হাত দিলেই ঝরছে চুল? জেনে নিন করণীয়

সারা বছরই মানুষের নানা কারণে কমবেশি চুল পড়ে
সারা বছরই মানুষের নানা কারণে কমবেশি চুল পড়ে  © সংগৃহীত

অনেকেই চুল পড়ার সমস্যা নিয়ে চিন্তিত। চুল পড়া খুব কমন একটি সমস্যা। সারা বছরই মানুষের নানা কারণে কমবেশি চুল পড়ে। নামি-দামি প্রসাধনী ব্যবহার করেও সুফল পাচ্ছে না। ঠিকঠাক যত্ন নিয়েও কেন এমনটা হচ্ছে বুঝতে পারেন না অনেকে। পরিবেশ দূষণ ও ধুলাবালিসহ বিভিন্ন কারণে চুলের কাঙ্ক্ষিত মান ধরে রাখা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। 

আমরা জানি যে, প্রতিদিন ১০০-১৫০টি চুল পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু যখনই অতিরিক্ত চুল পড়ে, চুলের গোছা পাতলা হয়ে যায়, মাথার সামনে টাক পড়তে থাকে- তখনই আমাদের টনক নড়ে। অনেকের মুখেই শুনেছি যে, প্রতিদিন নিয়ম করে চুল ধোয়া, কন্ডিশনার লাগানো, তেল দিয়ে ম্যাসাজ করা সবই তো করছি, কিন্তু মাথার চুল সব পড়ে যাচ্ছে!

চুল ভালো রাখার জন্য যথেষ্ট যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। ঠিকভাবে যত্ন নিতে না পারলেই চুলের বারোটা বাজতে শুরু করে। চুল পড়ে যায়। নাহলে চুল রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে ওঠে। এরকম আরও কিছু সমস্যায় জর্জরিত হয়ে যান তখন। এসব সমস্যার অন্যতম কারণ হয় অযত্ন, দূষণ ও আবহাওয়া। কারও কারও ক্ষেত্রে গুরুতর অসুখ বা অন্যান্য সমস্যাও এর কারণ হয়ে উঠতে পারে।

শ্যাম্পু ব্যবহারে সতর্কতা 
সবার চুলে সব শ্যাম্পু সহনীয় হয়না। ফলে যেটা মাথার ত্বকের সাথে মানিয়ে নিচ্ছে, সেটা ব্যবহার করা উচিত। তাছাড়া চুল পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে লক্ষণীয় যে, শ্যাম্পুতে সালফেট, প্যারাবেন এবং সিলিকনের মতো পদার্থগুলো বেশি উপস্থিত না থাকাই ভালো। কারণ এগুলো চুলকে ভেঙে ফেলে। তাছাড়া চুলের গোড়া শক্ত করতে কন্ডিশনার ব্যবহার করা যেতে পারে। কেননা এতে অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, যা ক্ষতিগ্রস্ত চুলকে মেরামত করার পাশাপাশি মসৃণ রাখতে সহায়তা করে।

মাথার ত্বক ম্যাসেজ করা
চুলের গোড়া মজবুত করতে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আঙ্গুল দিয়ে নিয়মিত মাথার ত্বক ম্যাসজ করলে চুলের গোড়া শক্ত হয়। এটা শ্যাম্পু লাগানোর ঠিক আগে অথবা চুল ভেজা অবস্থায় করা যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, মাথার ত্বকে রক্ত ​​সঞ্চালন বাড়ার ফলে চুল মজবুত হয়েছে। তাছাড়া প্রতিদিন অন্তত চার মিনিটের স্কাল্প ম্যাসাজ সময়ের সাথে সাথে চুলের ঘনত্ব এবং শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।

খাবারে প্রোটিন বৃদ্ধি
পর্যাপ্ত প্রোটিনের অভাবে চুল পড়ে যায়। কেননা চুলের ফলিকলে বেশিরভাগ প্রোটিন থাকে। যা চুলকে মজবুত ও ঘন করতে সহায়তা করে। তাই নিয়মিত দুধ, ডিম, মাছ, পালং শাক ও মটরশুটির মতো প্রোটিন খেলে চুল মজবুত ও ঘন করতে সহায়তা করে।

স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখতে হবে
শ্যাম্পু করার কিছু নিয়ম আছে। তা কি আপনি জানেন? শ্যাম্পু চুলে লাগানোর পরিবর্তে স্ক্যাল্পে লাগানো অভ্যাস করুন। তার কারণ, শ্যাম্পু ক্লিনজারের কাজ করে। স্ক্যাল্প ক্লিনজিং করুন শ্য়াম্পুর সাহায্যে। এর জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন স্ক্যাল্প পরিষ্কার করতে পারেন। মাইল্ড শ্যাম্পু নিয়ে ভালো করে স্ক্যাল্পে লাগিয়ে নিন। স্ক্যাল্প ঘষে পরিষ্কার করতে নিন। চাপ দেবেন না। বাড়তি ফেনা চুলেও লাগিয়ে নেবেন। এতে আপনার স্ক্যাল্প পরিষ্কার থাকবে, তাই চুলের সমস্যাও ভোগাবে না

