৫৩ লাখ টাকা আত্মসাতের পরও ‘চার-ছয় পিটিয়ে’ স্বপদে বহাল পবিপ্রবি কর্মকর্তা

প্রকৌশলী ইউনুস শরীফ
প্রকৌশলী ইউনুস শরীফ  © সংগৃহীত

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইউনুস শরীফের বিরুদ্ধে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত চলছে। এরপরও তাঁর স্বপদে বহাল থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তার দম্ভোক্তি, ‘এই ফিল্ডে আমার চার-ছয় পেটানোর অভ্যাস আছে।’ 

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রকৌশলী ইউনুস শরীফ ও ঠিকাদার মেসার্স স্টারলাইট সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সাইফুল হক তালুকদার সহ অন্যান্যদের যোগসাজশে বিধিবহির্ভূতভাবে ঠিকাদারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ টি কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। এ অপরাধে কমিশনের অনুরোধক্রমে ইউনুস শরীফের বিরুদ্ধে দুদক আদালতে মামলা দায়ের করে।

পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ৫৩ লাখ ৫০ হাজার ৩৯০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইউনুস শরীফকে গ্রেপ্তার করে। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, তিনি নয়টি প্রকল্পের দরপত্র নিয়ে জালিয়াতি, প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ২১ জুন থেকে ২০১৭ সালের ৩০ জুনের মধ্যে এ টাকা আত্মসাৎ করেন।

জেলহাজতে থাকায় পবিপ্রবি কর্মচারী সাধারণ আচরণ ও শৃঙ্খলা বিধির ৯(৪) ধারা অনুযায়ী ২৩ সেপ্টেম্বর তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে পবিপ্রবি প্রশাসন। পরবর্তীতে জামিনে মুক্তি পেলে তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশটি স্থগিত করা হয়। প্রধান তত্বাবধায়কের দায়িত্ব পেয়ে দুর্নীতিতে আবারও মেতে ওঠেন, এমন অভিযোগ কয়েকজন কর্মকর্তার। এ কর্মকর্তার অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের ৪৫১ কোটি টাকার কাজের যথাযথ মান নিয়ে চিন্তিত সংশ্লিষ্টরা।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা যায়, প্রকৌশলী শরীফের বিষয়ে উত্থাপিত অভিযোগ সমূহের অনেকগুলো প্রমাণিত হওয়ায় তিনি ২০২১ সালে ১৪,৯২,৩৮৭.১১ টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেন। আদালত তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করেও স্বপদে বহাল পবিপ্রবি’র তত্ত্বাবধায়ক

পরবর্তীতে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. ফজলুল হককে আহ্বায়ক ও উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসুকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও ২ বছর পেরিয়ে গেলেও কোন তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়নি এমনকি তার বিরুদ্ধে কোন কার্যকর ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয় নি।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. ফজলুল হককে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘ইউনুস শরীফের বিষয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন আছে এমনটি উল্লেখ করে পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত বন্ধ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পবিপ্রবির এক কর্মকর্তা বলেন, দুদক তো শুধু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সিলেকশনে অনিয়মের বিষয়টা উদঘাটন করেছে। কিন্তু তিনি এসব প্রতিষ্ঠানকে যে কত কোটি টাকা ঘুষের বিনিময়ে টেন্ডার দিয়েছেন, তা এখনও সামনে আসেনি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই তার দুর্নীতি সম্পর্কে জানি। কিন্তু যারা ব্যবস্থা নেবে তারাইতো ঘনিষ্ঠ লোক। আবার তাদেরও অনেক দুর্নীতির সাক্ষী তিনি। তাই সবাই সমঝোতায় চুপ থাকে।

দুদকের পটুয়াখালী সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘আমার জানামতে মামলাটি এখনও চলছে। আদালত বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয়। কিন্ত অনেকদিন অতিবাহিত হলেও তদন্ত প্রতিবেদন হাতে আসেনি। এ বিষয়ে আমি আবার খোজ নেব।’

অভিযুক্ত ইউনুস শরীফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘বর্তমান উপাচার্য আমাকে সম্মানিত করেছেন। কোন রাস্তায় যেতে হবে, কিভাবে সবকিছু ম্যানেজ করতে হবে তা আমার জানা আছে।’

আরও পড়ুন: আন্দোলনের মুখে রুয়েট ভিসির পদত্যাগ

বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসুর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ইউনুস শরীফের দুর্নীতির বিষয়ে আমি ফোনে কোনো কথা বলবো না।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, ‘দূর্নীতির অভিযোগে ইউনুস শরীফ গ্রেফতারের পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট রিজেন্ট বোর্ডে উপস্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু সে অবস্থায় আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা চলমান থাকায় তাকে শাস্তির আওতায় আনা যায়নি।’


সর্বশেষ সংবাদ