বশেমুরবিপ্রবির নাম ‘আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়’ রেখেছেন শিক্ষার্থীরা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

২০০১ সালে আইন পাশ হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে প্রায় ১০ বছর পর ২০১১ সালে একাডেমিক যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। দীর্ঘ প্রায় ১২ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টির তেমন দৃশমান কোন অর্জন না থাকলেও ঘরে-বাইরে রয়েছে নানা নেতিবাচক প্রচারণা। বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম নিয়ে শিক্ষার্থীদেরও রয়েছে ব্যাপক তিক্ত অভিজ্ঞতা।

বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা বলছেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা, গবেষণায় সংবাদপত্রের শিরোনাম হওয়ার পরিবর্তে নানা সমস্যা ও আন্দোলনের জন্য নিয়মিত পত্রপত্রিকার শিরোনাম হচ্ছে। কথায় কথায় আন্দোলন, গেটে তালা দেওয়ার মতো ঘটনায় ত্যাক্ত বিরক্ত তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রেখেছেন ‘আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়’।

বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের পোস্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি বছরে জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিগত ৬ মাসে এখন পর্যন্ত ৩০টির বেশি ছোট-বড় আন্দোলন হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। এই আন্দোলনের ধারায় যুক্ত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, মাস্টাররোলের কর্মচারী, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকবৃন্দ।

এমনকি ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হতে আসা ভর্তিচ্ছুরা যারা এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ নন, তারাও বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন সংস্কৃতিতে জড়িত হতে বাধ্য হয়েছে। নিজেদের ভর্তি নিশ্চিত করার জন্যও তাদের আন্দোলন করতে হয়েছে।

শিক্ষককে চাকরি থেকে অব্যাহতি, অপরাধীদের বিচার, বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবাদের জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন হয়েছে ৯ বার। তবে অনেকের মতে মানববন্ধন করে পরিবর্তন আনা সম্ভব হয় না। তাই তারা বেছে নেন বিভিন্ন গেটে তালা মেরে দাবি আদায়ের পদ্ধতি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের অন্যতম এক সংস্কৃতি বিভিন্ন গেটে তালা মারা। যেকোনো আন্দোলনকে সফল করতে উপাচার্যের কার্যালয়, প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবনের মেইন গেট, বিভিন্ন কক্ষে তালা মারেন আন্দোলনকারীরা।

আরও পড়ুন: কথা রাখলো না বশেমুরবিপ্রবি প্রশাসন

গত ৬ মাসে ৯ বার তালা মেরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-শিক্ষার্থীরা। কর্মকর্তারা বিভিন্ন দাবিতে তালা মারলেও শিক্ষার্থীদের তালা মারার পেছনে মূল আন্দোলনগুলো ছিল ক্লাসরুম সংকট। মূলত অবকাঠামোগত উন্নয়নের তুলনায় অতিরিক্ত বিভাগ খোলা ও শিক্ষার্থী ভর্তি করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা, স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকদের আন্দোলনের অংশ হিসেবে উপাচার্যের দপ্তরে তালা মারা হয়েছে ৫ বার যেখানে উপাচার্য নিজে অবরুদ্ধ হয়েছে ৩ বার।

বিভিন্ন সময় শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের কর্মবিরতিতে অচল হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি। গত জুন ও নভেম্বর মাসে বেশ কিছু দিন শিক্ষক সমিতির আন্দোলনের অংশ হিসেবে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়। পাশাপাশি প্রশাসনিক কাজ থেকেও বিরত থাকেন তারা। 

প্রতি মাসে গড়ে ৫টি করে আন্দোলন দেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। যার সূচনা হয়েছে বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া সাবেক ভিসি খোন্দকার নাসিরের বিদায়ের মাধ্যমে।

আরও পড়ুন: একই নামে দুই বিশ্ববিদ্যালয়, পরিচয় সংকটে শিক্ষার্থীরা

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে তারা নানা সংকটের মাঝেও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কিউ এম মাহবুব দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সমস্যা সমাধানে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী ভর্তি সংখ্যা ১৪০০-তে নামিয়ে এনেছি। আগামী ২ বছর পর এসকল সমস্যা অনেকটাই সমধান হয়ে যাবে। আশা করি আমরা কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করতে পারবো।

এদিকে, একদিকে করোনা অন্যদিকে বারবার আন্দোলনের বাধায় ব্যহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম। স্নাতক পাশেই বিভিন্ন বিভাগে লাগছে ৫-৬ বছর। সব কিছু মিলিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিকাংশ শিক্ষার্থী। অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। অনেকেই শুধু সার্টিফিকেট নিয়ে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় দিন পার করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টির তৈরীর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। ১২টি বৃহত্তর জেলায় ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা তৎকালীন সরকার গ্রহণ করে। প্রথম পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য ৬টি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয়। এই ৬টির মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পটি ছিল একটি। ১৯৯৯ সালের ১৫ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এম. খায়রুল আলম খানকে প্রকল্প পরিচালক নিযুক্ত করে গোপালগঞ্জে পাঠানো হয়। প্রকল্প পরিচালক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্বাচন, জমি অধিগ্রহণ (প্রায় ৫৫ একর) এবং জমি ভরাটের কাজ সম্পন্ন করেন।

