোষন কাজের ব্যাঘাত, যে কোন সংক্রামক রোগ যদি মুত্রযন্ত্র আক্রমণ করে, শরীের হতে অতিমাত্রায় ঘাম নির্গত হওয়ার ফলে, জলবায়ু, পেশী,সর্বপরি বংশে থাকলেও হতে পারে।

কিভাবে বুঝবেন কিডনির পাথর আছে? যে কোন বয়সের নারী-পুরুষ সকলেরই কিডনিতে পাথর জমতে পারে, বার বার প্রস্রাবের বেগ, বেদনা কিডনি বরাবর হয়ে নিম্ন কুচকির দিকে, পেটে ও বুকেও প্রসারিত হতে পারে। কুচকি, অণ্ডকোষ প্রভৃতি স্থানে অত্যন্ত যন্ত্রণা হতে পারে। যে কোন ভারী জিনিস তুলতে গেলে বা রাতে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ বেদনা হতে পারে। অণ্ডকোষ উপরের দিকে টেনে ধরার মত অনুভব হতে পারে। কখনো ও হঠাৎ বেদনা ও যন্ত্রণা বা সব সময় বেদনা থাকতে পারে।

বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে। হিক্কা কপালে ঘাম, নাড়ী দ্রুত ক্ষীণ, দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে ১০৩ থেকে১০৫ ডিগ্রী পর্যন্ত। সর্বদাই প্রস্রাব করার ইচ্ছা থাকে কিন্ত প্রস্রাব বাহির হয় না। প্রস্রাব ফোটা ফোটা বের হয়। তলপেটে ব্যথা হয়, প্রস্রাবে পুঁজ-রক্ত মিশ্রিত থাকতে পারে। রক্ত প্রস্রাব, প্রস্রাব ধোঁয়ার মত দেখায়। দু’তিন নালে প্রসাব হতে পারে। প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কোন কোন অবস্থার প্রেক্ষিতে রোগী বোধ করে পাথর যেন নড়া চড়া করে।

ছোট বাচ্ছারা প্রস্রাব করতে গিয়ে কান্না করতে পারে। যথা সময়ে চিকিৎসা না নিলে এর জটিলতা কিডনির প্রদাহ, শরীর হাত-পা ফুলে যেতে পারে। মূত্র অবরোধ হয়ে যন্ত্রণায় অস্থির ও অজ্ঞান হতে পারে।

যা করতে হবে আপনাকে: পানি পানের অভ্যাস রাখতে হবে প্রয়োজন মতো  শরীরে ঠান্ডা লাগানো যাবে না। বেদনা উপশমের জন্য হালকা গরম সেক দেওয়া যেতে পারে। হাটাহাটিতে বা ঝাঁকিতে অনেক সময় পাথর নেমে আসতে সাহায্য করে। দুধ, সাগু, বার্লি, দধি সুপথ্য, লেবুর শরবত বিশুদ্ধ পানি, বিশুদ্ধ বায়ু গ্রহণ করা প্রয়োজন।

করনীয়ঃ রোগ নিয়ে অবহেলা করা যাবে না। চুন- সুপারি খাবেন না।  অম্ল, অর্জনকর দ্রব্য, মদ্যপান, মাংস, গুরুপাক খাদ্য বর্জন করবেন। পেইনকিলার দীর্ঘদিন সেবন না করা উত্তম ।

হোমিওপ্রতিবিধানঃ রোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয়। এই জন্য এক জন অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকে রোগীর পুরা লক্ষণ নির্বাচন করে চিকিৎসা দিতে  পারলে তাহলে পিথ পাথরে রোগীর চাইতে কিডনী পাথর রোগীর চিকিৎসা দেওয়া অল্প সময়ে সম্ভব।

হোমিও চিকিৎসাঃ হোমিওপ্যাথিতে কিডনির স্টোনের জন্য অনেক মেডিসিন আছে। তবে ঔষধ গুলো এলোপ্যাথির ন্যায় ধারাবাহিক ভাবে প্রয়োগ করা চলে না। যেমন, লাইকোপোডিয়াম, লিথিয়াম কার্ব, সার্সাপেরিলা,থ্যালাপসি- বার্সা, এপিজিয়া, ক্যানথারিস ও ক্যালকেরিয়াসহ অনেক মেডিসিন লক্ষণের উপর আসতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞ হোমিও চিকিৎসক ছাড়া নিজে নিজে মেডিসিন ব্যবহার করলে রোগ আরো জটিল আকার পৌছতে পারে।

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি কেন্দ্রীয় কমিটি
কো- চেয়ারম্যান, হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
ই-মেইল: drmazed96@gmail.com
মোবাইল নং: 01822869389


সর্বশেষ সংবাদ