‘কুমিল্লা বোর্ডের প্রশ্নপত্রে’ সাম্প্রদায়িক উসকানি ছিল না

কুমিল্লা বোর্ডের প্রশ্নপত্রে’ সাম্প্রদায়িক উসকানি ছিল না
কুমিল্লা বোর্ডের প্রশ্নপত্রে’ সাম্প্রদায়িক উসকানি ছিল না  © সংগৃহীত

চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা গতকাল রবিবার (৬ নভেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে। এ বছর পরীক্ষায় ২ হাজার ৬৪৯টি কেন্দ্রে ৯ হাজার ১৮১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১২ লাখ ৩ হাজার ৪০৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে ৬ লাখ ২২ হাজার ৭৯৬ জন ছাত্র এবং ৫ লাখ ৮০ হাজার ৬১১ জন ছাত্রী।

মোট ১১টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এদিন বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই পত্রের কুমিল্লা বোর্ডের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ‘সাম্প্রদায়িক উসকানি’ দেওয়া নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই এ ঘটনার নিয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। এ জন্য তারা কুমিল্লা বোর্ডকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

আরও পড়ুন: এসএসসিতে এবার পাশের হার সবচেয়ে বেশি— তথ্যটি ভুয়া

বর্তমান বাংলাদেশে মোট ১১টি শিক্ষাবোর্ড রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের যাবতীয় কার্যক্রম এসব বোর্ড সম্পন্ন করে থাকে। তাই বোর্ড পরীক্ষার প্রশ্নও আলাদা আলাদা করা হয়।

এসব বোর্ডগুলো হলো- মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা; মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লা; মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড, চট্টগ্রাম; মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড, রাজশাহী; মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড, যশোর; মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড, বরিশাল; মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড, সিলেট; মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড, দিনাজপুর; মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড, ময়মনসিংহ; বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড।

কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে ফেসবুকে বেশ সমালোচনা শুরু হয়। আর সেখানে ওই প্রশ্নপত্রের ছবিও দেওয়া হয়। সেখানে ১১ নম্বর প্রশ্নে (বাংলা প্রথম পত্র সৃজনশীল) নাটক সিরাজউদ্দৌলা অংশে অনুচ্ছেদে ধর্মকে সামনাসামনি করে উদ্দীপকে বলা হয়, ‘নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিন। অনেক সালিশ-বিচার করেও কেউ তাদের বিরোধ মেটাতে পারেনি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এখন জমির ভাগ বণ্টন নিয়ে মামলা চলছে আদালতে। ছোট ভাই নেপাল বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে আব্দুল নামে এক মুসলমানের কাছে ভিটের জমির এক অংশ বিক্রি করে। আব্দুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। কোরবানির ঈদে সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কোরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙ্গে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে জমি-জায়গা ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে।’

আরও পড়ুন: প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক কিছু থাকাটা খুবই দুঃখজনক

এরপর প্রশ্ন করা হয়েছে-“(ক) মিরজাফর কোন দেশ হতে ভারত আসেন। (খ) ঘরের লোক অবিশ্বাসী হলে বাইরের লোকের পক্ষে সবই সম্ভব।-ব্যাখ্যা কর। (গ) উদ্দীপকের ‘নেপাল’ চরিত্রের সঙ্গে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ‘মিরজাফর’ চরিত্রের তুলনা কর। (ঘ) ‘খাল কেটে কুমির আনা’-প্রবাদটি উদ্দীপক ও ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটক উভয় ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য।-উক্তিটির সার্থকতা নিরূপণ কর।” সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তরের জন্য উদ্দীপকে অনেক প্রাসঙ্গিক উদাহরণ টানা যেত। কিন্তু এখানে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে প্রশ্ন প্রণয়ন করা হয়েছে।

তবে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের ফ্যাক্টচেকের পক্ষ থেকে কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা দেওয়া একাধিক পরীক্ষার্থীর কাছে যোগাযোগ করা হয়। তাদের সরবরাহ করা সেই প্রশ্নপত্রের সঙ্গে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এই প্রশ্নে কোন মিল নেই।

নিচে দেখুন কুমিল্লা বোর্ডর অধীনে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। অন্যদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এমএ খায়েরও প্রশ্নটি কুমিল্লা বোর্ডের বলে নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে, দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকাটির আজকের প্রিন্ট ভার্সনে ‘কুমিল্লা বোর্ডের প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক উসকানি’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন ছাপিয়েছে। পত্রিকাটির প্রথম পাতা ছাপানো ওই প্রতিবেদনের তৃতীয় প্যারায় বলা হয়েছে, ‘রোববার (৬ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার বাংলা প্রথম পত্র বিষয়ের প্রশ্ন এটি। কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে এভাবেই সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়া হয়েছে।’ সেই প্রতিবেদনটি দেখুন নিচে।

কুমিল্লা নয়, এটি ছিল ঢাকা বোর্ডের প্রশ্নপত্রে
মূলত প্রশ্নপত্রটি ছিল ঢাকা বোর্ডের। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের ফ্যাক্টচেকের পক্ষ থেকে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা দেওয়া একাধিক পরীক্ষার্থীর কাছে যোগাযোগ করে এই তথ্য নিশ্চিত হয়েছে। তাদের সরবরাহ করা সেই প্রশ্নপত্রের সঙ্গে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া গেছে। নিচে দেখুন ঢাকা বোর্ডর অধীনে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষার সেই প্রশ্নপত্রটি। অন্যদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এমএ খায়েরও প্রশ্নটি ঢাকা বোর্ডের বলে নিশ্চিত করেছেন।

অন্যদিকে, দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণ তাদের সেই প্রতিবেদনটির শিরোনামসহ নিউজের সব জায়গায় পরিবর্তন করে ‘কুমিল্লা’ বোর্ডের পরিবর্তে ‘ঢাকা’ বোর্ড করে সংশোধন করা হয়েছে। তবে তাদের প্রিন্ট ভার্সনে এখনও ‘কুমিল্লা’ বোর্ড রয়েছে। পত্রিকাটির সেই অনলাইন ও প্রিন্ট ভার্সন পড়ুন এখানে।

যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী
আজ সোমবার (৭ নভেম্বর) রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এইচএসসির বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নে সাম্প্রদায়িকতার উসকানি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ঘটনাটি আমি অবগত। এটা খুবই দুঃখজনক। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে কোন পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক কোন কিছু থাকবে এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রশ্ন সেটিং বা প্রশ্ন মডারেটিং এমনভাবে হয় যে, যিনি প্রশ্ন সেট করে যান তিনি আর সেটি দেখতে পারেন না। যিনি মডারেট করে যান তিনিও আর পুনরায় তা দেখতে পারেন না। কী কী বিষয় মাথায় রেখে প্রশ্নগুলো তারা করবেন- এ বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট নির্দেশিকা দেওয়া থাকে।

তিনি বলেন, প্রশ্নে যেন কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িকতা না থাকে সেটিও নির্দেশনা দেওয়া আছে। তবে খুবই দুঃখজনক কোনো একজন প্রশ্নকর্তা হয়ত এই প্রশ্নটি করেছেন। এমনকি যিনি মডারেট করেছেন, তার দৃষ্টি থেকেও হয়তো কোনোভাবে বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। অথবা তিনি স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন। আমরা চিহ্নিত করছি এ প্রশ্নটি কোন সেটার এবং মডারেটর করেছেন। একইসঙ্গে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence