মাটির ঘরে ‘ই-পোস্ট সেন্টার’, নেই ভবন-ইন্টারনেট-কম্পিউটার
- আতিকুল হা-মীম, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:০৬ PM , আপডেট: ৩০ নভেম্বর -০০০১, ১২:০০ AM

অবকাঠামোগত উন্নয়ন আর তথ্যপ্রযুক্তির জোয়ারে দেশজুড়ে যখন ডিজিটাল সেবা বিস্তৃত হচ্ছে, তখন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বরখাইন ইউনিয়নে সরকার হাটের পাশে এক টুকরো ব্যতিক্রম—মাটি আর ধানের তুষে তৈরি একটি ক্ষুদ্র ঘরে চলছে ‘ই-পোস্ট সেন্টার’। নেই কোনো সরকারি ভবন, নেই ইন্টারনেট কিংবা কম্পিউটার; আধুনিকতার ছোঁয়া না লাগলেও, এই পুরোনো কাঠামো এখনও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে এলাকার ডাকসেবার একমাত্র ভরসা হয়ে।
চার ফুট বাই চার ফুট আয়তনের ছোট্ট ঘরটিই বর্তমানে এই অঞ্চলের মানুষের চিঠিপত্র পাঠানো ও গ্রহণের কেন্দ্র। আধুনিকতা থেকে বহু দূরে এই ডাকঘরের ওপর নির্ভর করে আশপাশের অন্তত ছয় কিলোমিটার এলাকার বাসিন্দারা। কর্মী মাত্র দুজন—পোস্টমাস্টার মোহাম্মদ আমির হোসেন ও রানার মিজানুর রহমান। নিজেদের সামর্থ্য দিয়েই বছরের পর বছর ধরে এই সেবা চালু রেখেছেন তারা।
ডাকঘরটির কোনো নিবন্ধিত সরকারি ভবন নেই। সাবেক সংসদ সদস্য সারওয়ার জামাল নিজামের পরিবারের মৌখিক অনুমতিতে তাদের পূর্বপুরুষদের তৈরি এই মাটির ঘরেই চলছে দাপ্তরিক কার্যক্রম। ২০১৭ সালে এটিকে ‘ই-পোস্ট সেন্টার’ হিসেবে ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত নেই কোনো কম্পিউটার, প্রিন্টার বা ইন্টারনেট সংযোগ। ডাক বিভাগের পক্ষ থেকে বরাদ্দ পাওয়া এসব যন্ত্রপাতি এখনো পড়ে রয়েছে পটিয়া ডাকঘরে।
ডাকঘরের রেজিস্ট্রার খাতা অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই কেন্দ্র থেকে ৯১টি চিঠি প্রেরণ ও গ্রহণ করা হয়েছে, আগের মাসে এই সংখ্যা ছিল ৬১। এসবের বেশিরভাগই সরকারি ও চাকরিসংক্রান্ত চিঠিপত্র, ব্যক্তিগত চিঠির সংখ্যা এখন একেবারেই নগণ্য।
পোস্টমাস্টার আমির হোসেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ঘরের ছাদে টিন ফুটো হয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে, দেয়ালে স্যাঁতসেঁতে ভাব, দরজা-জানালায় ঘুণ ধরেছে। বিদ্যুৎ বিল থেকে শুরু করে মেরামতের খরচ সবই আসে তার ব্যক্তিগত খাত থেকে। মাসিক অফিস খরচ হিসেবে মাত্র ১৫ টাকা বরাদ্দ মেলে, যা দিয়ে কিনতে হয় প্রয়োজনীয় কলম বা কাগজ।
আমির হোসেন বলেন, সরকারি সহায়তা পেলে এই মাটির ঘরটি শুধু একটি ডাকঘর নয়, হতে পারে দেশের ডাকসেবার ইতিহাসের এক জীবন্ত নিদর্শন। পর্যটনের দিক থেকেও এটি হতে পারে স্থানীয়ভাবে আকর্ষণীয় এক কেন্দ্র।
পোস্ট ই-সেন্টারের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডাক বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পোস্টমাস্টার জেনারেল দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী কম্পিউটার, ইন্টারনেট, প্রিন্টারসহ প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রযুক্তি ডিভাইস অবশ্যই আছে। হয়তো নিরাপত্তার জন্য ভবনে রাখতে পারছে না। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।
ভবন নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি মূলত বরাদ্দ-নির্ভর বিষয়। তাই এই মুহূর্তে ভবন নির্মাণ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, জনগণকে ডিজিটাল ডাকসেবা দেওয়ার জন্য দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা দ্রুত সমস্যার সমাধানে কাজ করব।