সরকারি স্কুলের ভেতরে পাঠদান চলছে বেসরকারি বিদ্যালয়ের

সাভার অধরচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
সাভার অধরচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়  © ছবি : সংগৃহীত

সরকারি বিদ্যালয়ের ভেতরে পাঠদান চলছে বেসরকারি এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের, অথচ অবগত নয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ঘটনাটি ঘটেছে সাভারে। সাভার অধরচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন ব্যবহার করে প্রাথমিক শাখা নামে বেসরকারি একটি স্কুল পরিচালিত হচ্ছে। প্রাথমিক শাখার ৬১ শিক্ষার্থী ৫ম থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে ভর্তি হতে না পারায় বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই বেসরকারি বিদ্যালয়ে নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। ১৯৭৭ সাল থেকে 'সাভার অধরচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাথমিক শাখা' নামে বিদ্যালয়টি চলে আসছে। তবে এবার সেই প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করা ছাত্র-ছাত্রীরা ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে। লটারির মাধ্যমে ভর্তি হতে গিয়ে ছিটকে পড়ে প্রাথমিক শাখার ৬১ শিক্ষার্থী। পাসকৃত শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে না পারায় বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

আরো পড়ুনঃ লকডাউনে দুই বছর বন্ধ থাকার পর স্কুল খুলেছে উগান্ডায়

এদিকে ভর্তি হতে না পেরে মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) বিদ্যালয়ের ফটকের সামনে অবস্থান নিয়েছে অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীরা। ভর্তির দাবিতে তারা স্কুলটির সামনের থানা রোড অবরোধ কর্মসূচিও পালন করে। এর আগে সোমবারও স্কুলের ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

সাভার অধরচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক শাখার সহকারী শিক্ষক মাহাফুজা হাসনাত বলেন, 'আমাদের প্রাথমিক শাখাটি বেসরকারি স্কুল। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এটা জানে। ১৯৭৭ সাল থেকে এভাবেই চলে আসছে। এর আগে এমন বিপদে পড়িনি। আমরা সকালবেলা ‍উচ্চ বিদ্যালয়ের চার-পাঁচটা ক্লাসরুম ব্যবহার করি। এই শাখাটিও জাতীয়করণের চেষ্টা চলছে। বিপাকে থাকা শিক্ষার্থীদের বিষয়ে আমরা এখন কী করব, ভাবনার মধ্যে নেই।'

এক শিক্ষার্থীর বলেন, 'আমরা জানি এটি সরকারি স্কুল। তাহলে পঞ্চম শ্রেণি পাস ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠবে। কিন্তু লটারি করে দেওয়ার ফলে আমার ছেলে ভর্তি হতে পারছে না। প্রতি মাসে ৭০০ টাকা বেতন দিয়েছে। এটার সুষ্ঠু সমাধান চাই। আমরা অন্য স্কুলের ফরম নিইনি। তাহলে আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ কী হবে?'

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, থানা রোডে অবস্থিত সাভার অধরচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়টি ২০১৮ সালের মে মাসে সরকারীকরণ হয়। ফলে ২০১৯ সাল থেকে ভর্তি প্রক্রিয়া সরকারি নিয়ম মেনে চলছে। ২০২০ থেকে লটারি মাধ্যমে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। যেহেতু প্রাথমিক শাখাটি সরকারি হয়নি ফলে সেখানকার শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভর্তি সুযোগ নেই। তবে এ বিষয়টিতে অবগত নয় অভিভাবকরা।

অধরচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতন পিটার গোমেজ বলেন, 'আমরা চেষ্টা করছি প্রাথমিক শাখাটি সরকারি করার জন্য। সরকারি না হওয়া পযন্ত পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে সরাসরি ভর্তির সুযোগ নেই। তবে শেষ পর্যন্ত যদি প্রাথমিক শাখাটি সরকারীকরণ না হয় তাহলে সেটা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই অবগত আছেন। যারা রাস্তায় নেমেছে তারা মূলত লটারি মানতে পারছে না।'

সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, 'সরকারি নিয়ম মেনে ভর্তি করা হচ্ছে। সরকারি না হয়েও প্রাথমিক শাখাটি অভিভাবকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। মানুষ যাতে প্রতারিত না হয় সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। নতুন শাখা অনুমোদন হতে অন্তত এক বছর সময় লাগে। তখন প্রাথমিক শাখাও লটারির মাধ্যমে ভর্তি হতে হবে। তবে সাভারে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কোটা খালি আছে। সেখানে ষষ্ঠ শ্রেণিতে মেয়েরা ভর্তি হতে পারবে।'

'


সর্বশেষ সংবাদ