অধ্যাদেশ জারি

ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্তের মালিক নাগরিক, সরকার বা বেসরকারি কোম্পানি নয়

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়  © ফাইল ছবি

ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্ত তার মালিকানাধীন জানিয়ে তা সুরক্ষিত রাখা এবং এর অপব্যবহার করলে শাস্তির বিধান রেখে নতুন দুই অধ্যাদেশ পাস করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করে। এগুলো ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ ও ‘জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নামে অভিহিত হবে।

এতে বলা হয়েছে, সব ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্তের মালিক নাগরিক নিজে। এসব সরকার বা বেসরকারি কোম্পানির নয়। কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত উপাত্ত তার মালিকানাধীন গণ্য করে তাহার সম্মতিতে আইনসম্মতভাবে প্রক্রিয়াকরণ করা যাবে।

ব্যক্তিগত উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে ব্যক্তির মৌলিক অধিকার, বিশেষত উপাত্তের গোপনীয়তা, বিশ্বস্ততা, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ ন্যায্যতা, আন্তঃপরিবাহিতা, ডিজিটাল অর্থনীতির সম্ভাবনা সুরক্ষিত করা এবং দায়িত্বশীল উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার জন্য এ অধ্যাদেশ করা হয়েছে। 

প্রক্রিয়াকরণ আইনসম্মতভাবে পরিচালনা ও নিরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে উপাত্ত-জিম্মাদার ও প্রক্রিয়াকারীর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন ও প্রতিকার নিশ্চিত করাও এর উদ্দেশ্য। কেউ ব্যক্তি বা শিশুর তথ্য তিনি নিজে যথাযথ যথাযথ অভিভাবকের সম্মতি বা চুক্তির আলোকে ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা করতে পারবেন।

অধ্যাদেশে কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ দায়ের ও প্রশাসনিক জরিমানারও বিধান রাখা হয়েছে। কেউ উপাত্তধারীর অধিকার লঙ্ঘন করলে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। উপাত্তধারীর অধিকার লঙ্ঘিত হইলে প্রশাসনিক জরিমানারও বিধান রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আইন অমান্যকারীদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে অধ্যাদেশে।

অধ্যাদেশের বিষয়ে ষুশ্মিট আষিফ নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ পাস হয়েছে। এটা সবার জন্য বিশেষ দিন। এ দুই অধ্যাদেশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হলো বাংলাদেশের নাগরিকদের সব উপাত্তের মালিক সে নিজে, সরকার বা বেসরকারি কোনও কোম্পানি তার উপাত্তের জিম্মাদার মাত্র। 

আরও পড়ুন: ট্রাস্টি বোর্ডে একই পরিবারের ৫ জনের বেশি সদস্য নয়

অনুমতি বা বৈধ ভিত্তি ছাড়া কেউ-ই নাগরিকের উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণ করতে পারবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের আইনি সুরক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে প্রোফাইলিং, মনিটরিং ইত্যাদির থেকে। বাকি এনফোর্সমেন্ট অভিভাবক ও আদালতের হাতে। পৃথিবীর কয়েক ডজন দেশের উপাত্ত-সুরক্ষা আইন স্টাডি করে দেখা গেছে, এই অধ্যাদেশটি নানান আঙ্গিকে নাগরিককে অধিকতর সুরক্ষা দেয় এবং অপব্যবহার দমন করে।’

‘এমনকি সরকারি অফিসার বা সরকারি দপ্তরও যদি নাগরিকের উপাত্তের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে, সেও শাস্তির আওতার বাইরে নয়। নাগরিকের সম্মতি না নিয়ে কেউ উপাত্ত প্রক্রিয়া করলে বা প্রকাশ করলে ক্ষতিপূরণ এমনকি শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ইউরোপ আমেরিকার নাগরিক আইনিভাবে যতখানি সিকিওর্ড, আমরাও আর কম যাই না। এখন আপনার ডেটা কোনও কোম্পানি দির্লি নিতে চাক আর ব্রিটেনে, আপনার সম্মতি গ্রহণ করতে হবে’, যোগ করেন তিনি।

ষুশ্মিট আষিফ বলেন, ‘যে দেশে উপাত্ত ডার্ক-ওয়েবে ঘোরে, সে দেশে উপাত্তের শৃঙ্খলা এনে নতুন প্রযুক্তির যুগে বাংলাদেশের প্রবেশের আইনি ভিত্তি খুবই প্রয়োজন ছিল। যার অভাবে আটকে ছিল, অনেক ইনভেস্টমেন্ট ও অগ্রগতি, অনিরাপদ ছিল আমাদের উপাত্ত। এমনকি ক্লিয়ার অনিয়ম দেখলেও অনেক ক্ষেত্রে আইনি ভিত্তির অভাবে পদক্ষেপ নেওয়া যেত না- সেই কলঙ্ক থেকে দেশ কিছুটা মুক্তি পেল। এটা একটা ঐতিহাসিক দিন।’


সর্বশেষ সংবাদ