চুলের বৃদ্ধিতে ডিমের কুসুম
ডিমের কুসুমে একই প্রোটিন থাকে, যা চুলে শক্তিশালী ফলিকল তৈরি করে। কেননা ডিমের কুসুমে ভিটামিন এ এবং ডি, বায়োটিন এবং ফোলেট সহ চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক এমন বেশ কিছু প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে। গবেষণা অনুসারে, ডিমের কুসুমে থাকা পেপটাইডগুলি চুলের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করতে পারে। সেজন্য ডিমের কুসুমের সাথে হালকা গরম তেল একসাথে মিশিয়ে চুল ও মাথার ত্বকে ব্যবহার করা যেতে পারে। তারপর আধ ঘন্টা রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।

ডায়েটেও নজর দিতে হবে

ডায়েটেও নজর দিতে হবে
চুলের সমস্যা সমাধান করার জন্য শুধুই তেল শ্যাম্পু মাখলে হবে না। বরং নিজের ডায়েটেও নজর দিতে হবে। অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে তার প্রভাব আপনার চুলেও পড়তে পারে। তাই সব সময় ডায়েট স্বাস্থ্যকর করে তোলার চেষ্টা করুন। প্রোটিন, ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খান। ফ্ল্যাক্সসিড, চিয়া সিড, রাজমা, জিরে, মেথি কিন্তু চুলের জন্য খুবই ভালো। তাই দৈনন্দিন ডায়েটে এগুলি যোগ করতে পারেন।

গরম তেল ব্যবহার
শুষ্ক, ঝরঝরে বা ক্ষতিগ্রস্থ চুলে আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে হট অয়েল ট্রিটমেন্ট একটি জনপ্রিয় উপায়। এটা নারকেল কিংবা আভাকাডো তেল হতে পারে। গবেষণা অনুসারে, নারকেল তেল ক্ষতিগ্রস্থ এবং অক্ষতিগ্রস্থ উভয় চুলেই প্রোটিনের ক্ষয়রোধ করতে সহায়তা করে। এছাড়া অ্যাভোকাডো তেলেও প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিডের পাশাপাশি ভিটামিন এ, বি-৫ ও ই রয়েছে। যা চুলকে ঘন ও মজবুত করতে সহায়তা করে।

রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার কমানো
সবাই চুলকে ঘন ও ঝলমলে রাখতে চায়। ফলে অনেক সময় চুলে বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে থাকেন। বিশেষ করে ব্লো ড্রায়ার, স্ট্রেটেনিং আয়রন, হট কার্লার সহ অন্যন্য উত্তপ্ত স্টাইলিং দ্রব্য। যা চুলকে ভঙ্গুর ও গোড়া দুর্বল করে। তাই বিশেষজ্ঞরা চুলে অধিক পরিমাণ রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। 

চুল পড়া রোধ করে তেজপাতা
চুল পড়া রোধ করতে ঘরোয়া পদ্ধতিতে তেজপাতা দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন হেয়ার প্যাক। যা আপনার চুল পোড়া বন্ধ করবে এবং ফিরিয়ে আনবে আপনার হারিয়ে যাওয়া চুলের উজ্জ্বলতা। তেজপাতা গুঁড়া করে এর সাথে টক দই মিশিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করে নিতে পারেন। গোসলের আগে এই প্যাক চুলে ব্যবহার ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ভালো করে শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিন। এছাড়া তেজপাতা পানিতে ফুটিয়ে পানি ছেঁকে নিন । এই পানি দিয়ে নিয়মিত চুল ধুলে বেশ ভালো উপকার পাবেন।

তেজপাতার গুনাগুন ও চুল পড়া রোধ করতে তেজপাতার ব্যবহার।

দেহে পুষ্টির মাত্রা ঠিক রাখা
চুল শক্তিশালী ও ঝলমলে করতে দেহে পর্যাপ্ত খনিজ ও ভিটামিন থাকা প্রয়োজন। গবেষণায় দেখা গেছে, চুল পড়ার সাথে পুষ্টির ঘাটতির সম্পর্ক রয়েছে। সেজন্য দেহে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজের ভারসাম্য ঠিক থাকা প্রয়োজন।

প্রতিদিন নিয়ম করে চুলের যত্ন নেওয়া অভ্যাস করুন। আর যদি অস্বাভাবিক চুল পড়া বন্ধ না হয় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence