ইউজিসির সদস্য হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী অধ্যাপক আইয়ুব ইসলাম?

ড. মোহাম্মদ আইয়ুব ইসলাম
ড. মোহাম্মদ আইয়ুব ইসলাম  © টিডিসি সম্পাদিত

বিগত আওয়ামী লীগের সময়ে সুবিধাভোগী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক অধ্যাপককে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) পূর্ণকালীন সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে বলে গুঞ্জন উঠেছে। যদিও এখন পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা ইউজিসি আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কিছুই জানায়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে ইউজিসি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

ওই অধ্যাপকের নাম ড. মোহাম্মদ আইয়ুব ইসলাম। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ইউজিসির কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে যে উদ্দীপনা ও ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে কমিশন পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছে, এই অধ্যাপককে নিয়োগ দিলে তা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষকরা বলছেন, এই অধ্যাপক ফ্যাসিস্টের দোসর। কারণ তিনি গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন। এই সরকার তাকে নিয়োগ দিলে জুলাই স্পিরিট ধারণ করছে না বলে আমরা মনে করব।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ২০১৬-১৭ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন

জানা গেছে, ড. মোহাম্মদ আইয়ুব ইসলাম ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৬ বছর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া ওই সময়ে চবি ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কোর কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের পরিবার থেকে বিয়ে করছেন বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ২০১৬-১৭ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়। তৎকালীন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদে চেয়ারম্যান হিসেবে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন ছিলেন। সেখানে ড. মোহাম্মদ আইয়ুব ইসলাম পরিচালক হিসেবে ছিলেন। ১০ জনের পরিচালকের তালিকায় আরও ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ।

বর্তমানে তিনি চবির হিসাববিজ্ঞান বিভাগের আওয়ামীপন্থী অধ্যাপক ও শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামীর পিএইচডি সুপারভাইজারের দায়িত্ব পালন করছেন। সর্বশেষ গত মাসে চবি কর্তৃপক্ষ তাকে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন হিসেবে নিয়োগ দিতে চাইলে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পক্ষের শিক্ষকদের বিরোধিতায় তার আর সম্ভব হয়নি।

এদিকে, এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রবিবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত কোনো প্রজ্ঞাপন দেখা যায়নি। এর আগে বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা এড়িয়ে যান। যদিও একটি সূত্র জানিয়েছে, অধ্যাপক আইয়ুবের নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত, যেকোনো সময় তা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ পেতে পারে।

এদিকে, তার বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন ইউজিসি ও চবির সংশ্লিষ্টরা। তবে নাম প্রকাশে অপরাগতা প্রকাশ করেন তারা। জানতে চাইলে ইউজিসির এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ড. মোহাম্মদ আইয়ুব ইসলামের বিরুদ্ধে যেসব গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর সত্য হলে বিষয়টি ইউজিসির জন্য শুধু বিব্রতকরই হবে না, বরং প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থার ওপরও আঘাত আসবে। অভ্যন্তরীণ পরিবেশের সৌহার্দ্য ও পেশাদারিত্ব মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে। বিশেষ করে, ৫ আগস্টের পর থেকে যে উদ্দীপনা ও ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে ইউজিসি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছে, তা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চবির এক অধ্যাপক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ড. মোহাম্মদ আইয়ুব ইসলাম গত ১২-১৩ বছরে আওয়ামী সুবিধাভোগী শিক্ষক। তিনি এই পরিচয়ে ৬ বছর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আমরা যতটুকু জেনেছি, তিনি বিয়ে করেছেন ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতির মেয়েকে। সেই সূত্র ধরে তৎকালীন সময়ে রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করেছেন। সর্বশেষ গত মাসে চবি প্রশাসন তাকে ডিন করতে চাইলে আমরা জুলাই স্পিরিট ধারণ করা শিক্ষকরা বাধা দিই এবং সেটি আর হতে পারেনি।


সর্বশেষ সংবাদ