যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিবিএ করে দেশে এসে হয়েছেন ‘মাদক বিজ্ঞানী’

ওনাইসী সাঈদ
ওনাইসী সাঈদ  © টিডিসি ফটো

নিজে শুধুমাত্র ধূমপান ও মদে আসক্ত।  কিন্তু বিভিন্ন নতুন ধরণের মাদক নিয়ে গবেষণা করেন ওনাইসী সাঈদ ওরফে রেয়ার সাঈদ (৩৮)। কুশ, হেম্প, মলি, ফেন্টানলের মতো মাদকর চাষ ও বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্যে তাপ নিয়ন্ত্রণ গ্রো-টেন্টও তৈরি করেছিলেন।

গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ‘মাদক বিজ্ঞানী’ সাঈদকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। সোমবার (১ আগস্ট) রাতে রাজধানীর গুলশান এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।

আমেরিকায় পড়াশোনা করার সময় নতুন মাদকে আগ্রহ জন্মে । সেই আগ্রহ থেকে বিভিন্ন অপ্রচলিত ও নতুন মাদক এক্সট্যাসি বিদেশ থেকে কখনো নিজে, কখনো পার্সেলের মাধ্যমে আমদানি করতেন। আর টাকা পাঠাতেন হুন্ডির মাধ্যমে। এরপর বিশ্বস্ত সার্কেলের মাধ্যমে হাতে হাতে তা রাজধানীর বিভিন্ন পার্টিতে সরবরাহ করতেন।

দেশের একটি স্বনামধন্য ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা শেষ করেন সাইদ। তারপর ব্যাচেলর অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) করতে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। পরবর্তীতে মাস্টার অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ) করেন মালয়েশিয়ায়। ২০১৪ সালে দেশে ফিরে প্রথমে বাবার টেক্সটাইল ব্যবসা দেখাশোনা করেন।

থাইল্যান্ডে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশের রাজধানীর এলিফেন্ট রোডের ফয়সাল নামক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। যার মাধ্যমে ওনাইসী সাঈদ নতুন নতুন মাদক সম্পর্কে জানতে পারে। ব্যবসায়িকভাবে নতুন মাদক কারবারে আগ্রহী হয়। থাইল্যান্ড থেকে বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করা ফয়সালেই নতুন মাদক সরবরাহকারী। আর এভাবেই ওনাইসি সাঈদ আন্তর্জাতিক মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত হয়।  

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টার কম সময়ে ঘুরল পৃথিবী, দুশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক জানান, নতুন বিভিন্ন মাদকের প্রতি আগ্রহ থেকেই সাইদ এসব নিয়ে অধ্যায়ন ও গবেষণা শুরু করেন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনুসারে উন্নত দেশে সরবরাহের জন্য তিনি নিজের বাসায় কুশ প্ল্যান্টের ফার্ম তৈরি করেন। টেস্ট অ্যান্ড ট্রায়াল হিসেবে মোহাম্মদপুরে ফ্ল্যাটে তাপ নিয়ন্ত্রণ গ্রো-টেন্ট পদ্ধতিতে চাষ শুরু করেন। প্রথমবার এ প্ল্যান্ট থেকে প্রায় ৪০০ গ্রাম কুশ কুশ উৎপাদন করেন। এসব মাদক তিনি গ্রাম প্রতি ৩ লাখ টাকায় বিক্রি করেন।

তিনি আরও বলেন, সাঈদের অপ্রচলিত মাদক প্রচলন করার উদ্দেশ্য ছিল পুরোটাই বিজনেস পারপাস। ফেন্টানল আফিমের চেয়ে ৪০ থেকে ৫০ গুণ বেশি শক্তিশালী। আর কুশ মারিজুয়ানার চেয়ে ১০ থেকে ১২ গুণ বেশি শক্তিশালী। সাঈদ গবেষণা করে বের করেছেন কোন মাদক কোন পার্টিতে ভালো যায়। সে হিসেবে তিনি তার সার্কেলে মাদক সরবরাহ করতেন।

তার কাছ থেকে একটি ডায়রি উদ্ধার করা হয়েছে। যেখানে তার মাদক নিয়ে গবেষণার বিষয়ে বিস্তারিত লেখা রয়েছে। কোন মাদক কোন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে, কীভাবে কোন পরিমাণে সেবন করতে হবে ওই ডায়রিতে এসব লেখা রয়েছে।

আটক সাঈদের বিরুদ্ধে মাদক আইনসহ বিশেষ ক্ষমতা আইন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

সোমবার রাতের অভিযানে সাইদের গুলশানের বাসা থেকে ১০১ গ্রাম কুশ, ৬ গ্রাম হেম্প, ০.০৫ গ্রাম মলি, ১ গ্রাম ফেন্টানল, ১৮ গ্রাম কোকেন, ১২৩ পিচ এক্সট্যাসি, ২৮ পিচ এডারল ট্যাবলেট জব্দ করে র‌্যাব। পাওয়া যায় ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ও অন্তত ৫০ লাখ টাকার মার্কিন ডলার।


সর্বশেষ সংবাদ