ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে লিখতে ‘ভয়’ করে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কিছু লিখতে আমার এখন ‘ভয়’ করে! অথচ ব্যাপারটা হবার কথা ছিল উল্টো! বছর কয়েক আগে যখন পত্রিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা এবং গবেষণার মান এবং পৃথিবীর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সাথে এর অবস্থান নিয়ে একটা লেখা লিখলাম; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি টেলিভিশনে গিয়ে বললেন, ‘আমরা ইউনিভার্সিটি গুলোর এই সব র‍্যাংকিং মানি না!’

আমি এই কথা শুনে বেশ অবাক হয়েছিলাম! অবাক হবার কারণও আছে। যেখানে হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিগুলো নিজেদের ওয়েব সাইটে নিজেদের র‍্যাংকিং সগৌরবে লিখে রেখেছে, সেখানে কিনা আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলছে- তারা এই সব মানে না!

আমার মনে আছে আমি যেবার অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি’তে গেলাম এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে, সেখানকার প্রতিনিধি প্রথম কথা যেটা বলেছিলেন, সেটা হচ্ছে, ‘আমরা পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটা, কারণ আমরা নিজেরা নিজেদের সমালোচনা করি, এবং অন্যদেরও সমালোচনা করতে উৎসাহিত করি।’

এই লেখার শুরুতেই বলে নিয়েছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কিছু লিখতে আজকাল আমার সত্যিই ভয় লাগে! কারণ আমার অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, এই বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্পর্কে কিছু লিখেলেই এর বর্তমান এবং সাবেক শিক্ষার্থী আর শিক্ষকরা মিলে এমন সমালোচনা শুরু করে, সেটা আর থামতেই চায় না!

আমার ঠিক মাথায় আসে না, একটা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকরা কেন তাদের সমালোচনা নিতে পারবে না। এখানে তো কাউকে ব্যক্তি পর্যায়ে সমালোচনা করা হচ্ছে না। এই যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিজেদের সমালচনা কোথায় মাথা পেতে নিবেন, উল্টো তিনি কিনা বলে বসলেন- আমরা এইসব র‍্যাংকিং মানি না!

শুনতে পাচ্ছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবারের ভর্তি পরিক্ষায় বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেয়েছে, সেটা আবার প্রমানিতও হয়েছে! ওই ছাত্র-ছাত্রীদের দোষ দেবার আগে তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমালোচনা করা উচিত। দেশ সেরা একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে কি করে নিয়ম করে প্রতি বছর এসব কর্মকাণ্ড ঘটছে। আপনারা নিজেরাই যদি এতে জরিত না থাকেন, এটা কোন ভাবেই সম্ভব না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান যদি ধরে রাখতে হয়, তাহলে সমালোচনা করার এবং শুনার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। আপনারা তো কোন সন্ত্রাসী সংগঠন না যে, আপনাদের নিয়ে কিছু বলতে বা লিখতে গেলে ‘ভয়ে’ থাকতে হবে। এই ‘ভয়’ আপনারাই সৃষ্টি করেছেন। কারণ আপনারা চান নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব যে করেই হোক জাহির করতে।

আপনারা সেরা হন, তাতে তো কোন সমসসা নেই। হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড তো জগত সেরা, তারা যদি নিজেরা নিজেদের সমালচনা করতে পারে, অন্যদের সমালোচনা করতে উৎসাহিত করতে পারে, তাহলে আপনাদের সমস্যা কোথায়?

সমস্যাটা যে আরো গভীরে, সেটা আপনারাও জানেন। এখন হয়ত ভয় দেখিয়ে মানুষের মুখ বন্ধ করে রেখেছেন, জীবনভর তো আর সেটা সম্ভব হবে না। আপনাদের পুরো সিস্টেমে ঘুণে ধরেছে, সেটা ঠিক করার জন্য সমালোচনার প্রয়োজন আছে, নইলে সিস্টেমটাও আর থাকবে না।

একটা দেশের জন্ম নেবার ইতিহাসে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির অবদান আছে। সেই দেশটির বিজয় দিবস পালিত হল। এই বিশ্ববিদ্যালয়টির হারানো সৌন্দর্য রক্ষা করার দায় বোধকরি আমদের সবার। অথচ সেই আপনারাই কিনা মানুষের মনে ‘ভয়’ ঢুকিয়ে দিয়ে রেখেছেন। কিছু বললেই-হামলে পড়বে! এমন একটা ভয়! মানুষের মনে স্রেফ এই ভয় ঢুকিয়ে দেবার জন্য হলেও আপনাদের উচিত নিজদের সমালোচনা করা। নইলে এক সময় আপনারা সত্যি’ই ইতিহাসের পাতায় ঠায় নিবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- সেই ইতিহাস কি গৌরবের হবে, নাকি গ্লানির! [লেখাটি সংগৃহীত] 


সর্বশেষ সংবাদ