জোরালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি, প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হতে পারে আজ

গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান  © ফাইল ফটো

করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপর কয়েক ধাপে বাড়ানোর পর সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী ছুটি অব্যাহত থাকবে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত। এরইমধ্যে গত বছরের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) এবং উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। স্থবির রয়েছে ক্লাস-পরীক্ষার মতো নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম।

এছাড়া এইচএসসিতে অটোপাস দেওয়ার জন্য চলতি সপ্তাহে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে আইনের সংশোধনের জন্য বিল উত্থাপন করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এটি পাস হলে আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীর ফলাফল ঘোষণা করা হবে। আজকালের মধ্যেই বিলটি পাস হতে পারে। তবে এখন আলোচনার শীর্ষে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ইস্যু। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিও ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।

এইচএসসির ফলাফল সংক্রান্ত বিল উত্থাপনের পর সংসদ সদস্যরাও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পক্ষে তারা। বুধবার (২০ জানুয়ারি) সংসদে আলোচনার সময় করোনাকালে শিক্ষাব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে জানান সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোতাহের হোসেন। তিনি বলেন, করোনাকালে ভার্চুয়াল ক্লাস হলেও গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতে পারছে না। এজন্য দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আহবান জানান তিনি।

এছাড়া সাবেক হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত মন্ত্রণালয়ের। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দ্রুত খুলে দিতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠা। এছাড়া স্বতন্ত্র সদস্য রেজাউল করিম বাবলুও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দেওয়ার দাবি জানান।

জাতীয় সংসদে আলোচনায় কয়েকজন সদস্য বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষার্থীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে রয়েছে। অনলাইনে বা ভার্চুয়াল মাধ্যমেক্লাস হলেও তা শিক্ষার্থীদের জন্য যথেষ্ট নয়। তাদের কথা বিবেচনায় রেখে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দেওয়া জরুরি। সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় তারা এ প্রসঙ্গে কথা বলেন।

এদিকে দেশের করোনাকালীন শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে বৈঠকে বসছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা। আজ বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বিকালে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। গত সোমবার (১৮ জানুয়ারি) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া দুই মন্ত্রণালয়ের সচিব, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এবং সব বোর্ডের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত থাকবেন।

এ বৈঠকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে ইতোমধ্যে ফেব্রুয়ারি থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সীমিত পরিসরে খোলার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ বৈঠকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত আসবে বলেও প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

জানা গেছে, গত কয়েকমাস ধরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি জানানো হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা শুরু হলেও হল না খোলায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে রয়েছেন। তারা হল ও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার দাবিতে আন্দোলনও করেছেন। এছাড়া করোনাকালে বিপাকে রয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার তাদের জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি তুলেছেন তারা।

অবশ্য একটি অংশ ভ্যাকসিন আসার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি তুলেছেন। তবে আজ বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) দেশে করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম চালান আসছে। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে জনমত আরো শক্তিশালী হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। আজ দুই মন্ত্রণালয়ের আলোচনায় বিষয়টি গুরুত্ব পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