রাজনীতি-সাংবাদিকতাসহ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের যেসব কর্মকাণ্ড বন্ধ চান ডিসিরা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২৬ AM
এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা সরকার থেকে এখন মূল বেতনের পুরোটা পান। এর সঙ্গে সামান্য কিছু ভাতা দেওয়া হয় তাদের। তবে বেসরকারি হওয়ায় তারা শিক্ষকতা ছাড়াও অন্য পেশায় যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় দেখা যায় তাদের। শিক্ষকদের এসব সুযোগ বন্ধ হওয়া উচিত বলে মনে করছেন জেলা প্রশাসকেরা (ডিসি)।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ৬৪ জেলার ডিসি ও আট বিভাগীয় কমিশনারের মতবিনিময় সভায় এ প্রস্তাব ওঠে।
বৈঠক সূত্র জানায়, রাজশাহী বিভাগের এক ডিসি বলেন— এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা পুরো মূল বেতন সরকার থেকে পান এবং নির্বাচনে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। তাই রাজনৈতিক দলের পক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান সুষ্ঠু ভোটগ্রহণে বাধা তৈরি করতে পারে।
এর আগে ২০২৩ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ডিসিরা প্রস্তাব দিয়েছিলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের এই সুযোগ বন্ধ করার। তবে সরকারের তরফে এ বিষয়ে এখনও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সরকারি কর্মচারীর মতো একটি বিধিমালা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ঝিনাইদহের তৎকালীন ডিসি মনিরা বেগম। প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলা হয়েছিল, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সরাসরি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এতে পাঠদান কার্যক্রমে তাদের দায়সারা আচরণ দেখা যায়। বিধিমালা হলে শিক্ষকতার পাশাপাশি ঠিকাদারি, সাংবাদিকতাসহ একাধিক পেশায় যুক্ত থাকার প্রবণতা ঠেকিয়ে শিক্ষকদের পাঠদানে আন্তরিক করা যাবে। বিধিমালা বা নীতিমালা থাকলে শিক্ষকতা পেশায় থেকে রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণে নিরুৎসাহিত করাও সম্ভব।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব শেখ আব্দুর রশীদের সঞ্চালনায় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব এ সময় জাতীয় নির্বাচন-সংক্রান্ত বিষয়ে ডিসিদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন।
এ সভায় দুজন ডিসি জানিয়েছেন, ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিলে রাজনৈতিক বক্তব্য না দেওয়ার বিধান জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালায় যুক্ত করা উচিত। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ নিয়ে দ্বন্দ্ব বাড়ছে।
সভায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এবারের নির্বাচন গতানুগতিক নির্বাচন নয়, এটি দেশ রক্ষার নির্বাচন। আগামী নির্বাচন ও গণভোটে শতভাগ সততা, নিরপেক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
নির্বাচন নিয়ে ডিসি ও কমিশনারদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আগামী নির্বাচন শুধু পাঁচ বছরের সরকার গঠনের একটি নির্বাচন নয়, গণভোট যুক্ত হওয়ায় এটি আরও তাৎপর্যপূর্ণ। এটি সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী একটি নির্বাচন। জাতি বহু প্রহসনের নির্বাচন দেখেছে, সেই স্মৃতি ছাপিয়ে যেতে আমাদের ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি বলেন, এই নির্বাচন গণঅভ্যুত্থানকে পূর্ণতা দেওয়ার নির্বাচন। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতির জন্য নির্ধারিত হবে শতাব্দীর গতিপথ। এই নির্বাচনে জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনোভাবেই ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই। নির্বাচনের মাধ্যমে জাতি নবজন্ম লাভ করবে এবং জেলা প্রশাসকরা থাকবেন ধাত্রীর ভূমিকায়।