রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ‘শেখ’ পরিবারের নাম না থাকায় জাতীয়করণ হয়নি আরও দুই বিদ্যালয়
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৫, ০৬:০৩ PM , আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২৫, ০৪:৪৪ PM
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত নীতিমালার সব শর্ত পূরণ করলেও শুধু ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ এবং শেখ পরিবারের নাম না থাকায় জাতীয়করণ হয়নি রাঙ্গুনিয়া আদর্শ পাইলট স্কুল এবং বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। ফলে প্রতিষ্ঠান দুটির শিক্ষক-কর্মচারীরা বছরের পর বছর ধরে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যালয় দুটি ন্যূনতম জমি, অবকাঠামো, ছাত্রসংখ্যা, শিক্ষক-কর্মচারী, রেজিস্ট্রেশনসহ জাতীয়করণের প্রয়োজনীয় সব শর্ত পূরণ করেছে। এমনকি উপজেলা শিক্ষা অফিস, জেলা প্রশাসন ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সুপারিশও রয়েছে। তবুও বিদ্যালয় দুটি জাতীয়করণ হয়নি, কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ‘নাম না জুড়ে যাওয়া’ বা ‘উপযুক্ত রাজনৈতিক সম্পর্ক না থাকা’।
বিদ্যালয় দুটির প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয় অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, “একই উপজেলায় একই মানের অনেক কম পুরনো প্রতিষ্ঠানও জাতীয়করণ হয়েছে, শুধু শেখ পরিবারের কারো নামে নাম থাকায়। অথচ স্কুলগুলো অনেক পুরোনো। হাজারো শিক্ষার্থী তৈরি করেছে—কিন্তু জাতীয়করণ হয়নি শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিবেচনায়। যা শিক্ষাক্ষেত্রে চরম বৈষম্য তৈরি করেছে। শেখ নাম যুক্ত না থাকলে স্কুলকে মূল্যায়ন করা হয় না। এতে শুধু শিক্ষক-কর্মচারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছে।”
এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা দাবি করেছেন, শিক্ষা জাতীয়করণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয় নয়, বরং প্রতিষ্ঠানের গুণগত মান, অবদান ও স্থানীয় চাহিদা বিবেচনায় নেওয়া উচিত। অন্যথায় শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বৈষম্য আরও ঘনীভূত হবে।
জাতীয়করণবঞ্চিত রাঙ্গুনিয়া আদর্শ পাইলট স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আবু সায়েম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, “স্কুলটি ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সর্বপ্রথম একটি প্রতিষ্ঠান। জাতীয়করণের লক্ষ্যে ২০০৮ সালে স্কুলটি মডেল প্রকল্পভুক্ত হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, জাতীয়করণের জন্য সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও এবং বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে মাধ্যমিক স্কুল জাতীয়করণ প্রক্রিয়াকালীন সময়ে ২০১৫ সালে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও জেলা শিক্ষা অফিস থেকে প্রেরিত একাধিক তালিকায় এই প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণের জন্য এক নম্বর প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পরও শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে জাতীয়করণের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নাম বিশিষ্টি একটি প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করা হয়। স্কুলের নামের মাঝে বঙ্গবন্ধু বা শেখ পরিবারের কারো নাম না থাকাই ছিল যেন অপরাধ। তৎকালীন সরকারের এই বৈষম্যমূলক ও হটকারী সিদ্ধান্ত রাঙ্গুনিয়ার মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে।”
বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) রতন চক্রবর্ত্তী বলেন, বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিদ্যালয়টি। আপামর বাঁশখালীর জলদি ও অন্যান্য গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো জ্বেলে সমাজ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে । এই বিদ্যালয়ের মাঠেই মওলানা ভাসানী, রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ অনেকেই উক্ত বিদ্যালয়ের মাঠেই বক্তব্য রাখেন। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সকল সরকারি, বেসরকারি ও রাজনৈতিক দলগুলোর জমায়েত উক্ত বিদ্যালয়ের মাঠেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং বর্তমানেও উপজেলার সকল শিক্ষা বিষয়ক কার্যক্রম ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উক্ত মাঠেই অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মডেল স্কুল হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু মডেল স্কুল হিসেবে তালিকায় থাকলেও রাজনৈতিক কারণে জাতীয়করণ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বিদ্যালয়টি বাদ পড়ে যায়, ফলে জাতীয়করণের জন্য উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করা হয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) মো. মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘জাতীয়করণের বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত। সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যাবে। এ বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ভালো বলতে পারবেন।’
জাতীয়করণ বঞ্চিত মডেল প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা সরকার এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন বিভিন্ন কর্মকর্তার সাথে এই ব্যাপারে কথা বলছি এবং আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা আমাদের এই ২৭টি জাতীয়করণ বঞ্চিত মডেল প্রতিষ্ঠান এর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।’