ভর্তি ফি ধার্যে সবার শীর্ষে বঙ্গমাতা বিশ্ববিদ্যালয়
- মো. মুন্তাসির মাহমুদ
- প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৩, ১১:৩২ AM , আপডেট: ৩০ আগস্ট ২০২৩, ১১:৫০ AM
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেফমুবিপ্রবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষের ভর্তি ফি দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ধার্য করা ভর্তি ফি সর্বোচ্চ ২৬,৭২৫ টাকা এবং সর্বনিম্ন ২১,৭২৫ টাকা। বিশাল অংকের এই ফি দিয়ে ভর্তি হতে হিমশিম খাচ্ছেন ভর্তিচ্ছুরা। কর্তৃপক্ষ বলছে, বাজেট কম হওয়ায় ফি বেশি নিতে হচ্ছে। বাজেট বাড়লে এ ধরনের ফি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
নবীন শিক্ষার্থীরা বলছেন, দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীই আসে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে বিশাল অংকের এ টাকা পরিশোধ করে ভর্তি হতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। এমন পরিস্থিতিতে তাদের অনেকে চান্স পেয়েও এখন ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। তারা মানসম্মত ফি নির্ধারণে দাবি জানিয়েছেন।
ভর্তি ফি আমরা জিএসটির নিয়ম অনুসারেই করেছি। আমাদের এটা নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় কোনো ভর্তুকি নেই। সরকার যখন আমাদের সর্বোচ্চ বাজেট দেবে, তখন এসব ফি কমানো সম্ভব হবে। -রেজিস্টার
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার সৈয়দ ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত ভর্তি ফি সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে থাকা ভর্তি ফিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৬,৭২৫ টাকা ধরা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই, ইইই, ফিশারিজ ও ভূতত্ত্ব বিভাগের জন্য। গণিত ও সমাজকর্ম বিভাগে ধার্য করা হয়েছে ২৩,৭২৫ টাকা ও ২৪,৭২৫ টাকা এবং সর্বনিম্ন ২১,৭২৫ টাকা ধার্য করা হয়েছে ব্যবস্থাপনা বিভাগে।
বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি হতে আসা নতুন শিক্ষার্থী ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মাঝে চলছে তীব্র অসন্তোষ। তারা বলছেন, কমানোর বদলে বেড়েই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ফি ছিল সর্বনিম্ন ১৭,২৫০ টাকা। তা এখন ৪,৪২৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ২১,৭২৫ টাকা। যেখানে সর্বোচ্চ ছিলো ২৫,৭৫০ টাকা তা এখন ৯৭৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৬,৭২৫ টাকা।
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হতে আসা মো. ফিরোজ হোসেন বলেন, হাজার সমস্যার মাঝেও অনেক কষ্টে লেখাপড়া করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছি। এটার মূল উদ্দ্যশই ছিল, যাতে সেখানে গিয়ে অল্প খরচে ভালো মানের উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। কিন্তু এখানে যে ভর্তি ফি দেখছি, তা দেওয়া আমাদের অনকের পক্ষেই প্রায় অসম্ভব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বঙ্গমাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ভর্তি ফি ১৩,১৭০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১২,৪৪৫ টাকা। শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ২০,৫০০ এবং সর্বনিম্ন ১৭,৫০০ টাকা। রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ১৮,০৪০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১৬,৮১০ টাকা।
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পূর্বে প্রতিষ্ঠিত সাধারণ ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ভর্তি ফি ১২,৪০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১০,৪০০ টাকা। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ১৭,০৪০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১৬,৪৩৫ টাকা। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ১৪,২০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১৩,৭০০ টাকা।
হাজার সমস্যার মাঝেও অনেক কষ্টে লেখাপড়া করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছি। কিন্তু এখানে যে ভর্তি ফি দেখছি, তা দেওয়া আমাদের অনকের পক্ষেই প্রায় অসম্ভব। -ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী
নতুন প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি সর্বোচ্চ ৭,৫০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ৬,৫০০ টাকা। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি ফির যখন এই চিত্র সেখানে সবাইকে ছাড়িয়ে ভর্তি ফি ধার্যে শীর্ষে রয়েছে বঙ্গমাতা বিশ্ববিদ্যালয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শুধু গুচ্ছই নয় ভর্তি ফি ২৬,৭২৫ টাকা নির্ধারণ করার মতো দেশের আর কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও নেই। এটিই দেশের সর্বোচ্চ।
২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী ইয়াছিন আরাফাত বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে এটা নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় আমরা অনেক মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকেই বঞ্চিত। সেখানে যদি শুনতে হয়, ভর্তি ফি ধার্যে শীর্ষে রয়েছে বঙ্গমাতা বিশ্ববিদ্যালয়—তাহলে বিষয়টা একই সাথে দুঃখজনক এবং হাস্যকর। ভর্তি ফিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় ফি সহনীয় মাত্রায় নির্ধারণ করার দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. কামরুল আলম খানের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার সৈয়দ ফারুক হোসেন জানান, ভর্তি ফি আমরা জিএসটির নিয়ম অনুসারেই করেছি। আমাদের এটা নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় কোনো ভর্তুকি নেই। এছাড়া ডিপিপিও (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) পাস হয়নি। ডিপিপি পাস হওয়ার পর সরকার যখন আমাদের সর্বোচ্চ বাজেট দেবে তখন এসব ফি কমানো সম্ভব হবে।