পরে ২০০১ সালের ৮ জুলাই মহান জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণীত হয়। ২০০১ সালের ১৩ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ১৪ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ড. এম. খায়রুল আলম খানকে নিয়োগের সুপারিশ করেন এবং রাষ্ট্রপতি ১৯ জুলাই ২০০১ উক্ত নিয়োগ অনুমোদন করেন।

২০০২ সালের ১৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্পটি সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করে তৎকালীন বিএনপি সরকার এবং উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. খায়রুল আলম খানের নিয়োগ বাতিল করে এবং তাকে তার পূর্বতন প্রতিষ্ঠান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়। ২০০৯ সালের নভেম্বরে স্থগিত প্রকল্পটি পুনর্জীবিত হয় এবং ২০১০ সালের ৫ জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধ্যাপক ড. এম. খায়রুল আলম খানকে আবারও প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করে এবং ২০ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ আইন-২০০১ বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এসআরও জারী করে।

পরবর্তীতে ১৪ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান অধ্যাপক ড. এম. খায়রুল আলম খানকে পুনরায় ৪ বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন এবং ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মেয়াদ শেষ করেন। পরে বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈবপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনকে উপাচার্য হিসেবে ৪ বছরের জন্য নিয়োগ প্রদান করে।

আরও পড়ুন: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে 'নাম সর্বস্ব' বিশ্ববিদ্যালয় পবিপ্রবি

তিনি ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয় মেয়াদেও নিয়োগ পান। কিন্তু ২০১৯ সালে তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারী, ক্ষমতার অপব্যবহার সহ নানাবিধ অভিযোগে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি পদত্যাগ করেন। এরপর উপাচার্যের চলতি দায়িত্ব পান ড. মো. শাহজাহান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির ইলেকট্রনিকস ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগের সভাপতি ছিলেন। ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর পূর্ণমেয়াদী উপাচার্যের দায়িত্ব পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের (অবসরপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. এ. কিউ. এম. মাহবুব। ৬ সেপ্টেম্বর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে তার কর্মস্থলে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি দায়িত্বরত আছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী বিপুল আহমেদ বলেন, ২০১৯ সালে ভিসি নাসিরের পতনের পর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন হচ্ছে। গত ২-৩ বছরে এতো আন্দোলন দেখেছি যে আন্দোলন নামটি শুনলে এখন বিরক্ত লাগে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আহ্বান থাকবে, আপনারা সকল পক্ষের আসে আলাপ আলোচনা করেন।

প্রশাসনের উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থী হিসেবে বিপুলের পরামর্শ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সমস্যা চিহ্নিত করে কীভাবে সেটা সমাধান করা যায় সে ব্যাপারে একটি পূর্ণ পরিকল্পনা গ্রহণ করা । অতঃপর সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করুন। এতে দুইদিন পর পর বিভিন্ন বিষয়ে কারো আন্দোলন করা লাগবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছি, আন্দোলন করতে আসিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম তা আজ ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করি, পড়াশোনা করি। কিন্তু এসব আন্দোলনের ভুক্তভোগী হয়ে এখনো পাস করে বের হতে পারলাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কোনো আন্দোলন দেখতে চাই না। সরকারের দ্রুত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি নজর দেওয়া উচিত। একটা বিশ্ববিদ্যালয় এতো সমস্যা নিয়ে চলতে পারে না।

ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মামুন বলেন, আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম তখনও অনেক সমস্যা ছিল। কিন্তু তখন কথায় কথায় আন্দোলন ছিল না। আমার মনে হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এতো আন্দোলন অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় না। এতো আন্দোলনে বিরক্ত হয়ে আমাদের বন্ধু-বান্ধবরা এখন একে আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয় বলে ডাকেন। এসব আন্দোলনের ফলে আমাদের চাকরির ভাইভাতেও প্রভাব পড়ছে। অনেকেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম শুনলে নেগেটিভ ইম্প্রেশন দেন।

আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের চাকরি দিচ্ছে ঢাবি, মাসে বেতন এক হাজার টাকা

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কিউ এম মাহবুব বলেন, ১২ বছর ধরে তৈরি হওয়া সমস্যা ২ বছরে সম্পূর্ণ সমাধান হবে না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী থাকার কথা ৪-৫ হাজার, কিন্তু শিক্ষার্থী রয়েছে ১২ হাজার। যার ফলে চাইলেও সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

উপাচার্য বলেন, এসব আন্দোলন-কর্মসূচির পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। যার ফলে চাইলেও অনেক সময় সব সমস্যার সমাধান করা যায় না। শিক্ষার্থীরা খারাপ না, তারা পরিস্থিতির শিকার। ১২ বছর ধরে তারা নানা অপূর্ণতার মাঝেও ধৈর্য ধরে আছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence