১০০ মেগাওয়াট সৌর প্ল্যান্ট স্থাপন করবে রবি: ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫, ০২:৫৮ PM , আপডেট: ২১ জুন ২০২৫, ০২:০৮ PM
পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রযাত্রা হিসেবে রবি আজিয়াটা পিএলসি, ফ্লোসোলার সল্যুশনস লিমিটেড এবং গ্রিন পাওয়ার এশিয়ার মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় ১০০ মেগাওয়াট পিক (এমডব্লিউপি) ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য একটি স্পেশাল পারপাস ভেহিকেল (এসপিভি) গঠন করা হবে।
ইতোমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কয়েকটি সম্ভাব্য স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে, যা বিস্তারিত সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা হবে। এমওইউ অনুযায়ী রবি একটি কর্পোরেট পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (সিপিপিএ) এর মাধ্যমে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী এই সৌর প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ কিনবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটি বুধবার (৭ মে) ঢাকায় রবির কর্পোরেট অফিসে অনুষ্ঠিত হয়। এতে এমওইউতে স্বাক্ষর করেন রবির চিফ টেকনোলজি অফিসার পেরিহান এলহামী আহমেদ মেতাওয়েহ, ফ্লোসোলার সল্যুশনস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা আজিম কাসেম খান এবং গ্রিন পাওয়ার এশিয়ার প্রেসিডেন্ট পিয়েরিক মোরিয়ে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাসের হেড অব ইকনোমিক ডিপার্টমেন্ট জুলিয়েন দুয়ে, এ.কে. খান অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন কাশেম খানসহ রবি ও ফ্লোসোলারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সরকারের প্রস্তাবিত মার্চেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট নীতিমালার সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত এই নীতিমালা অনুমোদনের পর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরাসরি বিক্রির সুযোগ পাবে। এমওইউ অনুযায়ী প্রকল্পটি বিল্ড-ওন-অপারেট (বিওও) মডেলে পরিচালিত হবে, যা রবির শূন্য কার্বন নিঃসরণ ও ক্লিন এনার্জির লক্ষ্য পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সৌর প্ল্যান্ট বছরে প্রায় ৬৮,২০০ টন কার্বন নিঃসরণ কমাবে।
চুক্তি স্বাক্ষরের আগে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে অংশীদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা জানান, ১০০ মেগাওয়াট পিক ক্ষমতার সৌর পার্কটির অবস্থান নির্ধারণে সাবস্টেশনের সক্ষমতা ও অন্যান্য কারিগরি দিক বিবেচনায় নেওয়া হবে। পার্কের উন্নয়ন, অর্থায়ন ও পরিচালনায় দায়িত্ব পালন করবে এসপিভি। দীর্ঘমেয়াদি সিপিপিএ’র আওতায় রবি হবে প্রকল্পটির একমাত্র ক্রেতা।
রবি জানিয়েছে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে সরকারের নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে প্রকল্পটি মার্চেন্ট ভিত্তিতে পরিচালিত হবে, যা আরও সুবিধাজনক এবং সম্প্রসারণযোগ্য হবে।
প্রকল্পটির মাধ্যমে রবি তার ১৬ হাজার বিটিএস সাইটে সৌর শক্তি ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি যৌথ সমীক্ষাও পরিচালনা করবে। এতে করে রবির নেটওয়ার্কের উল্লেখযোগ্য অংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর সম্ভব হবে।
রবি জানিয়েছে, ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেও মাত্র ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তাদের প্রয়োজন হয়। বাকি বিদ্যুৎ অন্যান্যদের কাছে বিক্রি করা হবে এবং নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবহার করার জন্য জাতীয় পাওয়ার গ্রিডে যুক্ত করা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ৯ মাস সময় লাগতে পারে বলে তারা জানিয়েছেন। মাতারবাড়ি, নোয়াখালী ও ঢাকার অদূরের কোনো একটি স্থানে এই প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
ফ্রান্সের ভল্টা গ্রুপের শতভাগ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান গ্রিন পাওয়ার এশিয়া এ প্রকল্পে ফরাসি বিনিয়োগ নিয়ে অংশ নিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ১০০ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ সংগ্রহ করেছে এবং ২০০ মেগাওয়াট পিক ক্ষমতার প্রকল্প পরিচালনা করছে বা নির্মাণাধীন রয়েছে। তাদের পাইপলাইনে আরও ৫০০ মেগাওয়াট পিক প্রকল্প রয়েছে।
ফ্লোসোলার সল্যুশনস লিমিটেড বর্তমানে একটি ইপিসি কোম্পানি থেকে নবায়নযোগ্য শক্তির পূর্ণাঙ্গ প্রজেক্ট ডেভেলপার ও সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে রবি’র সিটিও পেরিহান এলহামী আহমেদ মেতাওয়েহ বলেন, 'এই অংশীদারত্ব আমাদের টেকসই যাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি উদ্ভাবন, নীতিগত ও কৌশলগত সহযোগিতার একটি যুগান্তকারী সংমিশ্রণ। সিপিপিএর মাধ্যমে ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ নিশ্চিত করে আমরা শুধু জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাচ্ছি না, বরং খরচ সাশ্রয় এবং পরিবেশ, সামাজিক ও সুশাসনগত (ইএসজি) দায়িত্বের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের টেলিকম খাতে অগ্রগামী ভূমিকা রাখছি।'
ফ্লোসোলারের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা আজিম কাসেম খান বলেন, 'সরকারের উদ্ভাবনী নীতিমালার মাধ্যমে কীভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার দ্রুততর করা যায় এবং কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব তার একটি দৃষ্টান্ত হবে প্রস্তাবিত এই সৌর পার্ক। এই প্রকল্পটি ভবিষ্যতের মার্চেন্ট ভিত্তিক নবায়নযোগ্য প্রকল্পগুলোর জন্য একটি মডেল হবে।'
গ্রিনপাওয়ার এশিয়ার প্রেসিডেন্ট পিয়েরিক মোরিয়ে বলেন, 'রবি ও ফ্লোসোলারের সঙ্গে আমাদের এই সহযোগিতা নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনাকে জোরালোভাবে তুলে ধরছে। এই প্রকল্পটি জ্বালানি নিরাপত্তা ও টেকসই পরিবেশ নিশ্চিতের ক্ষেত্রে অবদান রাখবে।'
উল্লেখ্য, রবি আজিয়াটা পিএলসি (রবি) একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি যেখানে এশিয়ার টেলিযোগাযোগ বাজারের অন্যতম কোম্পানি মালয়েশিয়াভিত্তিক আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদের সিংহভাগ মালিকানা (৬১.৮২%) রয়েছে। এছাড়া রবিতে পাবলিক শেয়ারহোল্ডারদের (১০%) পাশাপাশি বিশ্ব টেলিযোগাযোগ বাজারের অন্যতম কোম্পানি ভারতী এয়ারটেলের (ভারত) শেয়ার রয়েছে ২৮.১৮%। রবি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর। দেশের মানুষের জন্য প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ডিজিটাল সেবা আনছে কোম্পানিটি। দেশের প্রতিটি প্রান্তে উদ্ভাবনী সেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশে রবি অব্যাহত বিনিয়োগের মাধ্যমে শক্তিশালী টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে তুলেছে।
দেশজুড়ে থাকা এ অবকাঠামো ডিজিটাল পণ্য ও সেবা সরবরাহের পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল প্রতিবেশ গড়ে তুলতে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। শহর কিংবা গ্রাম যেখানেই হোক রবির হাত ধরে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে হাঁটছে দেশবাসী।