বেসরকারি স্কুলের ভর্তিতে ৫৯ শতাংশ আসনই কোটা, থাকছে লিল্লাহ বোর্ডিং কোটাও

ক্লাসে শিক্ষার্থীরা
ক্লাসে শিক্ষার্থীরা  © সংগৃহীত

সরকারি স্কুলের মতই বেসরকারি স্কুলগুলোতেও আগামী বছর নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে বেশিরভাগ আসন থাকছে কোটার দখলে। সরকারি স্কুলগুলোতে ক্যাচমেন্ট এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ শতাংশ আসন সংরক্ষণসহ মোট ৬৮ শতাংশ আসন কোটার দখলে রাখা হয়েছিল। একইভাবে বেসরকারি স্কুলগুলোতেও ক্যাচমেন্ট এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ শতাংশ আসন সংরক্ষণসহ মোট ৫৯ শতাংশ আসন কোটায় সংরক্ষণের নির্দেশনা এসেছে। এবার প্রথমবারের মত লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ১ শতাংশ আসন বরাদ্দ থাকবে বেসরকারি স্কুলগুলোতে। 

এমন বিধান রেখে সম্প্রতি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর ভর্তির নীতিমালা জারি করেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রসঙ্গত বিগত বছরগুলোতেও শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সিংহভাগ আসন সংরক্ষিত থাকতো। 

বেসরকারি স্কুলের ভর্তি নীতিমালা থেকে জানা গেছে, সংরক্ষিত কোটার বড় অংশ অর্থাৎ মোট আসনের ৪০ শতাংশ বেসরকারি স্কুল সংলগ্ন এলাকার বা ক্যাচমেন্ট এরিয়ার শিক্ষার্থীদের জন্য বহাল থাকছে। যা বরাবরই ছিল। তাছাড়া বীর ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ৫ শতাংশ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীনস্ত দপ্তর-সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানরা ১ শতাংশ, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা ২ শতাংশ, অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর যমজ ও সহদোর ভাই-বোনরা ৫ শতাংশ কোটায় সংরক্ষিত আসনে ভর্তির সুযোগ পাবেন। আর এর বাইরেও দূর থেকে বদলি হয়ে আসা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানের জন্য ৫ শতাংশ আসন কোটায় সংরক্ষণ করা হবে। আর বেসরকারি স্কুলগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের সন্তানরাও কোটা সুবিধা নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাবেন।  

আরও পড়ুন : সরকারি স্কুলে ভর্তিতে কোটার ছড়াছড়ি, ৬৮ শতাংশ শূন্য আসনই কোটার দখলে

ভর্তি নীতিমালায় বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীর বেসরকারি বিদ্যালয় সংলগ্ন ক্যাচমেন্ট এরিয়ার শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করতে হবে। অবশিষ্ট আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পঞ্চম শ্রেণি থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্যাচমেন্ট এরিয়ার ৪০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ প্রযোজ্য হবে না। একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একই ক্যাচমেন্ট এরিয়ার অবস্থিত হলে শিক্ষার্থীরা যে কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন করতে পারবে। 

বেসরকারি স্কুলে ভর্তিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যার জন্য ৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা আসন নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্রের সত্যায়িত কপি আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত করতে হবে এবং ভর্তির সময় মূল কপি প্রদর্শন করতে হবে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভর্তিযোগ্য সন্তান পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে ওই আসনগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। কোন অবস্থাতেই আসন শূন্য রাখা যাবে না। 

এতে আরও বলা হয়েছে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মূল ধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ন্যূনতম যোগ্যতা থাকা শর্তে ভর্তির ক্ষেত্রে ২ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। তবে ভর্তির সময় এ সংক্রান্ত প্রমাণ হিসেবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়ন দাখিল করতে হবে। ওই আসনে কোন শিক্ষার্থী পাওয়া না গেলে অপেক্ষমান তালিকা থেকে শূন্য আসন পূরণ করতে হবে।

শিক্ষার মূলধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে সারাদেশে লিল্লাহ বোর্ডিয়ে অবস্থানরত শিশুতে নিকটস্থ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যথাযথ প্রত্যয়ন সাপেক্ষে ভর্তি করতে হবে। এক্ষেত্রে ১ শতাংশ আসন সংরক্ষণ থাকবে। 

শিক্ষার মূলধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে সারাদেশে লিল্লাহ বোর্ডিয়ে অবস্থানরত শিশুতে নিকটস্থ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যথাযথ প্রত্যয়ন সাপেক্ষে ভর্তি করতে হবে। এক্ষেত্রে ১ শতাংশ আসন সংরক্ষণ থাকবে। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ দপ্তর-সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের ক্ষেত্রে মহানগর, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তান ভর্তির আবেদনের সময় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে হবে। 

নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, কোন বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদনকারী শিক্ষার্থীর যমজ ভাই-বোন যদি পূর্ব থেকে অধ্যয়নরত থাকে বা যেসব যমজ ভাই-বোন নতুন আবেদন করবে তাদের জন্য ৩ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। কোন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবেদনকারী শিক্ষার্থীর সহোদর-সহোদরা যদি পূর্ব থেকে অধ্যয়নরত থাকে অথবা যেসব সহোদর-সহোদরা নতুন আবেদন করবে তাদের জন্য ওই বেসরকারি হাইস্কুলগুলোতে ২ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। এ দুই সুবিধাই কোন দম্পতির মোট তিন সন্তান পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে। সহোদর-সহোদরার জন্য নির্ধারিত কোন আসন শূন্য থাকলে যমজ সন্তানদের ভর্তির মাধ্যমে আসন পূরণ করতে হবে। একইভাবে যমজ ভাই-বোনের জন্য নির্ধারিত কোন আসন শূন্য থাকলে সহোদর-সহোদরা দ্বারা পূরণ করা যাবে। কোনক্রমে আসন শূন্য রাখা যাবে না।

আরও পড়ুন : স্কুলে ভর্তিতে এবার বীর মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পরিবর্তন

এছাড়া এক কর্মস্থল থেকে অন্য কর্মস্থলে বদলি হওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে উপপরিচালক, যে জেলায় উপপরিচালক নেই সেখানে জেলা শিক্ষা অফিসারের প্রত্যয়নক্রমে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানতের ভর্তির সুযোগ থাকবে। ক্যাচমেন্ট এরিয়া বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বিদ্যালয় নির্বাচন করে শিক্ষার্থীর ভর্তির প্রত্যয়ন দেবেন। বদলিজনিত কারণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানদের ভর্তির জন্য শ্রেণিকক্ষে স্থান সংকুলান সাপেক্ষে প্রতি শ্রেণিতে মোট আসনের ৫ শতাংশ অতিরিক্ত সংরক্ষিত রাখা যেতে পারে। 

এরবাইরেও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক, কর্মচারী এবং ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের ভর্তির উপযুক্ত সন্তান ভর্তির নূন্যতম যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে ভর্তির সুযোগ পাবেন। তবে পোষ্য বা আত্মীয় স্বজন বা ম্যানেজিং কমিটির জন্য কোন আসন সংরক্ষণ থাকবে না। 


সর্বশেষ সংবাদ