রমজানে সানজানাকে পিটিয়ে তিনদিন বিছানায় ফেলে রাখেন বাবা

বেসরকারি ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজানা মোসাদ্দিকা
বেসরকারি ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজানা মোসাদ্দিকা  © ফাইল ছবি

রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখানের ১০ তলা ভবন থেকে পড়ে রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে বেসরকারি ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজানা মোসাদ্দিকার। এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে চিরকুট ধরেই তদন্ত করা হচ্ছে। মৃত্যুর আগে চিরকুটে বাবাকে ‘পশু’ ও ‘রেপিস্ট’ উল্লেখ করেছেন তিনি। সানজানার মৃত্যুর ঘটনায় পরিবার ও সহপাঠীদের দাবি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ১০ তলা ভবনের ৭ তলায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন সানজানা। তার বিছানার বালিশের নিচ থেকে পরিবারের সদস্যরা চিঠি খুঁজে পান। সেই চিঠিতেই আত্মহত্যার জন্য বাবাকে দায়ী করেছেন। ওই ভবনে তাদের নিজস্ব ফ্ল্যাট রয়েছে। রেন্ট এ কার ব্যবসায়ী শাহীন ইসলামের বিরুদ্ধে লেখা সুইসাইড নোটে লিখেছেন, ‘আমার মৃত্যুর জন্য আমার বাবা দায়ী। পশুর সঙ্গে থাকা যায়। অমানুষের সঙ্গে না।’

ওই ছাত্রীর মা বলেন, দুটি বিয়ে করেছেন তার স্বামী। এ নিয়ে অশান্তি লেগেই ছিল। একপর্যায়ে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে সে। আত্মহত্যায় বাধ্য করা হয়েছে তাকে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, শাহীন ইসলামের দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের ওপর নির্যাতন করে আসছে বলে শিক্ষার্থীর স্বজনরা জানিয়েছে। সকালে বাবার কাছে সেমিস্টার ফাইনালের টাকা চাইলে তাকে মারধর করেন। কিছুদিন আগে দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি জানাজানি হলে টানাপড়েন শুরু হয়। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফিসহ খরচ দিতেন না।

আরো পড়ুন: সকালে মারধর করেন বাবা, দুপুরে ১০ তলা থেকে লাফ সানজানার

পারিবারিক অশান্তি ও বাবার মারধরের কারণে সানজানার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি সহপাঠীদের। একাধিক সহপাঠী জানায়, তার বাবা প্রায়ই মারধর করতেন তাকে। এ কারণে মাঝে মাঝে ক্লাসে আসতে পারতো না। হাত ও শরীরে মারের দাগ রয়েছে। তার মায়ের সঙ্গে আলাদা বাসায় থাকতেন তিনি। এক মাস ধরে বাবা ওই বাসাতেই ছিলেন। টাকা না দেয়ায় সবশেষ সেমিস্টার পড়তে পারেননি। যদিও শিক্ষার্থী পড়ালেখায় ভালো ছিলেন তিনি।

তারা দাবি করেছেন, গত রমজানে মেরে তিনদিন বিছানায় ফেলে রেখেছিলেন তাকে। তার মাকে বাবা মারতে গেলে প্রতিবাদ করলে তাকেও মারা হতো। মারের কারণে হাত ভেঙে যায়। ঘটনার দিন সেমিস্টার ফি’র টাকা নিয়ে ঝগড়া বাধে।তার বাবা তাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে। হাত বাঁধা থাকলে যেমন দাগ হয় সে রকম দাগ রয়েছে। তাকে প্রায়ই মারধরের বিষয়টি প্রতিবেশীরা পুলিশকে জানিয়েছে। 

দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, তার বাবাকে একমাত্র আসামি করে মামলা হয়েছে। শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যুর পর তার হাতের লেখা চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। এতে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের (যৌন হয়রানি) কথা উল্লেখ রয়েছে। চিরকুটটি তার হাতের লেখা কিনা এবং অভিযোগগুলো সত্য কিনা তা সামনে রেখে তদন্ত করছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে বাবা। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